ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বই ॥ ভারতবর্ষের স্বাধীনতা, ঘটনাবহুল ইতিহাস

প্রকাশিত: ১২:৪২, ২২ মার্চ ২০১৯

বই ॥ ভারতবর্ষের স্বাধীনতা, ঘটনাবহুল ইতিহাস

সাহিত্য হচ্ছে হৃদয়ের নির্যাস আর ইতিহাস নিরেট সত্য উন্মোচন। সাহিত্যে লেখকের মনোভাব প্রকাশের সুযোগ থাকে, সুযোগ থাকে কাহিনী রচনা এবং বিভিন্ন চরিত্র বিন্যাস ও প্রয়োগের কিন্তু ইতিহাস নির্মেদ ও নির্মোহ, এখানে কাল্পনিকতার কোন সুযোগ নেই, নেই চরিত্র নির্মাণ এবং ইচ্ছেমতো তা বিন্যাসের। ইতিহাস রচনা তাই সত্যিই একটি দুরূহ এবং কষ্টসাধ্য কাজ। এ ক্ষেত্রে রচয়িতাকে এগোতে হয় সত্যের পথ ধরে। ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোকে গভীর অভিনিবেশসহকারে নিরীক্ষা এবং যথাযথভাবে তা লিপিবদ্ধ করাই ইতিহাসবিদের কর্ম। একজন তুখোড় রাজনীতিবিদ হয়েও শেখ ফজলুল করিম সেলিম সে কাজটিই করেছেন নিবিড় নিপুণতায়, অত্যন্ত যতœসহকারে। সেলিমের ‘ভারতবর্ষের স্বাধীনতা, ঘটনাবহুল ইতিহাস’ পড়ে মনে হয়েছে এটি কোন রাজনীতিবিদ নন একজন ইতিহাসবিদেরই রচনা। গ্রন্থটিতে তিনি, ভারতবর্ষের উন্মেষ থেকে শুরু করে ৪৭ এর দেশ বিভাগ পর্যন্ত বিভিন্ন অধ্যায় তুলে এনেছেন নির্মোহভাবে। একজন রাজনীতিবিদকে সঙ্গত কারণেই ইতিহাস সচেতন হতে হয় । ভবিষ্যত নির্ণয়ের যে কঠিন দায়িত্ব তার উপর অর্পিত অতীতের আলোকে তা তাকে পালন করতে হয় সুচারুভাবে। আর সে কারণেই তাকে ডুবে যেতে হয় ইতিহাসে। আমাদের দুর্ভাগ্য, এ দেশের অধিকাংশ রাজনীতিবিদই ইতিহাস সচেতন নন। তাই অতীতের সোনালি অধ্যায় যেমন তাদের অধরা তেমনই তার ত্রুটি বিচ্যুতি থেকেও তারা থেকে যান অন্ধকারে আর তাই পদে পদে ভুলের মাশুল গুনতে হয় জাতিকে। এদের মধ্যে যে দু’একজন ব্যতিক্রম তাদেরই একজন শেখ ফজলুল করিম সেলিম। বরেণ্য এ রাজনীতিবিদ দীর্ঘ এক যুগের সাধনায় আমাদের সামনে তুলে এনেছেন এক অলিখিত অধ্যায়। ভারতবর্ষের জানা-অজানার সে অধ্যায়টি অত্যন্ত রোমাঞ্চকর। আত্মত্যাগ আর সংগ্রামের শৌর্যে ভরা সে ইতিহাস অত্যন্ত সুনিপুণভাবে তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন এই গ্রন্থে। প্রাচীনতম দ্রাবিড় থেকে শুরু করে সর্বশেষ ইংরেজ শাসন পর্যন্ত ইতিহাসের সকল চিত্রটিই সন্নিবেশিত হয়েছে এ গ্রন্থটিতে। আছে ভারতের জন্মকথা, গৌড়রাজ্য এবং স্বাধীন নরপতি শশাঙ্কের কথা, ঘোরিদের উত্থান কাহিনী, আলাউদ্দিন খিলজীর রাজ্য বিজয়, তুঘলক বংশের আবির্ভাব, তৈমুর লং এর ভারত আক্রমণ, পানিপথের যুদ্ধ, মুঘল আমল, শিখদের উত্থান, পলাশীর যুদ্ধ, ছিয়াত্তরের মন্বন্তর, ফরায়েজী ওহাবী এবং তিতুমীরের আন্দোলন, লর্ড হেস্টিংয়ের বন্দোবস্ত, সিপাহী বিদ্রোহ, ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি থেকে ব্রিটিশদের ক্ষমতা গ্রহণ, ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষ, বাংলায় মুসলিম চেতনার উদ্ভব, বঙ্গভঙ্গের ইতিহাস, মুসলিম লীগ আন্দোলনসহ ঐতিহাসিক সব ঘটনাপ্রবাহ। আছে ক্ষুদিরাম বসু থেকে শুরু করে বাঘা যতীন, আলী আহমদ সিদ্দিকি, গিরিধারী লাল, হুসেন মুহম্মদ মুসতবা, অশ্বিনী কুমার বসু, পুলিন দাস, সত্যরঞ্জন বসু, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, মাস্টার দা সূর্য সেন প্রমুখ বিপ্লবীদের রোমাঞ্চকর ইতিহাস গাঁথা এ ছাড়াও গান্ধী যুগের সূচনা, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, খিলাফত আন্দোলন, জালিয়ান ওয়ালাবাগের হত্যাকা-, হিন্দু জাতীয়তাবাদ, নেহেরু রিপোর্ট, জিন্নাহর ১৪ দফা, ১৯৩৭ এর নির্বাচন, লাহোর প্রস্তাব, ভারত ছাড় আন্দোলন, দিল্লী কনভেনশন, গান্ধীজীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাত এবং ভারত ও পাকিস্তান দুটি রাষ্ট্রের জন্মÑ প্রভৃতি অধ্যায়কে তিনি তুলে এনেছেন অত্যন্ত নিপুণভাবে। সমগ্র বইটিতে নির্মোহ থেকে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের প্রচেষ্টা অত্যন্ত গভীরভাবে লক্ষণীয়। একজন রাজনীতিবিদ হয়েও জাতিকে ইতিহাস সচেতন করে গড়ে তোলার জন্য সেলিমের এই পদক্ষেপ একটি ঐতিহাসিক পথ নির্দেশ হয়ে থাকবে। এ গ্রন্থটির মধ্য দিয়ে তিনি শুধু তার ইতিহাসপ্রিয়তার স্বাক্ষর রাখেননি, একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে অতীতের আলোকে ভবিষ্যত কর্মপন্থা নির্ধারণের সুযোগ করে দিয়েছেন তার উত্তর সূরিদেরও। আজকের শিক্ষার্থী বিশেষ করে যারা ইতিহাসের ছাত্র তাদের কাছে গ্রন্থটি একটি রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হবে। সম্পূূর্ণ আর্ট পেপারে ৫০০ পৃষ্ঠায় ছাপা এ গ্রন্থটির প্রকাশক মাধব চন্দ্র দাস। তার ত্রয়ী প্রকাশন থেকে প্রকাশিত মূল্যবান এ গ্রন্থটির দাম রাখা হয়েছে ১০০০ টাকা। গ্রন্থটির বহুল প্রচার কাম্য ।
×