ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহে বিব্রত প্রশাসন

ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটের মদদদাতা কে এই ফখর ও বাবু?

প্রকাশিত: ০৮:৩৮, ২৪ মার্চ ২০১৯

ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটের মদদদাতা কে এই ফখর ও বাবু?

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ ময়মনসিংহের ভূমি দস্যু সিন্ডিকেট ও তার সহযোগীদের বিভিন্ন ঝুট ঝামেলা থেকে রক্ষায় নানা কৌশলে সহায়তা দিচ্ছে ফখর উদ্দিন ও বাবু নামে দুই ব্যক্তিসহ একটি অসাধু চক্র। কথিত ক্ষমতাধর এই চক্রের মদদে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভূমিদস্যু ও তার সহযোগী সিন্ডিকেট। স্থানীয় প্রশাসনের নিষেধ উপেক্ষা করে ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটের একটি খাল ভরাট প্রকল্প বাস্তবায়ন ও নিজেদের স্থাপনায় অবৈধভাবে বিদ্যুত ব্যবহারসহ বিভিন্ন অপকর্ম ঢাকতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ফখর উদ্দিন ও বাবু বিভিন্ন দফতরে ফোন করে চাপ দিলে জানাজানি হয় সিন্ডিকেটকে মদদ দেয়ার বিষয়টি। অনিয়মকে জায়েজের অনৈতিক এসব ফোনে বিব্রত স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের একাধিক দফতরসহ ভুক্তভোগী মহলে প্রশ্ন উঠেছে কে এই ফখর উদ্দিন ও বাবু? কীসের স্বার্থে ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট ও তার সহযোগীদের নানা অপকর্মের সহায়তা করছে ফখর উদ্দিন ও বাবু-এই প্রশ্ন এখন জনমনে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির ড্রাইভার এমন পরিচয়ে ফখর উদ্দিন এবং গণভবন থেকে বলছি পরিচয়ে বাবু নামে দুই ব্যক্তিসহ একটি চক্র মোবাইল ফোনে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বিভিন্ন সময়ে ভূমি দস্যু সিন্ডিকেট ও তার সহযোগীদের পক্ষ নিয়ে অনৈতিক তদবির করে আসছে। ফোনে এ সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কথা মতো কাজ করার জন্য প্রচ্ছন্নভাবে হুমকিও দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ময়মনসিংহ সদরের চরঈশ্বরদিয়া খালপাড় এলাকার একটি দোকান থেকে অবৈধভাবে সংযোগ নিয়ে ভূমি দস্যুরা স্থাপনার পাম্পে বিদ্যুত ব্যবহার করে আসছিল। একই দোকান থেকে পাশের আরও দুইটি পাম্পে সংযোগ দেয়া হয়। মিটারের সিল ভেঙ্গে বাইপাস করে ৩টি পাম্পে অবৈধভাবে সংযোগ দিয়ে বিদ্যুত চুরি ও সরকারের রাজস্ব ক্ষতির অভিযোগ হাতেনাতে প্রমাণ পেয়ে গ্রাহক ভাসান মিয়ার মিটার ও তার জব্দ করে অফিসে নিয়ে আসে বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা। গত ১২ মার্চের এই ঘটনায় গণভবন থেকে বাবু বলছি এমন পরিচয় দিয়ে ০১৭৮৯৩৭৯৯৯৯ নম্বর মোবাইল ফোন থেকে গত ১৪ মার্চ পিডিবির স্থানীয় এক কর্মকর্তাকে কোন ধরনের ব্যবস্থা না নিতে চাপ দেয়া হয়। কিন্তু দিনে দুপুরে হাতেনাতে ধরা পড়ার এই ঘটনায় বাবুর চাপে পিডিবির স্থানীয় কর্মকর্তারা গ্রাহককে নামমাত্র জরিমানা করে ঘটনা ধামাচাপা দেয়। চরঈশ্বরদিয়া মৌজায় গৃহবধূ কমলজান বিবি তার একখ- জমি ভূমিদস্যু ও তার সহযোগীদের কাছে বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় অন্যত্র বিক্রির সময় ওই জমি রেজিস্ট্রি না করার জন্য ‘গণভবন থেকে বাবু বলছি’ পরিচয়ে সদর সাব রেজিস্ট্রারকে গত ৭ মার্চ ০১৭৮৯৩৭৯৯৯৯ নম্বর মোবাইল ফোন থেকে চাপ দেয়া হয়। কিন্তু কমল জান অনঢ় থাকায় রেজিস্ট্রার বাবুর অন্যায় আবদার না শুনে দলিল সম্পাদন করে দেন। স্থানীয় প্রশাসনের নিষেধ না মেনে মাটি ফেলে ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট ও তার সহযোগীরা খাল ভরাট করে প্রকল্প বাস্তবায়নে এলজিইডি সড়কের প্রায় অর্ধশত গাছ কেটে ফেলার ঘটনায় পুলিশ হস্তক্ষেপ করলে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির ড্রাইভার পরিচয়ে ফখর উদ্দিন স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ০১৭১২০৩৫২০৫ নম্বর মোবাইল থেকে প্রচ্ছন্নভাবে শাসানো হয়। ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট ও তার সহযোগীদের এই ধরনের একাধিক অপকর্মের ঘটনায় এর আগে আইন মন্ত্রণালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তার পরিচয়ে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা ও ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের চাপ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশ করা হবে না শর্তে স্থানীয় প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ভূমিদস্যু ও তার সহযোগীদের পক্ষে চাপ দিতেই চক্রটি ফোন করে হুমকি দিয়ে আসছে। এ নিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিব্রত। তবে প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা চক্রের সদস্য ফখর উদ্দিন ও বাবুর মোবাইল নম্বরসহ ফোনালাপ রেকর্ড করে রেখেছেন বলে জানান। এ নিয়ে জানতে চাইলে ফখর উদ্দিন ও বাবু জানান, আত্মীয়তার কারণে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে খাল ভরাট ও বিদ্যুত সংযোগের বিষয়টি দেখতে অনুরোধ করেছেন মাত্র। প্রশাসনের নিষেধ অমান্য করে ভূমিদস্যু ও তার সহযোগীদের খাল ভরাট এবং অবৈধভাবে সংযোগ নিয়ে বিদ্যুত চুরির পক্ষে ফোন করা কতটা নৈতিক জানতে চাইলে এটি তাদের জানা ছিল না বলে দাবি করেন ফখর উদ্দিন ও বাবু। দলিল সম্পাদন না করতে রেজিস্ট্রারকে ফোনে চাপ দেয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করেন বাবু। দলিল সম্পাদনের দিন গত ৭ মার্চ বাবু পরিচয়ে ২ বার ফোন করে রেজিস্ট্রি না করতে চাপ দেন বলে জানিয়েছেন সদর সাব রেজিস্ট্রার।
×