ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষের যেন ক্ষতি না হয় ॥ উন্নয়নের কাজে

প্রকাশিত: ১১:০৭, ২২ মার্চ ২০১৯

মানুষের যেন ক্ষতি না হয় ॥ উন্নয়নের কাজে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন কর্মকা-ের ফলে মানুষের জীবন ও জীবিকার যেন ক্ষতি না হয় সেদিকে নজর দিতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, উন্নয়ন মানুষের জন্য, মানুষের ক্ষতি করে যেন এই উন্নয়ন না হয়। অনেক সময় দেখা যায়, প্রকল্প করতে গিয়ে মানুষের জমি অধিগ্রহণ করতে হয়। তারা যেন সময়মতো জমির যথাযথ মূল্য পায়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (এমআইডিআই) প্রকল্পের উপস্থাপনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশ দেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মোঃ নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী এমআইডিআই প্রকল্পের মূল নক্সা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন। অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবগণ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ও দফতরের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট জাপানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মোঃ আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী নিয়ে বড় অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। জাপানের সহায়তায় মাতারবাড়িতে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র এবং গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ এই পরিকল্পনার অংশ। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলও হচ্ছে সেখানে। বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা অবশ্যই উন্নয়নের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করব, কিন্তু প্রকল্প নেয়ার সময় এটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে, জনগণের জন্যই তা করা হচ্ছে। জনগণের জীবন-মানের উন্নয়ন ঘটানোই তার সরকারের লক্ষ্য, যাতে তারা সবাই একটি সুন্দর জীবন পেতে পারে। তিনি বলেন, এটা দেখা গেছে (বিভিন্ন সময়ই পরিলক্ষিত হয়েছে) যাদের জমি নিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, তারা কিছুই পাচ্ছে না। কাজেই আমাদের বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে যে, যাতে তারা যথাযথ ক্ষতিপূরণ পেতে পারে। মহেশখালী-মাতারবাড়িতে স্থাপিত প্রকল্পের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম হলে কেবল ওই অঞ্চলেই নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, সমুদ্র তীরবর্তী এই জেলা কক্সবাজার এক সময় খুবই অবহেলিত ছিল এবং এর জনগণের জীবনযাত্রার মানও ছিল অমানবিক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখ- সমুদ্রতটের অবস্থান এখানেই রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সময়ে কক্সবাজারে কিছুই ছিল না। পুরো কক্সবাজারে জনগণ কেবলমাত্র লবণ এবং পান চাষের ওপর নির্ভরশীল ছিল। বর্তমানে তার সরকার কক্সবাজারকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। পাশাপাশি স্থানীয় কক্সবাজারের জনগণের মতামত নিয়েই উন্নয়ন কাজ চলছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কক্সবাজারের বিরাট সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই অঞ্চলকে পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জেলার মাতারবাড়িসহ চর এলাকাতে শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র, কয়লার জেটি এবং একটি এলএনজি টার্মিনাল মাতারবাড়িতে গড়ে তোলা হচ্ছে। পাশাপাশি একটি বহুমুখী সমুদ্র বন্দর, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, সড়ক, রেল এবং এ সংক্রান্ত আরও বিভিন্ন প্রকল্পসহ মোট ২৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকার প্রধান এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, জাপান, চীন, ভারত এবং কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যেই মাতারবাড়িতে তাদের বিনিয়োগের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়িত হলে তা কেবল মাতারবাড়ি অঞ্চলের উন্নয়নই নয়, সমদ্র দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও বিরাট ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেন মহাসড়কের কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। সেইসঙ্গে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলযোগাযোগ স্থাপনের কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে, যেখানে দ্রুতগতির রেল যোগাযোগও স্থাপিত হবে। এছাড়া কক্সবাজার বিমানবন্দরকে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলার কাজও এগিয়ে চলেছে। রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ১১ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় প্রদান কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের জন্য একটি বিরাট সমস্যা। আমরা জোরপূর্বক বস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি এবং এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতাও কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা এবং স্বল্প সময়ে একটি সংবিধান দিয়ে গেছেন এবং তিনি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন। জাতির পিতা মানুষের অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য অর্জনের মধ্য দিয়ে আমাদের মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, তার স্বপ্ন পূরণ হতে পারেনি কারণ, তাকে এবং তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট কালরাতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তার অসমাপ্ত কাজকে সম্পন্ন করতেই আমরা এখন দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মিরেরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্র তীরবর্তী অর্থনৈতিক করিডোর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পাঞ্চল (ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চল, মিরেরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, সীতাকু-ু অর্থনৈতিক অঞ্চল), মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (এমআইডিআই) প্রকল্প এবং সাবরং ইকো ট্যুরিজম পার্ক এই অর্থনৈতিক করিডোরের অন্তর্ভুক্ত। কর্মকর্তারা বলেন, নির্মাণাধীন ৩৭টি প্রকল্পের মধ্যে ১৫টিই জাপান সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
×