ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

২৮ বছর পর ডাকসু

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ২৪ মার্চ ২০১৯

২৮ বছর পর ডাকসু

বিশ^বিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ ২৮ বছরের অচলায়তন ভেঙ্গে আবার সচল হলো ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। শনিবার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রথম কার্যকরী সভার মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার এই ডাকসুর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এদিকে ডাকসুর প্রথম সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনাকে আজীবন সদস্য ঘোষণার প্রস্তাব করা হয়। তবে নির্বাচনে ‘বিতর্কিত’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এই প্রস্তাবে দ্বিমত পোষণ করেছেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূর। শনিবার বেলা এগারোটায় ডাকসু ভবনের দোতলায় প্রথম সভা হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও পদাধিকারবলে ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে নির্বাচিত ২৫ সদস্যের সবাই উপস্থিত ছিলেন। গত ১১ মার্চ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন হয়। অবশ্য নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে পাঁচটি প্যানেল সেদিনই নির্বাচন বর্জন করে। পরবর্তীতে তারা নির্বাচন বাতিল ও পুনর্তফসিলের দাবি জানায়। এর মধ্যেই প্রথম সভায় প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্য করার প্রস্তাব রাখেন আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাহরিমা তানজিনা অর্ণি। এ বিষয়ে ডাকসুতে ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে নির্বাচিত ২৩ প্রার্থী ও উপাচার্যের সম্মতি থাকলেও দ্বিমত জ্ঞাপন করেছেন কোটা সংস্কার প্যানেল থেকে নির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নূর ও সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসাইন। এছাড়া ‘গণরুম’, ‘গেস্টরুম সংস্কৃতি’ বন্ধ করা, ক্যাম্পাসে পরিবহন সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। ২৮ বছর পর ২৫ সদস্যের ডাকসুতে যারা এলেন- ভিপি ॥ নুরুল হক নূর, জিএস গোলাম রাব্বানী, এজিএস সাদ্দাম হোসেন, স্বাধীনতা সম্পাদক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক লিপি আক্তার, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাহরিমা তানজিনা অর্নি, সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়ন, সংস্কৃতি সম্পাদক আসিফ তালুকদার, ক্রীড়া সম্পাদক শাকিল আহমেদ তানভীর, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক শামস ই নোমান, সমাজসেবা সম্পাদক আক্তার হোসেন। সদস্য হিসেবে আছেন যোশীয় সাংমা চিবল, রকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য, তানভীর হাসান সৈকত, তিলোত্তমা শিকদার, নিপু ইসলাম তন্বী, রাইসা নাসের, সাবরিনা ইতি, রাকিবুল হাসান রাকিব, নজরুল ইসলাম, ফরিদা পারভীন, মাহমুদুল হাসান, সাইফুল ইসলাম রাসেল, রফিকুল ইসলাম সবুজ। সভা শেষে সাংবাদিকদের উপাচার্য বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাকসু নির্বাচন আয়োজন বিষয়ে যে উৎসাহ, সহযোগিতা ও আশ্বাস আমাদের দিয়েছেন, তার ফলে আমরা এই নির্বাচন আয়োজনে আত্মপ্রত্যয়ী হয়েছি, নিজেদের অত্যন্ত শক্তিশালী অনুভব করেছি। সেজন্য ডাকসুর কার্যকরী পরিষদের সবাই সহমত জ্ঞাপন করেছেন যে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ডাকসুর আজীবন সদস্য পদ দেব। সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে গঠনতন্ত্রে কি রয়েছে তা দেখে পরবর্তী সভায় এই মহৎ কাজটি করব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজীবন সদস্য পদ দেয়ার বিষয়ে ভিপি নূর বলেন, এটি নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোন সমাধান আসেনি। নির্বাচনটাই যেহেতু এখন প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত রয়ে গেছে, সেই জায়গায় প্রধানমন্ত্রীকে সদস্যপদ ঘোষণা করা উচিত বলে মনে করি না। তিনি অত্যন্ত সম্মানিত এক ব্যক্তি। তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী। তাই এখানে ডাকসুর আজীবন সদস্য পদ দেয়া তার জন্য বড় কিছু নয়। যেহেতু এই নির্বাচন নিয়েই একটি বিতর্কিত অবস্থান রয়েছে, এদিকে দায়িত্ব নিচ্ছি, অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা পুনর্নির্বাচনের দাবিতে মিছিল করছে। ডাকসুর ভিপি হিসেবে শুরু থেকেই তাদের সমর্থন জানিয়ে আসছি, আজকের সভাতেও ডাকসুর সভাপতি উপাচার্য স্যারকে বলেছি। প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্য ঘোষণায় আপত্তি কোথায়-জানতে চাইলে ভিপি নূর বলেন, যেহেতু এই নির্বাচনটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি, তাদের বড় একটি অংশ এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এমন বিতর্কিত নির্বাচনে আমরা চাই না প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্য ঘোষণা করা হোক। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ভিপি বলেন, পুনর্নির্বাচনের দাবিসহ শিক্ষার্থীদের যেসব যৌক্তিক আন্দোলন রয়েছে, সেগুলো আদায় করার জন্যই আমি দায়িত্ব নিয়েছি। আমি কিন্তু বলিনি, আমি পুনর্নির্বাচন চাই না। পুনর্নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত যেহেতু ডাকসু কার্যকর থাকবে, সেহেতু যেখান থেকে শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে কথা বলা যাবে, সেখান থেকে আমি কথা বলব। সে জন্যই আমি দায়িত্ব নিয়েছি। ডাকসুর বিপুল কর্মযজ্ঞ সম্পাদনে সহযোগিতার জন্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের ধন্যবাদ জানান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। সভার সার্বিক বিষয়ে তিনি বলেন, অত্যন্ত বন্ধুসুলভ আচরণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তারা আলোচনা করেছে। বৈঠকে যেসব বক্তব্য শুনলাম, সেগুলো এতই আশাপ্রদ এবং তাদের যে মূল্যবোধ, সেগুলো নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। সম্পাদকীয় পদগুলোতে যারা রয়েছেন তাদের সাধারণ সম্পাদকের (জিএস) সঙ্গে সমন্বয় করে নিজেদের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। জিএস গোলাম রাব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, আজকের সভার শুরুতে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব শহীদ, জেলহত্যার শিকার জাতীয় চার নেতা, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের শহীদসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়েছে। এরপর ডাকসুর সভাপতি উপাচার্যের কাছ থেকে নির্বাচিত ব্যক্তিরা দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। ডাকসুর অভিষেক অনুষ্ঠানের বিষয়ে একটি সম্মিলিত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর জন্য দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগবে যেখানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্য ঘোষণার বিষয়ে গোলাম রাব্বানী বলেন, আজকের সভায় আমাদের প্রথম প্রস্তাব ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মান জানিয়ে আজীবন সদস্য পদ দেয়া। ইতোপূর্বে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এই সদস্য পদ দেয়া হয়েছিল। ডাকসুর ২৫ জনের মধ্যে ২৩ জন সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্য পদ দেয়ার বিষয়টি সমর্থন করেছেন। একমাত্র ভিপিই দ্বিমত পোষণ করেছেন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। এটি সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে (২৩:২ অনুপাতে) গৃহীত হয়ে গেছে, এটি মীমাংসিত ইস্যু। সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনও প্রস্তাবের পক্ষে ছিল। কেন্দ্রীয় ডাকসুর সর্বসম্মত সমর্থনের পর আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আজীবন সদস্য পদ দেয়ার বিষয়ে উপাচার্যের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের সংসদের সভাপতি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। যেহেতু অনুপাত আমাদের পক্ষে, আশা করি ইতিবাচক ফলাফল পাব। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রিক্সা ও সাইকেলের জন্য একটি আলাদা লেন এবং ক্যাম্পাসে রিক্সা ভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। এ বিষয়ে ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, বিভিন্ন আবাসিক এলাকার মতো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তিন থেকে সাড়ে তিন শ’ রিক্সাকে প্রাথমিকভাবে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হবে এবং নির্দিষ্ট পোশাক দেয়া হবে। এছাড়া পরবর্তী সভায় আমরা ক্যাম্পাসে গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রণয়ন করব। ডাকসুর বর্ণাঢ্য অভিষেক অনুষ্ঠানের ঘোষণা ॥ প্রায় তিন দশক পর সচল হওয়া ডাকসু ও হল সংসদের অভিষেক স্মরণীয় করে রাখতে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন হতে যাচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অতিথি করা হবে। শনিবার দুপুরে ডাকসু ভবনে কার্যকর পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বড় আকারের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তারা করবে। সেখানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি অথবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে থাকবেন। একটি বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান আয়োজন করার দায়িত্ব দিয়েছি কার্যকর পরিষদকে। ভিপি, জিএস, এজিএসকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তারা বিভিন্ন কমিটি করে আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এটি আমাদের বড় দাগের আজকের সিদ্ধান্ত। ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে আজ দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি। আমাদের সামগ্রিক সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা একটি অভিষেক অনুষ্ঠান করতে চাই। সেটা সম্ভবত দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগবে। সেখানে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সম্মানিত আচার্যকে দাওয়াত করা হবে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ডাকসু নেতাদের শ্রদ্ধা ॥ ধানম-ি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন ডাকসু’র নির্বাচিত নেতারা। এ সময় ডাকসুর সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও উপস্থিত ছিলেন। বেলা আড়াইটার দিকে ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নূরের নেতৃত্বে ভিসি ও ডাকসু নেতারা একযোগে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। নেতারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের একটি বাসে ধানম-ি ৩২ নম্বরে যায়। শ্রদ্ধা জানানোর পর উপাচার্য চলে যান। এরপর একে একে শ্রদ্ধা জানান ডাকসুর নেতৃবৃন্দ। নির্বাচনকে বৈধতাদানকারীদের লালকার্ড প্রদর্শন ॥ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করেেেছ কয়েকটি ছাত্রসংগঠন। ডাকসুর প্রথম কার্যকরী সভায় যারা যোগ দিয়েছেন তারা ‘অবৈধ ডাকসু নির্বাচনকে বৈধতা দিয়েছেন’ উল্লেখ করে তাদের লালকার্ড দেখিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। সকালে ঢাবির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ লালকার্ড প্রদর্শন কর্মসূচী পালন করা হয়। ছাত্র ইউনিয়ন জানিয়েছে, পুনরায় ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আগামী ২৮ মার্চ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের কাছে স্মারকলিপি দেবে তারা। লালকার্ড প্রদর্শনের সময় ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা বলেন, ডাকসু নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে। কিন্তু এ নিয়মকে যারা বৈধতা দিয়েছে আমরা তাদের লালকার্ড প্রদর্শন করে প্রত্যাখ্যান করছি। দায়িত্বগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তাদের প্রতি ছাত্রসমাজ ক্ষুব্ধ। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জিএম জিলানী শুভ, সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক রাজিব দাস প্রমুখ। এদিকে পুনরায় নির্বাচনের ঘোষণার দাবিতে ডাকসু ভবনের সামনে মানববন্ধন করেছে ছাত্র ফেডারেশন। একই দাবিতে কালোব্যাজ ধারণ করে মৌন মিছিল করেছে ছাত্রদল। বেলা বারোটার দিকে পৃথকভাবে কর্মসূচী পালন করে তারা। ছাত্র ফেডারেশনের মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর। তিনি একটি প্ল্যাকার্ড বহন করেন যাতে লেখা কারচুপির নির্বাচন, মানি না মানব না। মানববন্ধনে অন্যদের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ পদে ছাত্র প্রতিনিধি চাই, অভিষেক অনুষ্ঠান থেকে পুনর্নিবাচনের ঘোষণা আসুক, ভোট কারচুপির প্রশাসন চাই না। কালোব্যাজ ধারণ করে মৌন মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের প্যানেল থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করা মোস্তাফিজুর রহমান, জিএস পদে নির্বাচন করা আনিসুর রহমান খন্দকার, ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকীসহ দলের শতাধিক নেতাকর্মী। স্বেচ্ছা-পর্যবেক্ষকদের শাস্তি চাওয়ায় ৫০ শিক্ষকের প্রতিবাদ ॥ ১১ মার্চ নির্বাচনের দিন স্বেচ্ছাপর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্বপালনকারী ৮ শিক্ষকের শাস্তি চাওয়ায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশত শিক্ষক। বিবৃতিতে ২৩ ওই ৫০ জন শিক্ষক ঢাবির প্রভোস্ট কমিটির দাবিকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে এর ধিক্কার জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফার পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নির্বাচনের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আটজন শিক্ষক স্বেচ্ছায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন। তারা নির্বাচনী যে পরিস্থিতি দেখেছেন তার নির্মোহ বর্ণনা জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন। তাদের অভিনন্দন জানাই, প্রতিকূলতার মধ্যেও সততা নিয়ে মেরুদ- সোজা করে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম যে, গত ১৮ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে স্বেচ্ছাসেবী পর্যবেক্ষক দল নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক অননুমোদিতভাবে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নির্বাচন সম্পর্কে অসত্য তথ্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণœœ করার অপরাধে আট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপাচার্যের কাছে দাবি জানায় প্রভোস্ট কমিটি। গণমাধ্যমে এ সংবাদ পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমরা মর্মাহত।
×