ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

পাহাড়ী জীবনের সৌন্দর্যে রঙিন সমতল- শিল্পকলায় মেলা

প্রকাশিত: ১১:২৩, ২২ মার্চ ২০১৯

পাহাড়ী জীবনের সৌন্দর্যে রঙিন সমতল- শিল্পকলায় মেলা

মনোয়ার হোসেন ॥ চারপাশে পাহাড়ী জীবনের হাতছানি। নয়ন জুড়ানো পর্বতবাসী মানুষের জীবনাচারের নানা প্রতিচ্ছবি। পার্বত্য অঞ্চলের সংস্কৃতির সৌন্দর্যে রঙিন হয়ে ধরা দেয় এই শহর। শ্রমে-ঘামে ফলানো পাহাড়ী ফলমূল থেকে রকমারি খাবার দেখে আপ্লুত হয় নাগরিক মন। শুধু কি খাবার? দৃষ্টিতে সুখ ছড়ায় পোশাক থেকে গৃহস্থালি নানা পণ্য কিংবা বাহারি গহনা। প্রশস্ত প্রান্তরজুড়ে ছড়িয়ে আছে তিন পার্বত্য জেলার হস্তশিল্প, কুটিরশিল্প ও কৃষিশিল্পের সমাহার। নানা রকমের পাহাড়ী শস্য থেকে পোশাক বা বিবিধ গৃহসজ্জা সামগ্রীতে পরিপূর্ণ প্রতিটি স্টল। বিকেল গড়ানো সন্ধ্যায় দেখা মিলছে আদিবাসীদের উপস্থাপিত বৈচিত্র্যময় নৃত্য-গীতের পরিবেশনা। সব মিলিয়ে যেন সমতলে এসে হাজির হয়েছে পর্বতকেন্দ্রিক যাপিত জীবনের চিত্র। আর সমতলের মানুষও সানন্দে নিমজ্জিত হচ্ছে ভিন্ন সংস্কৃতির সেই জীবনের রূপে-রঙে। এভাবেই উৎসবের ছবি এঁকে শুরু হলো পার্বত্য মেলা। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমি মাঠে চার দিনব্যাপী এই মেলার সূচনা হয়। পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবন-সংস্কৃতি, পোশাক-পরিচ্ছদ, ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সমতলের মানুষের পরিচয় ঘটানো এ মেলার আয়োজক পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়। যন্ত্রগঙ্গীতের সুর মূর্ছনার সঙ্গে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ মেসবাহুল ইসলাম। মেলার সৌন্দর্যে ভাললাগার অনুূভব প্রকাশ করে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এই বর্ণিল আয়োজনে মুগ্ধ হচ্ছি। আর এমন রূপময় মেলায় শুধু আমাকেই নয়, মুগ্ধ করবে সবাইকে। ঢাকার সঙ্গে পার্বত্য অঞ্চলের সেতুবন্ধ তৈরি হবে এ ধরনের মেলার মাধ্যমে। বাড়বে পর্বতবাসীর সঙ্গে সমতলবাসীর সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি। আমাদের জাতিরাষ্ট্রে চাকমা, মারমা, হিন্দু, খ্রীস্টান কোন বিশেষ পরিচয় নয়। তাই ধর্মীয় পরিচয় নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এই বাংলাদেশের মূল ভিত্তি হচ্ছে মানুষ ও মানবতা। সকলের সম্প্রীতির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গড়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, বনভূমিতে আচ্ছাদিত পার্বত্য এলাকায় রয়েছে চার শতাংশ ফসলি ভূমি। এটাকে কাজে লাগাতে পারলে আরও সম্পদশালী ও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে এই অঞ্চল। তবে যারা সেখানে সন্ত্রাসের মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চায় আমরা পাহাড়ীরা তাদের ঘৃণা করি, তাদের বিচার চাই। সরকারের সহায়তায় সবাই মিলে পার্বত্য এলাকার আরও উন্নয়ন ঘটাতে হবে। শহরবাসীর জন্য রূপ-লাবণ্যে দারুণ বৈভবময় পার্বত্য মেলা। প্রতিদিনের পরিচিত দৃশ্যকল্পের বাইরে অচেনা পরিবেশ দর্শনার্থীর মননে ছড়ায় সুন্দরের অনুভব। পাহাড়ের তরতাজা ফলফলাদি, খাবার, পোশাক অথবা গহনার দোকানগুলো সহজেই টানছে ক্রেতাকে। বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা মেলে পাহাড়ে জন্মানো লাল রঙের অগ্নিশ্বর কলা থেকে পাহাড়ী আনারস, তরমুজ, ড্রাগন ফল, তেঁতুল, কাঁঠাল। সাজিয়ে রাখা হয়েছে পাহাড়ে উৎপাদিত প্রাথমিক থেকে চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রস্তুতকৃত কফির প্রতিটি স্তর। আছে সুস্বাদু লাল, কালো ও সাদা বিন্নি চাল। রয়েছে পাহাড়ী কাঁচা হলুদ, আদা, আখ ও আখের তৈরি গুড়, ডায়াবেটিস প্রতিরোধক বিশেষ চা। সবজির মধ্যে আছে পাহাড়ী পাকা হলুদ বেগুন, পাহাড়ী আলু, ফরাস শিম, কুমড়ো, সজনে ডাঁটা, কলার মোচা, মুলাসহ রকমারি সবজি। কলাপাতায় মোড়ানো বিন্নি ধানের তৈরি ‘বিনি হোগা’ নামের বিশেষ ধরনের পিঠা, ব্যাম্বো চিকেন কিংবা কাঁকড়া ফ্রাইসহ আছে রকমারি খাবার। পোশাকের মধ্যে মিলবে লুঙ্গি, গামছা থেকে শুরু করে বিছানা ও গায়ের চাদর, ফতুয়া ও বাহারি খামি। অলঙ্কারের মধ্যে রয়েছে হাঁসুলি, ঝুমকা, চোকার, নানা ধরনের মালা, ব্রেসলেট ও বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ। আছে পানি রাখার জন্য জগের পরিবর্তে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি লাউয়ের খোল। পাহাড়ী ঝুড়িগুলোও বেশ নজরকাড়া। বাঁশ ও বেতের তৈরি সুদৃশ্য চেয়ার থেকে চোখে পড়ে নারকেলের ওপর প্রস্তুতকৃত নান্দনিক গড়নের ফুলদানি।। আগামী ২৪ মার্চ পর্যন্ত চলবে এই পার্বত্য মেলা। খোলা থাকবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত। আর প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত উপভোগ করা করা যাবে তিন পার্বত্য জেলার শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা । এ বছরের পার্বত্য মেলা আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি), বিশ^ খাদ্য সংস্থা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, আরণ্যক, হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল, কারিতাস, পদক্ষেপ ও বাংলাদেশ এ্যাডভেঞ্চার ক্লাব বিশ্ব পুতুলনাট্য দিবসের আয়োজন ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে শুরু হয়েছে ‘জাতীয় পুতুলনাট্য উৎসব ২০১৯’। পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবের প্রদর্শনী হচ্ছে একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল ও স্টুডিও থিয়েটার হলে। সারাদেশে থেকে ২৪টি দল এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেছে। বৃহস্পতিবার বিশ্ব পুতুলনাট্য দিবস উপলক্ষে সন্ধ্যায় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে আলোচনা, সম্মাননা প্রদান ও পুতুলনাট্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা পর্বে একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, নাট্যজন এস এম মোহসীন এবং জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. রশীদ হারুন। পুতুলনাট্যশিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোঃ ছিদ্দিকুর রহমানকে সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। সম্মাননাস্বরূপ তার স্ত্রীর হাতে নগদ ত্রিশ হাজার টাকা, মেডেল ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। আলোচনা ও সম্মাননা প্রদান শেষে পুতুলনাট্য পরিবেশন করে ঢাকার মাল্টিমিডিয়া পাপেট সেন্টার এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের পাপেট ল্যাব।
×