ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সবচেয়ে বেশি ওভার ইনভয়েসিংয়ে

বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ২৩ মার্চ ২০১৯

  বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা পাচার হচ্ছে। এ কারণে যারা ওভার ইনভয়েসিং করে বিদেশ থেকে পণ্য সামগ্রী আমদানি করছে তাদের খুঁজে বের করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের দিকে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। দেশ থেকে কি পরিমাণ টাকা পাচার হয়, সেই হিসাব সরকারীভাবে না মিললেও যুক্তরাষ্ট্রের জিএফআইয়ের প্রতিবেদন বলছে, এর পরিমাণ বছরে অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা। দেশ থেকে এই টাকা চলে যাচ্ছে চার প্রক্রিয়ায়। এগুলো হচ্ছে-ওভার ইনভয়েসিং, আন্ডার ইনভয়েসিং, হুন্ডি ও অন্য মাধ্যমে বিদেশে লেনদেন এবং ভিওআইপি ব্যবসা। এর মধ্যে টাকা পাচারের সবচেয়ে সহজ নিরাপদ ও বড় মাধ্যম হচ্ছে ওভার ইনভয়েসিং। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। এদিকে, ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা এবং নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যম টাকা পাচারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মোঃ আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ওই সভায় টাকা পাচারকারীদের শাস্তির আওতায় আনাসহ নিয়ন্ত্রণে বেশকিছু সুপারিশও করা হয়েছে। কমিটির সদস্য ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব মোঃ রিজওয়ানুল হুদা বলেন, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন দেশ কর্তৃক পরিপালনের জন্য ফিন্যান্সিয়াল এ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ) ৪০টি সুপারিশ প্রদান করেছে। তিনি বলেন, এসব সুপারিশ সকল দেশকে পরিপালন করতে হয় এবং বিভিন্ন ভিত্তিতে দেশসমূহের পরিপালনের অবস্থান এ্যাকসেস করা হয়। এ ধরনের এ্যাসেসমেন্ট প্রক্রিয়াই হচ্ছে মিউচ্যুয়াল ইভুলিয়োশন যা সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে করা হয়ে থাকে। জানা গেছে, চলতি বছরের আগস্ট মাসে আন্তর্জাতিক সংস্থা এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিংয়ের (এপিজি) বার্ষিক সম্মেলন শুরু হবে। ওই সভা সামনে রেখে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধে একটি কার্যকরী এ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে। এই এ্যাকশন প্ল্যানের মূল প্রতিবেদনটি এবার এপিজি সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে। অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ১১টি মানদ- রয়েছে। সদস্য দেশগুলোর বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও আমদানি-রফতানির জন্য মানদ-ে উত্তীর্ণ হওয়া জরুরী। এ কারণে জঙ্গীদের নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে দেয়াসহ তাদের অর্থায়নকারীরা সরকারের তীক্ষ্ণ নজরদারিতে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধে এ পর্যন্ত নেয়া সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। এদিকে, এপিজি হচ্ছে ফিন্যান্সিয়াল এ্যাকশন টাস্কফোর্স (মানি লন্ডারিং) ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক সংস্থা (এফএটিএফ)-এর আঞ্চলিক সংস্থা। এর কাজ হচ্ছে, বিভিন্ন দেশে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সংক্রান্ত আইনী দুর্বলতা ও ঝুঁকি মোকাবেলায় বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি সেগুলো বাস্তবায়নে সহায়তা করা। গত ১৯৮৯ সালে ফিন্যান্সিয়াল এ্যাকশন টাস্কফোর্স (এফএটিএফ) প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সংস্থাটি মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে কাজ করে আসছে। জানা গেছে, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ওভার ইনভয়েসিংয়ে বেশি টাকা পাচার ॥ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) তথ্যমতে, দেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই টাকার আবার বেশিরভাগ যাচ্ছে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে। আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বেশি দেখিয়ে ওভার ইনভয়েসিং করা হয়। তথ্যমতে, ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার হয়েছে, যা দেশের চলতি বছরের (২০১৮-২০১৯) জাতীয় বাজেটের চেয়েও বেশি। এছাড়া টাকা পাচারে বিশ্বের শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম। অর্থ পাচারে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের প্রায় ২০ শতাংশই কোন না কোনভাবেই পাচার হচ্ছে।
×