ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পোশাকে লাল-সবুজের ছোঁয়া

প্রকাশিত: ১২:৩১, ২২ মার্চ ২০১৯

পোশাকে লাল-সবুজের ছোঁয়া

দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা কারও দানে পাওয়া নয় সত্যিকার অর্থেই আমাদের এ দেশ দাম দিয়ে কেনা। এমনি এমনি পাওয়া নয়। লাখ লাখ প্রাণের বিনিময়ে পেয়েছি সুন্দর এ দেশটি। অপরূপ সুন্দর এ দেশ। মনে হয় শিল্পীর তুলিতে আঁকা কোন ছবি। এ ছবি দেখে যেন চোখের পলক পড়ে না। বার বার দেখার সাধ জাগে। বহু কবি-সাহিত্যিক এ দেশকে ভালবেসে মুগ্ধ হয়ে লিখেছেন গান, কবিতা ও উপন্যাস। এদেশের মাটি সোনার ফসল ফলয়। ষড়ঋতু খ-িত এ দেশ আকর্ষিত করেছে বহু দেশের মানুষকে। মানচিত্রের বুকে ছোট্ট এ দেশ যেন গর্ব করার মতো একটি দেশ। বুক চিরে বয়ে যাওয়া নদী, পাখির কলতান, সোনার ফসল সব কিছু মিলিয়েই যেন পরিপূর্ণ একটি দেশ। লাল-সবুজের পতাকা পতপত করে উড়তে থাকে। জানান দেয় একটি পরিপূর্ণ দেশের। লাল-সবুজের পতাকার দিকে তাকালেই এক ধরনের দৃঢ়প্রত্যয় কাজ করে। মনে হয় অনেক অব্যক্ত কথা ধারণ করে রেখেছে পতাকাটি। পরিচয় করিয়ে দেয় স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের। মনে করিয়ে দেয় আমরা মুক্ত স্বাধীন জাতি, যে জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। অধিকার অর্জনে সচেষ্ট এক জাতি, যে জাতি স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে জানে। দীর্ঘ নয় মাসের সংগ্রামের ফসল আমাদের স্বাধীনতা। আর এই নয় মাসের বিনিময়ে বিশ্ব চিনল এক নতুন দেশ, নতুন জাতিকে। নতুন করে জানাল কাদামাটির নরম এ মানুষগুলো নিজেদের অধিকার আদায়ে বাঘের হুঙ্কার দিয়ে কাঁপিয়ে দিতে পারে বিশ্ব। যে কোন সম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে। স্বাধীনতার জন্য যখন মন ছুটে যায় তখন কোন মারণাস্ত্রই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। পুরো বিশ্ব সে দৃশ্য অবলোকন করেছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে। ২৫ মার্চের পাক হানাদারের অতর্কিত হামলার যথোপযুক্ত জবাব দেয় বাঙালী। ২৬ মার্চ ঘোষণা করা হয় স্বাধীনতা দিবস। আর তাই স্বাধীনতা দিবস আজও তরুণ প্রজন্মের কাছে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। প্রেরণা যোগায় নিষ্ঠার পথে নির্ভীক যোদ্ধা হওয়ার। শুধু একটি দিবস হিসেবে নয়, এর বর্ণোচ্ছটায় বদলে যায় জীবনের গতিপথ, সাহস যোগায় নতুন শপথ নেয়ার। আর এ কারণেই স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য এত বেশি। বর্তমান সময়েও এর প্রভাব প্রতিদিনের পথ চলার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। প্রতি মুহূর্ত মায়াবী এক আবহে জড়িয়ে রাখে। এরই প্রভাব পড়েছে দেশীয় ফ্যাশন ট্রেন্ডে। মানুষ এখন শুধু প্রয়োজনীয় পোশাক-পরিচ্ছেদ কেনাকাটায় সীমাবদ্ধ নেই। ফ্যাশন সচেতন হিসেবে নিজেদের মূল্যবোধ মানিয়ে তুলেছে বহুগুণে। উৎসব-পার্বণ ছাড়াও দিবসভিত্তিক ফ্যাশনগুলো আকর্ষণ করে ক্রেতাদের। যার ফলে ফ্যাশন হাউসগুলো প্রতিনিয়ত ব্যস্ত থাকে দিবসভিত্তিক পোশাক তৈরিতে। সাড়াও মিলছে ভালই। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো লাল-সবুজের আবহে তৈরি করছে বিভিন্ন ধরনের পোশাক। যেমনÑ পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শর্ট পাঞ্জাবি, শর্ট কামিজ, শাড়ি, টি-শার্ট ইত্যাদি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসগুলো ক্রেতাদের সামনে তুলে এনেছে স্বাধীনতা দিবসের পোশাক। এ বিষয়ে তরুণ ডিজাইনার সিমিন এশা বলেন, কয়েক বছর আগেও ক্রেতাদের মধ্যে দিবসভিত্তিক পোশাক কেনার প্রতি তেমন কোন আগ্রহ ছিল না। অবশ্য তখন হাতের নাগালে দিবসভিত্তিক পোশাকের এত সমারোহ ছিল না। তবে বর্তমান সময় পরিবেশ পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন এসেছে। যুগের চাহিদার সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে ফ্যাশন ট্রেন্ড। বর্তমান সময়ে দিবসভিত্তিক পোশাক দারুণ জনপ্রিয়। আর এ চাহিদার কথা মাথায় রেখে আমরা দিবসভিত্তিক পোশাক ডিজাইন করে থাকি। সে অনুপাতে এবারের স্বাধীনতা দিবসের পোশাক একটু গর্জিয়াসলি সাজানো হয়েছে। কাপড় হিসেবে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে সুতি এবং তাঁত। লাল-সবুজ রঙকে বেস করে ডিজাইন করা হয়েছে পোশাকগুলোর। সব বয়সী ক্রেতাদের জন্য পোশাকের সমাহার ঘটানো হয়েছে। স্বাধীনতার মহিমাকে পোশাকে অটুট রাখতে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। পুরো মার্চজুড়েই স্বাধীনতা দিবসের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন দেশীয় ফ্যাশন আউটলেটে। সব বয়সীদের পোশাক পাওয়া গেলেও মূলত তরুণ প্রজন্মের কথা মাথায় রেখেই প্রস্তুত করা হয়েছে পোশাকগুলো। তবে মধ্য বয়সী বা তদুর্ধ বয়সীদের জন্য রয়েছে পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শাড়ি এবং সালোয়ার-কামিজ। বাচ্চাদের অপশন রয়েছেই। তাদের জন্য টি-শার্ট, টপস এবং ফতুয়া বেশ মানানসই। আর পুরো অংশজুড়ে রয়েছে তরুণ প্রজন্মের পোশাক। পোশাকগুলোর মধ্যে শর্ট পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, ফতুঞ্জি, শর্ট কামিজ, টপস, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ অন্যতম। দামও খুব বেশি নয়। ফতুয়ার মূল্য ৪০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা, সালোয়ার কামিজ ৭০০ টাকা থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। শাড়ি ৮০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা। টি-শার্ট ২০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা। শর্ট পাঞ্জাবি ৫৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা, শর্ট কামিজ ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, ফতুঞ্জি ৫৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা। স্বাধীনতা দিবসকে উপলক্ষ করে ফ্যাশন হাউসগুলো সেজেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। উদ্বুদ্ধ করছে তরুণ প্রজন্মকে, বাড়িয়ে তুলছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। শুধু পোশাকে ধারণ করার জন্য নয়, মনের মধ্যে ধারণ করার মতো বিষয় এটি, পোশাকে শুধু এর বহির্প্রকাশ। ডিজাইনগুলোও করা হয় সেদিকটাকে ঠিক রেখে। এবারের পোশাকগুলোতে লাল-সবুজের সঙ্গে সাদা ও কালোর সংমিশ্রণে ব্লক প্রিন্ট করা হয়েছে। রয়েছে এম্বয়ডারি এবং কারচুপির কাজ। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের কবিতা ও গানের পঙ্তি থাকে ডিজাইন হিসেবে, যা ফ্যাশন ট্রেন্ডে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যেতেই স্বাধীনতা দিবসের পোশাক তরুণ প্রজন্মের প্রথম পছন্দ। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, কখনই কোন বিষয় যেন বাড়াবাড়ির পর্যায়ে না যায়। স্বাধীনতা দিবসের কোন অমর্যাদা যেন না হয়। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতা রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার। স্বাধীনতা দিবসের মহিমা সমুন্নত রাখতেই ফ্যাশন জগতের দিবসভিত্তিক পোশাক বা স্বাধীনতা দিবসের পোশাক সত্যিই প্রসংশনীয় উদ্যোগ। পোশাক : কেক্রাফট
×