ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রাম আর শহরের দূরত্ব কমিয়েছে পোস্ট ই-সেন্টার

প্রকাশিত: ০৮:৩৮, ২৩ মার্চ ২০১৯

 গ্রাম আর শহরের দূরত্ব কমিয়েছে পোস্ট ই-সেন্টার

উজ্জ্বল বিশ্বাস ॥ গ্রাম আর শহরের দূরত্ব কমিয়েছে পোস্ট ই-সেন্টার দীর্ঘদিন অযত্ন আর অবহেলায় পড়েছিল দেশের প্রায় সাড়ে ৮ হাজার ডাকঘর। যার অনেক ঘুণে খেয়েছে। ঘুণে ধরা অফিসে বসেই পোস্ট মাস্টাররা এ যাবত কাজ চালিয়েছেন। দেখার অভাবে গভীর সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রমে ছিল এক সময়ের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যমের এ অফিস। তবে সে অতল সমুদ্র থেকে টেনে তোলার উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার। আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, নাগরিক সেবা প্রদানে ডিজিটাল পদ্ধতি এবং গ্রাম ও শহরের দূরত্ব কমাতেই এ উদ্যোগ বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। পোস্ট ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় গ্রাম আর শহরের দূরত্ব কমাতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকা ডাকঘরগুলোকে ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ নেন। ২০১২ সালে প্রকল্প শুরু হলেও ২০১৫ ও ২০১৬ সালে কার্যক্রমে তৃণমূলে পোস্ট ই-সেন্টারগুলো ছড়িয়েছে। সূত্র জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা, নড়াইল, মাগুরা, বরিশাল, বাগেরহাট, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পটুয়াখালি, ভোলা, ঝালকাঠি, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ ২২টি জেলায় ইতোমধ্যে ১৯১টি ডাকঘরে পোস্ট-ই সেন্টার চালু হয়েছে। চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আরও ৭শ’টি সেন্টার খোলা হবে। পোস্ট অফিসগুলোতে ঘুণ ধরার বিপরীতে প্রাণ ফিরে এসেছে। শুধু চিঠি আর মানিগ্রাম আদান-প্রদান নয়, তৃণমূল মানুষ নানা প্রকার সেবা পাচ্ছে জিডিটাল পদ্ধতিতে।সূত্র জানায়, প্রতিটি সেন্টারে তিনটি ল্যাপটপ, দুটি প্রিন্টার, হেড ফোন ও ১টি মডেম এবং ১টি স্কানার দেয়া হয়েছে। তবে আরও কিছু উপকরণ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। যে অঞ্চলে বিদ্যুত পৌঁছায়নি সেখানে দেয়া হচ্ছে সৌরবিদ্যুত। খুব তাড়াতাড়িই সেন্টারগুলোতে দেয়া হবে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা। সূত্র জানায়, পোস্ট ই-সেন্টারের মাধ্যমে গ্রাম ও শহরের মধ্যে ডিজিটাল পার্থক্য দূর হবে। গ্রাম থেকে অনলাইনের সুবিধাদি, ওয়েব কেমের মাধ্যমে বিদেশের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথোপকথনের সুবিধা, বিদেশ হতে আগত বৈধ রেমিটেন্সের সুবিধা প্রদান, পোস্টাল ক্যাশ কার্ড ইএমটিএস, মোবাইল ব্যাংকিং প্রভৃতি সুবিধা ই-সেন্টারে প্রদান করা হবে এবং ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে সারাদেশে এক হাজারটি তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর গ্রামীণ ডাকঘর নির্মাণ করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও এ সেন্টার থেকে তৃণমূলের মানুষ কম খরচে ১৫ দিন, ১ ও ৩ মাস থেকে ৬ মাস মেয়াদী কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ফটোকপি, কম্পিউটার কম্পোজ, সরকারী আবেদন ফরম, চাকরির আবেদন পূরণ, স্কুল কলেজে ভর্তি ফরম পূরণ, ইন্টারনেট ব্যবহার, সরকারী ও বেসরকারী ভাতা প্রদান, কৃষকদের বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী ভাতা প্রদান করা হবে। এসব কাজ পরিচালনার জন্য কমিশনভিত্তিক উদ্যোক্তা নিয়োগ দিয়েছে সরকার। অনেক উদ্যোক্তা নিজ উদ্যোগে নতুন করে পোস্ট অফিস পরিচালনা ও নাগরিক সেবা প্রদানের জন্য ঘর ভাড়া নিয়ে কাজ শুরু করেছে। অনেক পোস্ট অফিসের মাস্টাররা নতুন ঘরগুলোতে বসেই কাজ করছেন। সম্প্রতি সাতক্ষীরা এলাকার কৃষকদের মাঝে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার বিভিন্ন উপকরণ বাবদ অর্থ ও বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার সমাজসেবার আওতায় কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন ভাতা পোস্ট ই-সেন্টারের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। পরে তা দেশের বিভিন্ন এলাকায় দেয়া হবে। গত বছরের ২১ অক্টোবর ডাক অধিদফতর এবং এটুআই প্রোগ্রামের যৌথ উদ্যোগে পোস্ট ই-সেন্টার ও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার টেকসইকরণের লক্ষ্যে নতুন ই-সেবা তৈরি ও বাস্তবায়ন, উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি, সেন্টারগুলোকে টেকসইকরণের লক্ষ্যে কারিগরি সহায়তা প্রদান, বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সেবার সম্প্রসারণের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়া, পোস্টাল লাইফ ইনস্যুরেন্স সেবার সম্প্রসারণ, পোস্টাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি স্থরের মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ আর্থিক সেবা নিশ্চিত করতে এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্তারা। এটা বাস্তবায়ন হলে পোস্ট ই-সেন্টার আরও উন্নত সেবা প্রদান করতে পারবে। পোস্ট ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি শীর্ষক প্রকল্পের যশোর অঞ্চলের সিস্টেম সাপোর্ট ট্রেইনার আশরাফুল আলম বলেন, এ অঞ্চলের পোস্ট ই-সেন্টারগুলো খুব ভালভাবেই চলছে। নিয়মিত উদ্যোক্তারা আয়ের ২০ ভাগ প্রদান করছেন। বেশ আগেই সেন্টারে সাইনবোর্ডে প্রদান করা হয়েছে। চেয়ার-টেবিলসহ আরও কিছু উপকরণ দেয়া হবে। তিনি বলেন, সকল সেবা তৃণমূল মানুষের জন্য। সেন্টারগুলোতে তৃণমূল মানুষের উপস্থিতি বাড়াতে এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন মহলের কাজ করতে হবে। এ ব্যাপারে পোস্ট ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি শীর্ষক প্রকল্পের সহকারী পরিচালক আমিনুর রহমান বলেছেন, খুলনা, ফরিদপুর ও বরিশালের ২২ জেলার পোস্ট ই-সেন্টার দেখভালের কাজ তদারকি করছেন তিনি। তিনি জানান, যে পোস্ট অফিস থেকে দীর্ঘদিন যাবত তেমন কোন আয় ছিল না পোস্ট অফিসগুলোতে। অথচ সেন্টার চালু হওয়ার পর ধারাবাহিকভাবে রাজস্ব দিয়ে যাচ্ছে উদ্যোক্তারা। তারা চলতি বছরের জুলাই মাসে ১০ লাখ টাকা রাজস্ব দিয়েছে। এ অর্থ শুধু নাগরিক সেবা থেকে প্রাপ্ত। তিনি আরও বলেন, তার এরিয়াতে এখন ১৯০১টি পোস্ট ই-সেন্টার চালু হয়েছে। তবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তার টার্গেট ছিল ২০২৪টি সেন্টার চালু করা। তা বৃদ্ধি হয়ে ২৬শ’র উপরে দাঁড়াবে বলে দাবি করেছেন এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এটি একটি অগ্রাধিকার প্রকল্প। যা প্রধানমন্ত্রী নিজেও তদারকি করেন।
×