ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নেতৃত্বে নারীর ক্ষমতায়ন

প্রকাশিত: ১২:৩৫, ২২ মার্চ ২০১৯

নেতৃত্বে নারীর ক্ষমতায়ন

উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সর্ব মানুষের অংশীদারিত্ব যেমন দৃশ্যমান, একইভাবে অর্ধাংশ নারী জাতি নিজের কর্মক্ষেত্রকে শাণিত করে ক্ষুদ্রতর পরিবার থেকে বৃহত্তর সামাজিক আঙ্গিনায় তাদের সময়োপযোগী ভূমিকা পালন করা যাচ্ছে। বিশেষ করে কর্পোরেট পেশায় নারীদের অনন্য উচ্চতায় ক্ষমতায়ন হওয়া আগামী নেতৃত্বের এক শুভ সঙ্কেত। শুধু তাই নয় সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ বহুমুখী পেশায় অর্ধাংশ এই গোষ্ঠীর নিরন্তর অভিগমনতা সমৃদ্ধির নিয়ামক। জনসংখ্যার অর্ধেক এই নারীকে বিভিন্ন কর্মদ্যোতনায় উজ্জীবিত করতে না পারলে দেশের দৃশ্যমান উন্নয়ন কখনও তার গন্তব্যে পৌঁছবে না। সুতরাং নারীরা আজ নিজের অবস্থান থেকে সামাজিকই শুধু নয় আন্তর্জাতিক আঙ্গিনায়ও তাদের আসন মজবুত করতে উদ্দীপ্ত চেতনায় এগিয়ে যাচ্ছে। নারী হিসেবে কোথাও পিছিয়ে পড়তে তারা আর সময় ক্ষেপণ করতে নারাজ। যদিও তারা সংখ্যায় এখনও কম। তার পরেও কিয়দংশ নারীদের অসামান্য কর্ম-যোগ নিজেদের যোগ্য প্রমাণ তো করছেই তার চেয়ে বেশি সামাজিকভাবে তাদের সম্প্রসারণ এবং গ্রহণযোগ্যতা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। ক্ষমতায়নের নারীদের এই বিস্ময়কর অগ্রগামিতায় দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল এবং সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থান আন্তর্জাতিক মহলে সমাদৃতও হচ্ছে। শুধু তাই নয় বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার বিশ্ব জরিপেও বাংলাদেশে নারী-পুরুষ বৈষম্যের ফারাকও ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন, উদ্যোক্তার কাতারে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্বের অনুষ্ঠান, সভা আর সম্মাননা প্রদানের বর্ণিল আয়োজনে সকল নারীকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ সবার সামনে এসেছে। কি অদম্য মনোবল আর উদ্দীপ্ত পথযাত্রায় সমস্ত বাধা বিঘ্নকে অতিক্রম করে ক্ষমতাবান নারী-নেতৃত্ব বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক পেশায় নিজেদের যোগ্য প্রমাণ করে যাচ্ছে। উইমেন ইন লিডারশিপ ((ডওখ) এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা সফল উদ্যোক্তা তৈরিতে উৎসাহ-উদ্দীপনা প্রদানের মাধ্যমে সম্মাননা দেয়ারও আয়োজন করে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসে। নারীদের অনুপ্রাণিত করার এই সংগঠনটি উদ্যোক্তার শীর্ষ কাতারে নিজের স্থান মজবুত করা বিশিষ্ট নারী নেতৃত্ব নাজিয়া আন্দালিব প্রেমার বলিষ্ঠ কর্মোদ্যোতনায় গত ৫ বছর ধরে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে। তিনি ‘উইমেন ইন লিডারশিপ’-এর মহৎ ও বৃহৎ কর্মযজ্ঞের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নারীদের চেতনাও কর্মযোগ বহুমাত্রিক। সেটাকে যথাযথ মর্যাদায় অনুসরণ করে যার যেখানে ক্ষমতা সেখানেই তাকে সফল আর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। কাজের প্রতি আগ্রহই শুধু নয় নিবেদন আর ক্ষমতার ওপরও বিশেষ জোর দেয়া বাঞ্ছনীয়। এটা করতে ব্যর্থ হলে কেউই স্বচ্ছ আর নির্বিঘ্নভাবে এগিয়ে যেতে পারবে না। যেমন একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু অতি বাল্যকাল থেকে আঁকতে পছন্দ করে এবং সেখানেই সে নিজেকে সমপর্ণ করে। কিন্তু তার গণিত কিংবা কোন প্রয়োজনীয় বিষয়ের প্রতি তেমন আগ্রহ দেখা যায় না। তবে প্রয়োজন শব্দটি একেবারে আপেক্ষিক। নান্দনিক শিল্প চর্চাও যে কোন মানুষের মানবিক এবং মানসিক চেতনাকে উদ্দীপ্ত করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। শিল্প সত্তায় সমৃদ্ধ গুণীজনরা যুগে যুগে সময়ের সমুদ্রে অবগাহন করে সমকালের ললিত কলাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌঁছে দিয়েছেন। সেখানে তারা নিশ্চয়ই প্রতিষ্ঠিত, সফলকাম শিল্পিত রূপ সৌর্যের বিশিষ্টজন। বিচিত্রমুখী প্রতিভার অধিকারী নারীদের যথার্থ গুণ বিচারে তাদের সেভাবেই তৈরি হতে দিতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে প্রেমা অভিমত ব্যক্ত করেন- নারীরা তাদের সকল কাজে স্বভাবতই বৈচিত্র্যকে লালন করে। কর্মক্ষেত্রে সাফল্য লাভের ক্ষেত্রে তাদের নির্দিষ্ট গুণকে কৌশলের সঙ্গে কাজে লাগাতে হবে। বর্তমানে নারীদের নির্ভীক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে উদ্যমী হতে হবে। তাদের ইচ্ছা এবং ক্ষমতা বাস্তবায়নে সকল বাধা বিঘ্নকে পাশ কাটানো বিশেষ জরুরী। স্বাধীনভাবে বাঁচার জন্য মানসিক মনোবলকে সব সময় উদ্দীপ্ত চেতনায় জাগিয়ে তোলা আবশ্যক। নারীর যোগ্যতা আর ক্ষমতায়নের আলোকে ১২টি ক্যাটাগরিতে তাদের উল্লেখযোগ্য সফলতার জন্য বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। সেখানে তথ্যপ্রযুক্তি থেকে শুরু করে, ফুটবল ক্লাবের কোচ এমনকি শিল্প এবং সংস্কৃতির বিষয় বিবেচনায় যোগ্যতম নারীদের পুরস্কার দেয়া হয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আয়োজিত ও হোটেল লা মেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী এমন কার্যক্রমের মূল বার্তা ছিল- ‘নারীর কর্তৃত্ব ও দৃশ্যমানতা অর্জনে সৃজনশীল নেতৃত্ব ও বৈচিত্র্যতা।’
×