খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েই মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহিদ ফারুক শামিম। ভাঙ্গন কবলিত কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী বিভাগীয় শহর বরিশাল-৫ (সদর) আসন থেকে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। দায়িত্ব পেয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া এ চমক ধরে রাখার পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের মন জয়ে দিনরাত কাজ করছেন তিনি। অবশ্য ইতোমধ্যে তিনি তার কিছু প্রমাণও দিয়েছেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সপ্তাহে ছুটির দুইদিন নির্বাচনী এলাকা বরিশালে এসে সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের কথাও শুনছেন। পাশাপাশি সরকারের চলামান সকল উন্নয়নমূলক কাজের তদারকি করছেন। ইতোমধ্যে তিনি বরিশালের বাবুগঞ্জ ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলাসহ কীর্তনখোলার ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় ভাঙ্গন রোধে তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনাও দিয়েছেন।
কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহিদ ফারুক শামিম বলেন, এলাকার মানুষের ভোটে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে মন্ত্রিত্ব উপহার পেয়ে আমি ভাগ্যবান। এখন এলাকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করতে চাই। তিনি আরও বলেন, মন্ত্রী হওয়ার কারণে আমি এখন শুধু বরিশালের-ই নয়, সারাদেশের মন্ত্রী। তাই নির্বাচনী এলাকা, মন্ত্রণালয় এবং সারাদেশের মানুষের জন্য কাজ করার সুবিধার্থে প্রতিটি সপ্তাহকে ভাগ করেছি। এর অংশ হিসেবে সপ্তাহে তিনদিন মাঠ (মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প এলাকা) ঘুরে দেখব, দুইদিন মন্ত্রণালয়ে অফিস করব এবং ছুটির দুইদিন নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে মানুষের কথা শুনে কাজ করব।
মন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে সরকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। সুনামের সঙ্গে সেই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। তবে আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষের বড় সমস্যা নদী ভাঙ্গন। ভোট চাইতে গিয়ে দেখেছি এলাকার মানুষ টাকা-পয়সা চান না, নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধের আশ্বাস চেয়েছেন। যারা নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছেন তারাই এর কষ্ট বোঝেন। নদী ভাঙ্গনে অনেক জমিজমার মালিক এখন ঢাকা শহরে রিক্সা চালাচ্ছেন। শুধু বরিশাল নয়, দেশের কোথায়ও যেন নদীতীরের মানুষ নদী ভাঙ্গনে নিঃস্ব না হয়, সেভাবে কাজ করতে চাই। ২০১৭ সালের সিলেটের হাওড় অঞ্চলের বন্যায় হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিরূপ অভিজ্ঞতার আলোকে এবার কী ধরনের আগাম বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, হাওড়ে উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। আমি গত মাসে সেখানে পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। সেখানকার কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যেন উন্নয়ন কাজে কোন ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতি না হয়। একইভাবে সারাদেশে যেসব এলাকায় প্রকল্পের কাজ চলছে বা প্রকল্প গ্রহণ করা জরুরী, সেসব বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের সব প্রকৌশলীকে নির্দেশনা দিয়েছি। তারা চলতি মাসের মধ্যে সরেজমিন প্রতিবেদন জমা দেবেন। প্রতিবেদন দেখে স্বল্পমেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যেখানে বর্ষার আগে ব্যবস্থা নেয়া দরকার, সেখানে বর্ষার আগেই কাজ শেষ করা হবে। পাশাপাশি ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকাগুলোয় যেসব প্রকল্প চলছে, তা কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে শেষ করা হবে।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি জাহিদ ফারুক শামিম বলেন, উন্নয়নের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে কেন এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন তা জানি না। শুধু জানি তিনি আমার প্রতি যে বিরল সম্মান দিয়েছেন, আস্থা রেখেছেন কাজের মধ্য দিয়ে সেই আস্থা ধরে রাখতে চাই।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম এমপি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেয়া ২০৯ কোটি টাকা ব্যয়ের কীর্তনখোলা ভাঙ্গন প্রতিরোধ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। ওইদিন তিনি কীর্তনখোলা নদীতে জিও ব্যাগ ফেলে প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের দিন মন্ত্রী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মানসম্পন্ন কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। জানা গেছে, কীর্তনখোলার ভাঙ্গন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজটি বাস্তবায়নের জন্য নৌবাহিনী পরিচালিত খুলনা শিপইয়ার্ডকে ঠিকাদার নিযুক্ত করে। খুলনা শিপইয়ার্ড কাজটির জন্য বহুজাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কনফিডেন্স গ্রুপকে উপ-ঠিকাদার নিযুক্ত করে। কনফিডেন্স গ্রুপ প্রকল্প এলাকাটিকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করে তাদের অধীনে চুক্তির মাধ্যমে আবার তিনজন ঠিকাদার নিযুক্ত করেছেন। এই তিনটি প্রতিষ্ঠান হলো- ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার এফআর ট্রেডার্স, ফারিদি এন্টারপ্রাইজ, জেডিয়াক কনস্ট্রাকশন। এফআর ট্রেডার্স আবার চাঁদপুরের শাজাহান জমাদ্দার নামক এক ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক রমজান আলী প্রামাণিক নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজটি শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: