ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তিন শ’ কোটি টাকার পরিকল্পনা

কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে চরমপন্থা থেকে ফেরানো হবে জঙ্গীদের

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ২৩ মার্চ ২০১৯

কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে চরমপন্থা থেকে ফেরানো হবে জঙ্গীদের

শংকর কুমার দে ॥ জঙ্গীমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করতে প্রায় সাড়ে তিন শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এই পরিকল্পনার আওতায় কারাগারে আটক জঙ্গীদের ‘ডি-র‌্যাডিকালাইজেশন’ (চরমপন্থা থেকে ফিরিয়ে আনা) প্রকল্প গ্রহণ করেছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে নেয়া হয়েছে এই মহাপরিকল্পনা। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে কারাগারে আটক জঙ্গী সদস্যদের মানসিকতার পরিবর্তন করে চরমপন্থা থেকে ফিরিয়ে আনাই হচ্ছে উদ্যোগের উদ্দেশ্য। ক, খ ও গ-এই তিন ক্যাটাগরিতে কাউন্সিল করার জন্য প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে জঙ্গী সদস্যদের। এই প্রথমবারের মতো দেশে জঙ্গী সদস্যদের কাউন্সিলিং করার এত বড় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। পুলিশ সদর দফতর ও কারাগার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর ও কারাগার সূত্রে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার ও কাসিমপুর কারাগারসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে কারান্তরীণ রয়েছে সহস্রাধিক জঙ্গী সদস্য। কারাগারে আটক এসব জঙ্গী যারা ভয়ঙ্কর তাদের ‘ক’ ক্যাটাগরি, অপেক্ষাকৃত কম ভয়ঙ্করদের ‘খ’ এবং যারা নবীন তাদের ‘গ’ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। কারাগারে আটক জঙ্গীরা যাতে জেল জীবনের পর আর জঙ্গীবাদে না জড়ায় সেই লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে কাউন্সেলিং করার এই পরিকল্পনা। সামাজিক সচেতনতা, আলেম ওলামাদের সমন্বয়ে জঙ্গীবিরোধী জনসচেতনতাসহ নানাভাবে জঙ্গীদের রাশ টেনে ধরে জঙ্গীবাদকে নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর নেয়া হয়েছে জঙ্গীদের কাউন্সিল করার এই প্রকল্প। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে জঙ্গী সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ও জঙ্গী তৎপরতা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে ২০০৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে। সৌভাগ্যক্রমে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম মোঃ জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত ও ৩ শতাধিক আহতের ঘটনা ঘটানো হয়। এর আগে রমনা বটমূলে বোমা হামলা, পল্টনে সিপিবির জনসভায় বোমা হামলাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বোমা হামলায় বিপুলসংখ্যক মানুষজন হতাহত হন। এমনকি সারাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটানো হয়। ২০০৭ সালে তৎকালীন শীর্ষ জঙ্গী শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ শীর্ষ জঙ্গীদের ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে জঙ্গীবাদের মিশন শেষ হয়ে গেছে বলে তৎকালীন সরকার মনে করেছিল। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও জঙ্গী প্রশ্নে অনেকটা হাল ছেড়ে দেয়। কিন্তু জঙ্গীরা ২০০৭ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত সময়ে নিজেরা ঠিকই সংগঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের স্লিপারসেল সদস্যরা ২০১৩ থেকে ১৬ পর্যন্ত সময়ে একের পর এক ব্লগার হত্যা করে। এসব হত্যার পর পুলিশ কিছুটা নড়েচড়ে বসলেও কাজের কাজ হয়নি। জঙ্গীরা ভেতরে ভেতরে নিজেদের নেটওয়ার্ক আরও বিস্তৃত করেছে। ফলে ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশান হলি আর্টিজানে হামলা করে সারাবিশে^ আলোড়ন সৃষ্টি করে।
×