ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজউকের আরবান রি-ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে আগ্রহ নেই

ঘিঞ্জি পুরান ঢাকাই চান বাসিন্দারা

প্রকাশিত: ০৮:৪২, ২৩ মার্চ ২০১৯

ঘিঞ্জি পুরান ঢাকাই চান বাসিন্দারা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সম্প্রতি পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে বিপুলসংখ্যক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। প্রাণহানির পাশাপাশি সম্পদেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। জানমালের ওই ক্ষয়ক্ষতির প্রধান কারণ, অত্র এলাকার ঘিঞ্জি পরিবেশ ও অবৈধ কেমিক্যালের গোডাউন ও কারখানা। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক পরিকল্পনা, কার্যকর উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা ও সুষ্ঠু নজরদারি থাকলে এমন ভয়াবহ ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানো সম্ভব। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জমি অধিগ্রহণ ছাড়া এবং পুরাতন ঐতিহ্য রক্ষা করেই আরবান রি-ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের মাধ্যমে পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকাকে আধুনিক নগরে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সেটি বাস্তবায়িত হলে পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি ও জরাজীর্ণ চেহারা পরিবর্তিত হয়ে প্রশস্ত রাস্তা ও বহুতল ভবন গড়ে উঠত। জমির মালিকদের সমন্বয়ে ব্লক ভিত্তিক নগর গড়ার প্রাথমিক প্রকল্পের পরিকল্পনাও সম্পন্ন করেছিল রাজউক। মালিকরা চাইলে আরবান রি-ডেভেলপমেন্ট নামের ওই প্রকল্পের অধীনে ছোট ছোট বাড়ি ভেঙ্গে একাধিক বহুতল ভবনের পাশাপাশি ২০০ ফুট করে বাণিজ্যিক স্থাপনাও পেতেন মালিকরা। কিন্তু বাড়ি-জমির মালিকদের অনীহায় প্রকল্পটি আর আশার মুখ দেখেনি। এমনিতেই মানুষে গিজগিজ রাজধানী ঢাকা। এর মধ্যে পুরান ঢাকা আরও বেশি ঘিঞ্জি ও ঘনবসতিপূর্ণ। ওই ঘিঞ্জি ও ঘনবসতিপূর্ণ সর্বনিম্ন পাঁচ বিঘা জমি নিয়ে ব্লক ভিত্তিক এলাকা গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল রাজউক। সেটি বাস্তবায়ন হলে ওই ব্লকে স্কুল, হাসপাতাল, ৫০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা এবং এলাকার ভেতরে ৩০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা এবং বাচ্চাদের খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা সম্ভব হতো। এতে সেখানে দুঃসহ যানজট, জলজট, ঘিঞ্জি পরিবেশ থেকে মুক্ত হতেন স্থানীয়রা। রাজউকের ডিটেল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাব পিডি) ও উপনগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা ওই প্রকল্পের আওতায় পুরান ঢাকার ঐতিহ্যকে রক্ষা করে জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এলাকাবাসী উন্নয়ন এবং তাদের উপকৃত হওয়ার বিষয়টি বুঝতে না পেরে ওই প্রকল্পের প্রতি অনাস্থা দেখায়। এদিকে পুরান ঢাকার অগ্নিকান্ড এবং সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত করণীয় জানাতে গিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, পুরান ঢাকার সমগ্র এলাকার ভূমি ব্যবহার জরিপ করে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও এলাকাগুলো দ্রুত চিহ্নিত করা প্রয়োজন। সেখানে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে বসবাস উপযোগী পরিবেশ, প্রয়োজনীয় খেলার মাঠ ও জলাধার তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী। পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার আবাসিক ভবনে ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল কারখানা অপসারণের লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) টাস্কফোর্সের অভিযানে প্রথম দশদিনে মোট ১৩২টি বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি জরিমানা করা হয়েছে মোট ১৯ লাখ টাকা। সতর্ক করা হয়েছে ১৬টি প্রতিষ্ঠানকে। সেই সঙ্গে সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে ১০টি প্রতিষ্ঠানকে। জমি অধিগ্রহণ ছাড়া এবং পুরাতন ঐতিহ্য রক্ষা করে আরবান রি-ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের মাধ্যমে পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকাকে আধুনিক নগরে পরিণত করতে রাজউকের এমন উদ্যোগে নারাজ এলাকাবাসী। মূলত তাদের অনীহায় পুরান ঢাকাকে ঘিঞ্জি এলাকা থেকে বদলে দিতে পারছে না রাজউক। একাধিক এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা আধুনিকতার ছোঁয়া চান না, এভাবেই ভাল আছেন। যে কারণে রাজউকের এমন প্রকল্পের বিষয়ে অনাস্থা তাদের। স্থানীয় বাসিন্দা হাজী নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা ঐতিহ্যগত পুরান বাড়িতেই থাকতে চাই। এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে আমাদের নানা ধরনের ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। অনেকের এক কাঠা জমির ওপরে পাঁচতলা বাড়ি, সেখানে অংশীদার রয়েছেন সাত ভাই-বোন। সেক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব কীভাবে ঠিক করবে রাজউক? অনেকের বাসা ভাড়া দেয়া আছে। ওই ভাড়ার টাকায় তাদের সংসার চলে। রাজউক যদি এ কাজে হাত দেয় তাহলে বছরের পর বছর পার হয়ে যাবে। তখন তো আমরা আর ভাড়া পাব না। তাহলে চলব কীভাবে? এমন নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে পুরান ঢাকার একাধিক বাড়ির মালিক বলেন, বাড়িগুলোতে আমরা বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছি। এটা আমাদের ঐতিহ্যের বাড়ি, এটা যেভাবে রয়েছে সেভাবেই আমরা ভাল আছি। অনেক ভাগাভাগি আছে আমাদের। তাই আমরা কোন ঝামেলায় যেতে চাই না। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরান ঢাকার অনেক বাড়ি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। মান্ধাতার আমলের জরাজীর্ণ ভবনগুলো এক ধরনের মৃত্যুফাঁদ। কোন সময় যদি বড় ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে তাহলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তাই ঘিঞ্জি পুরান ঢাকাকে পরিকল্পিত নগর হিসেবে গড়ে তোলা জরুরী।
×