ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এক ঘণ্টায় হাজারেরও বেশি মামলা নিষ্পত্তি- একটি মডেল

প্রকাশিত: ১১:০০, ২৪ মার্চ ২০১৯

এক ঘণ্টায় হাজারেরও বেশি মামলা নিষ্পত্তি- একটি মডেল

বিকাশ দত্ত ॥ হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে এক ঘণ্টায় এক হাজারেরও বেশি মামলা নিষ্পত্তি হওয়া একটি মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অন্যান্য বেঞ্চ এটি অনুসরণ করলে অল্পদিনের মধ্যেই উচ্চ আদালতে প্রায় ৫ লাখ মামলা নিষ্পত্তি হবে। কমবে মামলা জট, বিচারপ্রার্থীরা উপকৃত হবে। বিচারবিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। মামলা জট নিরসনে একে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন দেশের বিশিষ্ট আইনজীবীরা। উল্লেখ্য, ১৪ মার্চ বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ এক হাজার ১২ মামলার নিষ্পত্তি করেছেন। এর ফলে আইনজীবী থেকে শুরু করে বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে হাইকোর্টের কোন বেঞ্চ এত সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি করেনি। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এর আগে মামলা জট নিসরনে পুরনো মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেন। এরই অংশ হিসেবে হাইকোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চকে পুরনো মামলা বিচারের জন্য দায়িত্ব দেন। এ বিষয়ে হাইকোর্টের ১৪টি বেঞ্চকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ওই নির্দেশের পর গত দুই মাসে সংশ্লিষ্ট ১৪টি হাইকোর্ট বেঞ্চে ৪৯৮ ধারায় সৃষ্ট ফৌজদারি বিবিধ মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে গত ৭ মার্চ ছয়শ’ বিরানব্বইটি বিবিধ মামলা তালিকাভুক্ত হয়। ’১৪ সালে সৃষ্ট এসব মামলায় ওদিন শুনানি হয়। বিপুলসংখ্যক মামলা শুনানি শেষে সব মামলাই নিষ্পত্তি করে আদেশ দেয় বেঞ্চ। এরই ধারাবাহিকতায় ১৪ মার্চ মামলা নিষ্পত্তিতে আবারও ইতিহাস গড়লেন এই হাইকোর্ট বেঞ্চ। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এম ইনায়েতুর রহিম ও মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে ১৪ মার্চ মামলা ছিল এক হাজার ১৬। এর মধ্যে এক হাজার ১২টি মামলা নিষ্পত্তি করেছে এ আদালত। যদিও বর্তমানে সুপ্রীমকোর্টে অবকাশ চলছে। ৩১ মার্চ সুপ্রীমকোর্ট খুলবে। এর মধ্যে হয় তো কোন কোন বেঞ্চ পরিবর্তনও হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ জনকণ্ঠকে বলেন, বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ, বিচারপতি এক ঘণ্টায় এক হাজার ১২ মামলার বিচরিক কাজ শেষ করেছেন এটা আসলেই প্রশংসার দাবি রাখে। এটি নজিরবিহীন ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ। খামাখা মামলাগুলো ফেলে রেখে লাভ কী? এতে মামলার সংখ্যা বাড়ছে, মামলা জট হচ্ছে। আশা করি এই বেঞ্চের মতো অন্য বেঞ্চেও অন্যান্য বিচারপতিও এ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবে। ইতোমধ্যে অনেকে শুরু করেছেন। অনেক সময় দেখা যায় মামলা নিষ্পত্তিতে তেমন ইন্টারেস্ট নেই। এসব মামলা ঝুলিয়ে রেখে লাভ নেই। দ্রুত নিষ্পত্তি করলে মামলা জট কমে যাবে। বিচারপ্রার্থীরা উপকৃত হবে। বিচারবিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। ১৪ মার্চ বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ এক ঘণ্টায় এক হাজারেরও বেশি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। এগুলো ছিল জামিন সংক্রান্ত পুরনো মামলা। ২০১৪, ১৫ ও ১৬ সালের এসব মামলার মধ্যে হাইকোর্ট রুল দেয়ার সময় অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছিল, এখনও বহাল আছে। সেগুলো রুল এ্যাবস্যলুটে (রুল নিশ্চিত) করা হয়েছে। যারা জামিনে নেই সেসব মামলা ডিসচার্জ করা হয়েছে। এর আগে সুপ্রীমকোর্ট বিশেষ করে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারায় জামিন আবেদন করে জামিন নেয়ার পর হাজার হাজার রুল বছরের পর বছর বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। এসব মামলা নিষ্পত্তির জন্য কয়েকটি বেঞ্চকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এসব বেঞ্চ প্রতি বৃহস্পতিবার জামিন সংক্রান্ত ২০১৪ সালের ফৌজদারি বিবিধ মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়। এ বিষয়ে ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহম্মেদ জনকণ্ঠকে বলেন, বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ এক ঘণ্টায় যে হাজারেরও বেশি রায় দিয়েছেন। তা নজিরবিহীন। একজন বিচারকের মধ্যে ডেডিকেশন থাকলেই কেবল এমন নজির স্থাপন করা সম্ভব। আদালত প্রতিটি মামলা শুনেছেন এবং আদেশ দিয়েছেন। এই সাফল্য উচ্চ আদালতে বিরাজমান মামলার জট নিরসনে বিরাট ভূমিকা রাখবে। তিনি আরও বলেন, আদালত সবগুলো মামলাতেই বাংলায় আদেশ দিয়েছেন। সব মামলায় ছিল জামিনের। এসব মামলাগুলোতে রুল দেয়া ছিল। যা নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। কিছু জামিন ডিসচার্জ হয়েছে। আর কিছু জামিন কনফার্ম হয়েছে। জামিনের শর্ত ভঙ্গ না করে জামিন দিয়েছেন। আমি আশা করি অন্যান্য আদালত এগুলো অনুসরণ করলে অল্পদিনের মধ্যে প্রায় ৫ লাখ মামলা নিষ্পত্তি হবে। বর্তমানে দেশের উচ্চ ও নিম্ন আদালতে সর্বমোট বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৫ লাখ ৬৯ হাজার ৭৫০। এর মধ্যে বিচারাধীন ফৌজদারি মামলার সংখ্যা ২০ লাখ ৪৮ হাজার ৬৭। ২৫ ফেব্রুয়ারি এক প্রশ্নের জবাবে সংসদে এ তথ্য জানান আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছে। বর্তমান সরকার মামলার জট কমানোকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত অধস্তন আদালতে মোট ৫৭১ সহকারী জজ নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং এরইমধ্যে সারাদেশে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা পদায়ন করা হয়েছে। এছাড়া ১২তম জুডিসিয়াল সার্ভিস নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে সহকারী জজ নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’ পাহাড় সম মামলা জটে একদিনে উচ্চ আদালতে এক ঘণ্টায় এক হাজারের বেশি মামলা নিষ্পত্তির বিষয়ে আইনজীবীরা শুভ লক্ষণ বলেই মনে করছেন। এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল জনকণ্ঠকে বলেন, এ উদ্যোগটি খুবই ভাল। এটিকে একটি মডেল হিসেবে ধরা যেতে পারে। অন্যান্য বেঞ্চ এটি অনুসরণ করলে মামলা জট নিরসনে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে। উনারা (বিচারপতিরা) বিচারের ব্যবস্থার যে জট কমানোর ক্ষেত্রে যে মোশনগুলো বিশেষ করে ফৌজদারি মোশনগুলো শুনানি করা হয়। রুল না দিয়ে সরাসারি নিষ্পত্তি করা গেলে আরও ভাল হতো। রুল দেয়ার পর দ্রুত নিষ্পত্তি করা হয় এটাও ভাল দিক। আমি আশা করব এ ধরনের সময়োপযোগী কাজ করছেন যা বিচারপ্রার্থীদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।
×