ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভেঙ্গেছে ৫ শতাধিক বাড়ি

প্রকাশিত: ০৮:৪৬, ২৩ মার্চ ২০১৯

 ভেঙ্গেছে ৫ শতাধিক বাড়ি

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোর উপশহর এলাকাকে পরিকল্পিত নগরায়ণে গড়ে তোলা হচ্ছে। এ কাজে ব্যয় হচ্ছে ১৫ কোটি টাকা। নির্মিত হচ্ছে ৪০ ফুট সড়ক ও পাঁচ ফুটের পরিকল্পিত ড্রেন। আর উন্নয়নের এ বিশাল কর্মযজ্ঞে ভাঙ্গা পড়ছে ৫ শতাধিক বাড়ি-ঘর। বর্তমানে গোটা উপশহর জুড়ে পরিচালিত হচ্ছে ভাংচুর কার্যক্রম। বাদ পড়ছে না দুই থেকে তিনতলা বাড়ি পর্যন্ত। দেশ স্বাধীনের পর এই প্রথম উপশহর এলাকায় এত বড় উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ হচ্ছে বলে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। যশোর হাউজিং এস্টেটের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী দীপক কুমার সরকার জানান, জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে যশোর উপ-বিভাগের আওতাধীন উপশহর হাউজিং এস্টেটের অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। উপ-শহরকে আধুনিক ও পরিকল্পিত নগরায়ণে গড়ে তুলতে এ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে উপশহরের সেক্টরসহ ৬টি ব্লকের সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি ৮ লাখ টাকা এবং পরিকল্পিত মাস্টার ড্রেন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। উপশহর এলাকার প্রতিটি ব্লকেই ৪০ ফুট করে নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। যার মোট পরিমাণ হবে ১২ কিলোমিটার। একইসঙ্গে ৫ ফুটের নতুন ড্রেন নির্মাণ করার কাজ শুরু হয়েছে। তবে এ কাজের শুরুতেই যশোর হাউজিং এস্টেট কর্তৃপক্ষ দখলদার উচ্ছেদের কাজে হাত দেয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তারা দফতরের ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে নিয়ে মাপজোকের মাধ্যমে তাদের সীমানা নির্ধারণ করেন। এ সময় দখলদারদের চিহ্নিত করে দাগ দিয়ে স্থাপনা সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানিয়ে দেয়া হয়। উপশহরের ৬টি ব্লকের ৩ থেকে ৫ কাঠার প্লটের জমিতে কেউ কেউ ৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত অতিরিক্ত জমি দখল করে স্থাপনা তৈরি করেছেন বলে জানান ইঞ্জিনিয়ার দীপক। তাদের মাপজোকের পর দখলদারের আওতায় আসে পাঁচ শতাধিক বাড়ি ঘর। এসব বাড়ির মালিকদের তারা স্থাপনা সরিয়ে নিতে অনুরোধ করেন। পরে তাদের নোটিস দেয়া ও উপশহর জুড়ে মাইকিং করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে গোটা উপশহর জুড়ে এখন চলছে ভাংচুরের কাজ। নোটিস প্রাপ্ত প্রায় আড়াই শতাধিক ব্যক্তি নিজের উদ্যোগে তাদের স্থাপনা ভেঙ্গে সরিয়ে নিচ্ছেন। আর আড়াই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা হাউজিং কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ করছে। যার থেকে বাদ পড়ছে না দুই থেকে তিনতলা পর্যন্ত বাড়ি। এদিকে, যশোর হাউজিং এস্টেট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রায় ৫০ বছর পর যশোর উপশহরকে পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। আর এ কাজে এবারই প্রথম বিপুল পরিমাণ ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে। যার সুবিধাভোগী হবে উপশহরবাসী। পরিকল্পিতভাবে নির্মিত ড্রেন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করবে এবং প্রশস্ত রাস্তায় মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারবে। এ কাজের দরপত্র আহ্বানে গোটা উপশহর এলাকায় ড্রেন নির্মাণের কাজ পান মাদারীপুর জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খান ট্রেডার্সের মালিক মুজাম খান। কাজের অনুমতি পেয়ে সম্প্রতি খান ট্রেডার্স উপশহর ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ডের ই-ব্লকের পূর্বপাশে শিল্প প্লট সংলগ্ন পশ্চিম উত্তর পাশ থেকে ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। যে ড্রেন শেখহাটি হয়ে ভৈরব নদীর সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে। গত দুই সপ্তাহ যাবত প্রতিষ্ঠানটি ড্রেন নির্মাণের প্রস্তুতি হিসেবে খননের কাজ শুরু করেন। গোজামিল দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ওই স্থানে ঢালাইয়ের প্রস্তুতিকালে স্থানীয় বাসিন্দা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও উপশহর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি সুখেন মজুমদার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি খায়রুল বাশার, আব্দুল মান্নান মিনু, ঠিকাদার রকিব মোস্তফা বাধা দেন। তারা ড্রেন নির্মাণের জন্য লোহার খাচি তুলে দেন। তারা অভিযোগ করেন, উপশহর ই-ব্লকের পূর্ব উত্তর শেষ থেকে ড্রেন নির্মাণে সিডিউলের নিয়ম মোতাবেক কাজ না করায় তারা লোহার খাচি তুলে দিয়ে প্রতিবাদ জানান। তারা জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ যশোরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী দীপক কুমার সরকার, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসউদ রেজাকে বিষয়টি অবহিত করেন। এ বিষয়ে কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খান ট্রেডার্সের মালিক মুজাম খান বলেন, তিনি সিডিউল মোতাবেক কাজ করতে চান। কর্মরত শ্রমিকেরা ভুল করেছে। তিনি খারাপ মানের বালি ও ইট দিয়ে ড্রেন নির্মাণের খবর জানতে পেরে বন্ধ করে দিয়েছেন। গোটা উন্নয়ন কাজ নিয়ে যশোর হাউজিং এস্টেটের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী দীপক কুমার সরকার বলেন, পরিকল্পিত নগরায়ণ গড়ে তোলার লক্ষ্যে উপশহর এলাকায় কাজ শুরু হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে উন্নয়নের এতবড় কর্মযজ্ঞ এর আগে আর হয়নি। তিনি বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় উপশহরের সকল রাস্তা ৩০ থেকে ৪০ ফুট প্রশস্ত হবে।
×