ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গল থেকে নবজাতক উদ্ধার করল দুই কলেজছাত্র

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ২২ মার্চ ২০১৯

জঙ্গল থেকে নবজাতক উদ্ধার করল দুই কলেজছাত্র

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ দুই কলেজছাত্রের আন্তরিকতায় বগুড়ায় ঝোপের ভেতর পড়ে থাকা এক নবজাতক বুধবার রাতে উদ্ধার হয়েছে। আঁধারের কান্না থেকে সে এখন হাসপাতালের বেডে দিনের আলোয় আলোকিত হয়ে হাসি ছড়িয়ে দিচ্ছে। অথচ রাতের অন্ধকারেই নবজাতকটি হয়ত হারিয়ে যেত চিরতরে। অদ্ভুত এই জগতের কোন কিছুই হয়ত সে কোনদিনই অনুভবের সুযোগ পেত না। পুলিশের ৯৯৯ নম্বরের জরুরী সেবা সহায়তায় নবজাতকটি ঝোপ থেকে দ্রুত উদ্ধারের পর স্থান হয় হাসপাতালের নবজাতক বিভাগে। বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নবজাতকটি (কন্যাশিশু) এখন সুস্থ। তবে জন্মগত কারণে তার ঠোঁট বা তালুকাটা (ক্লিপ লিপ এ্যান্ড ক্লিপ প্লেট)। বগুড়া সরকারী আযিযুল হক কলেজের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ ও শামিম রেজা থাকেন কলেজের পাশে জামিলনগর এবং পুরান বগুড়া এলাকায়। শামিম থাকেন একটি মেসে। দু’জনই লেখাপড়ার সঙ্গে প্রাইভেট পড়ান। বুধবার রাত ৮ টার দিকে আড্ডা ও হাঁটার জন্য কলেজ ক্যাম্পাসে আসেন। সেখান থেকে ফুটপাথ ধরে হাঁটা শেষ করে ফিরতেই রাত সাড়ে ৯ টার দিকে কলেজের পাশে রেললাইনের পরেই ঝোপের মাঝ থেকে হঠাৎ শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পান। মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে কান্নার উৎস খুঁজতে এগিয়ে দেখেন, একটি নবজাতক কাঁপুনি দিয়ে কাঁদছে। ঝোপের ভেতর সে পড়েছিল। গায়ে হাত দিয়ে দেখেন শরীর একেবারে শীতল। সঙ্গে সঙ্গে দু’বন্ধু নিজেদের গায়ের গেঞ্জি খুলে নবজাতকের শরীর মুড়িয়ে দিয়ে পুলিশের জরুরী সহায়তা সেবা ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করেন। এতে বগুড়া স্টেডিয়াম ফাঁড়ি পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে নবজাতকটি উদ্ধার করেন। পুলিশ ও দুই শিক্ষার্থী নিয়ে যান বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। রাত সাড়ে ১০ টায় তাকে ভর্তি করান হয় হাসপাতালের নবজাতক (নিওনেটাল) ওয়ার্ডের ২৬ নম্বর বেডে। তার অবস্থা তখন শঙ্কাপূর্ণ। চিকিৎসক ও নার্সদের প্রচেষ্টায় নবজাতকটির অবস্থা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকে। দুই কলেজছাত্র হাসপাতালে থাকেন রাত ২ টা পর্যন্ত। স্টেডিয়াম ফাঁড়ি পুলিশ এক মহিলাকে রাতে শিশুটির পাশে থাকার জন্য ব্যবস্থা করেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুলিশ তাদের ফাঁড়ির রাঁধুনী পারভীনকে পাঠায় শিশুটির দেখাশোনা করার জন্য। তার কোলেই শিশুটি কখনও হাত-পা ছুঁড়ে কাদছে, কখনও বা হাসিররেখায় ভরে উঠছে মুখ। তার ওজন দুই দশমিক ছয় কেজি। হাসপাতালের স্টাফরাও শিশুটির নাম- ঠিকানাবিহীন শিশুটির যত্ন নিচ্ছেন। দুই কলেজছাত্র গভীর রাত পর্যন্ত নবজাতকটির পাশে থাকার পর বৃহস্পতিবার সকালে আবার কাপড় কিনে ছুটে যান হাসপাতালে। নবজাতকের প্রতি মমত্ববোধের টানে যেন তারা জড়িয়ে পড়েছেন। পুলিশের পক্ষ থেকেও নবজাতকের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী কিনে দেয়া হয়। মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে শিশুটি মায়াবি এ পৃথিবীর আলোবাতাস গ্রহণ করতে পারলেও ভবিষ্যতের ভার কে নেবে সে প্রশ্ন এখন সামনে। মেডিক্যাল কলেজের নিওনেটাল ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ নাসরিন নাহার স্বপ্না জানান, শারীরিকভাবে নবজাতকটির অবস্থা এখন ভাল। তার জন্মগত ঠোঁট বা তালুকাটা ত্রুটি অপারেশনের মাধ্যমে ভাল করা সম্ভব।
×