ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুজিববর্ষ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ২৩ মার্চ ২০১৯

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুজিববর্ষ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী

মার্চ স্বাধীনতার মাস। মার্চ জাতির পিতার মাস। মার্চ বাঙালীর মাস। মার্চ বাঙালীর শত সহস্র কোটি বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। এ মাসেই পাকিস্তানী মিলিটারি জান্তা তাড়িয়ে শুদ্ধ মাটি নির্মাণ তথা জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আহূত ও পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলনের মাঝে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। এ মাসেই জাতির পিতার জন্মদিন, ৭ মার্চের বিশ্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ এবং সর্বোপরি স্বাধীনতা ঘোষণার মাস। এবারের মার্চ আরও গুরুত্বপূর্ণ এ জন্য যে, বছর ঘুরলেই জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি তথা সুবর্ণজয়ন্তী। লেখাটি তৈরি করছি ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে বা স্বাধীনতা ঘোষণার দিন সামনে রেখে। ১৯৭১ সালের সেই দিনটির দিকে তাকালে সামনে ভাসবে আনন্দ-বেদনা আর মুক্তি ও ঝুঁকি নেয়ার এক বর্ণাঢ্য চিত্র। তবে সুখের ব্যাপার রয়েছে। বেশ কিছুকাল ধরে বিএনপি ও জামায়াতের অশুভ আঁতাত আর স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে আগের মতো তেমন উচ্চবাচ্য করছে না। জাতীয় সংসদের ৮টি আসন নিয়ে ঘরে বসে সাপ-লুডু খেলছে। ছক্কাটি যদি কোনরকমে সাপের মুখে ফেলা যায়। যে রিজভী মিয়া প্রতিদিন সকাল-বিকেল নয়াপল্টনের কার্যালয়ে বসে আওয়ামী লীগের মু-ুপাত করতেন সেই রিজভী সাহেবও এখন আর মুখ খুলছেন না। মাঝে সাঝে একদল টিভি ও পত্রিকা সাংবাদিকের সামনে কিছু বলে ঘুমুতে চলে যান। মির্জা ফখরুল সাহেবও মুখ খুলছেন না ইদানীং। যাদের নির্বাচনের নেতা ভাড়া করেছিলেন তারাও নেতিয়ে পড়েছেন। একটি মিথ্যা আঁকড়ে বেশিদিন চলা যায় না। একদিন না একদিন তা রুখে দাঁড়াবেই। সম্ভবত এরই নাম প্রকৃতির প্রতিশোধ। মিলিটারি জিয়া বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠকারীদের অন্যতম এ তথ্য কেউ অস্বীকার করে না। তাকে স্বাধীনতার ঘোষক বানানো ডাহা মিথ্যা কথা। দীর্ঘদিন এই মিথ্যাকে আঁকড়ে খালেদা গং জাতির সঙ্গে যে প্রতারণা করেছিল তারই খেসারত এখন দিচ্ছে। বিএনপি নামক দলটি এখন আর জামায়াত আশ্রয় করেও টিকে থাকতে পারছে না। একাধিক কলামে বলেছি বিএনপি নামক দলটি নিঃশেষ হয়ে যাক। তা হলে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ভাষায় বামরা কার্যকর বিরোধী দল হিসেবে দাঁড়াতে পারবে। গাফ্ফার ভাইয়ের সঙ্গে আমি একমত, তবে পুরোপুরি না। আমাদের দেশের তথাকথিত বামরাও না ঘরকা না ঘাটকা। চীনপন্থী বামদের তো টিকিটিও এখন আর দেখা যায় না। মস্কোপন্থী বামদের সঙ্গে কিছু জাতীয়তাবাদী বাম-বাসদের মতো দল মিলে মাঝে-মধ্যেই আওয়াজ দিতে চায়। তাও বেশি দূর মানুষের কাছে পৌঁছে না। বস্তুত, শেখ হাসিনার কালজয়ী নেতৃত্ব, প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক দূরদর্শী দক্ষতা এবং ব্যক্তিগত মেধা, প্রজ্ঞার কাছে খালেদা-তারেক কোন্ ছার, মিলিটারি জিয়াও জীবিত থাকলে হাত জোড় করে মাফ চেয়ে রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যেতেন। মিলিটারি এরশাদের মতো ধূর্ত শাসকও এখন অসহায় বিরোধীদলীয় নেতা। এতক্ষণ যা বললাম তা ভূমিকা মাত্র। মূলত আসছে ২৬ মার্চ বা মার্চব্যাপী কর্মযজ্ঞ নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। বছরটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ২০২০ সালের ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এই দুটিকে সামনে রেখে সরকারীভাবে ব্যাপক কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে উদযাপনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বছরটিকে মুজিববর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় এবং বাস্তবায়ন এই দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। জাতীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এবং বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। রফিকুল ইসলাম স্যার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ হাসিনার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন। জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব এবং বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ওরফে কবি কামাল চৌধুরী। গত ২০ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে পেশাজীবী-কর্মজীবী প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় এবং বাস্তবায়ন কমিটির লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং বছরব্যাপী কর্মযজ্ঞের ওপর আলোকপাতকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বড় ধরনের আনন্দবার্তা দেন- এ বছর : ক. জিডিপি ৮% খ. মাথাপিচু আয় ১৯০৯ মার্কিন ডলার গ. দারিদ্র্যের সীমা ১১% এটি জাতির জন্য অবশ্যই সুখবর। গত ১০ বছরে দেশের যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তাতে সব কিছুই দৃশ্যমান। কোনকিছুই অদৃশ্যমান নেই। এরই মধ্যে বিদ্যুত উৎপাদন ২০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। ২০২১-এ সুবর্ণজয়ন্তীর মুহূর্তে বিদ্যুত উৎপাদন ২৪ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে। শেখ হাসিনা অত্যন্ত প্রত্যয়ের সঙ্গে ঘোষণা করেন, সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন দারিদ্র্যসীমা বলে কিছু থাকবে না। বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত দেশ। বঙ্গবন্ধু সারাজীবন গরিব-দুঃখী মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করেছেন। বাঙালী জাতির দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকে হত্যা করা না হলে বহু আগেই উন্নত বাংলাদেশ হতো। আল্লাহ পাকের অশেষ কৃপা তিনি বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনাকে জাতির নেতৃত্বদান এবং বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য আশীর্বাদ হিসেবে পাঠিয়েছেন। তিনি প্রায় ৪ দশক জাতির নেতৃত্ব দিয়ে মিলিটারি স্বৈরাচারের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং গণতান্ত্রিক পথে বাংলাদেশকে এমন এক উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে তার দিকে তাকিয়ে চলেছে। বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে দেখছে। বিশেষ করে : ১. নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু ২. বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ৩. কর্ণফুলী টানেল ৪. পায়রা বন্দর ৫. পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র ৬. চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে ৭. সমুদ্রসীমা নির্ধারণ ৮. মুজিব-ইন্দরা স্থলসীমা চুক্তি বাস্তবায়ন ৯. রাজধানীতে মেট্রোরেল, যত্রতত্র ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস ১০. পুরো এয়ারপোর্ট রোড যেন পশ্চিমা উন্নত দেশের সড়ক ১১. বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতার হত্যার বিচার ১২. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ১৩. কওমী মাদ্রাসার পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে কারিকুলাম পাল্টে মূলধারায় নিয়ে আসা। (তবে হ্যাঁ, কওমীপন্থী শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসুদ জানান, কওমী মাদ্রাসার ছাত্ররা আজও বঙ্গবন্ধুকে জানে না, স্বাধীনতার ইতিহাস জানে না।) ১৪. গ্রামকে শহর বানানোর প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া ১৫. আজ বাংলাদেশে একটি মানুষও না খেয়ে থাকেন না, খালি পায়ে হাঁটেন না, ছাত্রছাত্রীরা জিন্স, কেডস পায়ে স্কুল-মাদ্রাসায় যায়। উত্তরবঙ্গের মঙ্গা-দুর্ভিক্ষ শব্দাবলী এখন আর জীবনে নেই, ডিকশোনারিতে উঠে গেছে ১৬. দেশে গরু-ছাগলের উৎপাদন বেড়েছে ১৭. মাছ, শাক-সবজি উৎপাদনে ৩য় ও ৪র্থ ১৮. বাংলাদেশের দুঃখ মাদক চোরাচালান ও মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স অনুযায়ী দেশব্যাপী যুদ্ধ চলছে। (এসব ক্ষেত্রেও কিছু অসৎ পলিটিশিয়ান মাদকাসক্তিদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে, অভিযান পরিচালনাকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের যখন তখন বদলি করছে, হয়রানি করছে।) ১৯. নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা নারী, স্পীকার নারী, ডেপুটি নেতা নারী। ক’দিন আগেও বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন নারী। আর্মি, পুলিশ, সিভিল প্রশাসনের শীর্ষে নারী, শিক্ষায় তো মেয়েরা ছেলেদের যোজন যোজন পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হাসান জানান, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে প্রথম নারীদের বিচারকের আসনে বসার সুযোগ করে দেন। আগে রাষ্ট্রীয় নীতি অনুযায়ী নারীদের বিচারকের আসনে বসার সুযোগ ছিল না। শেখ হাসিনার আমলে সুপ্রীমকোর্টে নারী বিচারক হন। ২০. এ সময়ে মহাসঙ্কট রোহিঙ্গা রিফুজিদের আশ্রয়, অন্ন-বস্ত্র ও চিকিৎসা দিয়ে শেখ হাসিনা এক মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলেছেন। ২১. গত ৩০ ডিসেম্বর অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন জাতিকে উপহার দেন এবং চার-পঞ্চমাংশ আসন নিয়ে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার তথা জাতির দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন। বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে। বিগত এক দশকে অর্থাৎ ২০০৮ থেকে ২০১৮ এই দশ বছরে বাংলাদেশ এমন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে যাকে বলা যায় ‘৮ থেকে ১৮ এরা অব শেখ হাসিনা।’ এই প্রেক্ষাপট নিয়ে জাতি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছে। গত ২০ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভা হয়ে গেল, যাতে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এবং ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর সঞ্চালনায় অংশ নেন ও মতামত ব্যক্ত করেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হাসান, সাবেক প্রধান বিচারপতি ও বর্তমান আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি খায়রুল হক, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, নাসিমসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, ড. মশিউর রহমান, তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, ড. গওহর রিজভী, সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, মেয়র সাঈদ খোকন, প্রফেসর ইমেরিটাস আনিসুজ্জামান, জাতীয় প্রফেসর রফিকুল ইসলাম, সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান, বিমানবাহিনী প্রধান, সাংবাদিক তোয়াব খান, মুহম্মদ শফিকুর রহমান এমপি, স্বদেশ রায়, আবেদ খান, মনজরুল আহসান বুলবুল, বঙ্গবন্ধু প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন, বঙ্গবন্ধু প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রফেসর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান, প্রফেসর ড. হারুনুর রশীদ ভিসি, প্রফেসর ড. আখতারুজ্জামান, প্রফেসর ড. সৈয়দ মনজরুল ইসলাম, রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, ক্রিকেটার মাশরাফী বিন মর্তুজা এমপি প্রমুখ। বিদেশীদের নিয়েও একটি কমিটি হতে পারে। মুজিববর্ষে একটি ওয়েবসাইট বানানো হবে, যাতে জাতির পিতার সারাজীবন বিষয়ভিত্তিক ভাগ করে উপস্থাপন করা হবে এবং ওই ওয়েবসাইটে ঢুকলেই বঙ্গবন্ধুকে জানতে পারবে। গান্ধীর মতো একটি আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র নির্মাণেরও প্রস্তাব করা হয়। ঢাকা ॥ ২১ মার্চ ২০১৯ লেখক : সংসদ সদস্য [email protected]
×