ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঘোষণা নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আরডার্নের

এ্যাসল্ট ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিষিদ্ধ

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ২২ মার্চ ২০১৯

এ্যাসল্ট ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিষিদ্ধ

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন এ্যাসল্ট রাইফেল ও মিলিটারি স্টাইল সেমি-অটোমেটিক (এমএসএসএ) অস্ত্র নিষিদ্ধ করেছেন। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। পার্লামেন্টে অনুমোদনের পরই সেটি কার্যকর হবে। ১১এপ্রিল বর্তমান পার্লামেন্ট অধিবেশনের সমাপ্তি হবে। এক সপ্তাহ আগে ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে হামলায় এ্যাসল্ট রাইফেল ও সেমি-অটোমেটিক অস্ত্র ব্যবহার করে শেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী সন্ত্রাসীর হামলায় ৫০জন নিহত হবার পর থেকে বন্দুক আইন পরিবর্তনের বিষয়টি আলোচনায় চলে আসে। বিবিসি, গার্ডিয়ান, এবিসি নিউজ ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট। আরডার্ন বলেন, আমি পুরোপুরি বিশ্বাস করি সব নিউজিল্যান্ডারের মধ্যে একই অভিপ্রায় রয়েছে যারা বন্দুককে বৈধ উদ্দেশে ব্যবহার করে থাকে এবং যারা কখনই বন্দুককে ছুঁয়ে দেখেনি তারাও একে সহজে পাওয়া নিয়ে এই ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার শেষ হোক তা চায়। আজ থেকে তা কার্যকরী হলো। এমএসএসএ বন্দুকে পরিণত করার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রাংশগুলোও নিষিদ্ধ করা হলো। যার মধ্যে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ম্যাগাজিন ও যন্ত্রাংশ যাকে আধা-স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র, সয়ংক্রিয় অথবা সয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রে পরিণত করা যায় সেগুলোও নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। সংক্ষেপে শুক্রবারের সন্ত্রাসী হামলায় ব্যবহৃত প্রত্যেকটি আধা-স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র এই দেশে নিষিদ্ধ করা হলো। এসব অস্ত্র বিক্রি করাও বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটা থেকে কার্যকর করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণাকালে আরডার্ন সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সব ধরনের অস্ত্র বিক্রি এখন থেকে বন্ধ হয়ে গেল। আরডার্ন অবশ্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন, নিষিদ্ধ ঘোষণা করা অস্ত্রের জন্য একটি বাই-ব্যাক স্কিম চালু করার। যাতে ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গতভাবে অস্ত্রের মালিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা যায়। ৫০ লাখ লোকেরও কম মানুষের দেশ হচ্ছে নিউজিল্যান্ড। অনুমান করা হচ্ছে, ১২/১৫ লাখ লোকের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। যার উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই এমএসএসএ অস্ত্রধারী। যদিও তাদের সংখ্যা কত তা জানা যায়নি। তবে ১৩ হাজার পাঁচ শ’ আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকের ই-ক্যাট লাইসেন্স রয়েছে। যেসব অস্ত্রকে সরকার এমএসএসএ হিসেবে ব্যবহার করছে বলে জানিয়েছে। দেশটির পুলিশ বিষয়ক মন্ত্রী স্টুয়ার্ট ন্যাশ বলেছেন, তাদের কোন ধারণাই নেই কতটা এ্যাসল্ট রাইফেল এখন মানুষের কাছে রয়েছে। এটা সমস্যারই একটি অংশ। প্রধানমন্ত্রী বাই-ব্যাক (খরচ) স্কিমের জন্য একটি চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। কারণ, সেখাতে কত বড় ফাঁক রয়েছে সে সম্পর্কে আমাদের কাছে কোন ধারণাই নেই। আমরা এমএসএসএ’র কাছাকাছি একটি সংখ্যার সূচকগত পরিসংখ্যান পাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈধভাবে বন্দুকের ব্যবহারকারী মালিকদের আমি আজকে পুর্নব্যক্ত করতে চাই যে, আজকের ঘোষণাগুলো আপনাদের জন্য নয় এবং আপনাদের জন্য এটি নির্দেশিত নয়। আমাদের কাজগুলো নিউজিল্যান্ডবাসীর পক্ষে নেয়া হয়েছে। আমাদের কাজগুলো এটিই নিশ্চিত করছে যে, এই ধরনের নির্বিচারে গুলির ঘটনা আর কখনই ঘটবে না। নিউজিল্যান্ডের এই পদক্ষেপগুলো বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। ১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুক আইন সংস্কারের সফল অভিযান পরিচালনাকারী রেবেকা পিটার্স বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটার পর সরকারের পক্ষ থেকে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটে যাওয়া প্রতিক্রিয়া হচ্ছে এটি। যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট সিনেটর বার্নি স্যান্ডারস বলেছেন, বন্দুকের সহিংসতা বন্ধ করার জন্য এটিই সবচেয়ে বাস্তব পদক্ষেপ। নিউজিল্যান্ডের এই পদক্ষেপ অনুসরণ করার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান। স্যান্ডারসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন ন্যাশনাল রাইফেল এ্যাসোসিয়েশনের (এনআরএ) মুখপাত্র ডানা লোসে টুইটারে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিউজিল্যান্ড নয়। যদিও তাদের অস্ত্র ও আত্মরক্ষা করার জন্য অস্ত্র বহনের কোন অধিকার নেই। আমাদের রয়েছে। নিউজিল্যান্ডের বিরোধী দল ন্যাশনাল পার্টির নেতা সিমন ব্রিজেস সরকারের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তার দল সরকারের সঙ্গে সঠনমূলকভাবে সব কাজ করে যাবে। আমরা সরকারের সঙ্গে একমত যে জনগণের এমএসএসএ অস্ত্র রাখার কোন প্রয়োজন নেই। ন্যাশনাল পার্টি সবসময় এ্যাসল্ট রাইফেল নিষিদ্ধ করা নিয়ে তাদের সমর্থন জানাবে। দেশটির অপর রাজনৈতিক দল গ্রীন পার্টির সহ-নেতা ও পুলিশ এ্যাসোসিয়েশনও সরকারের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে।
×