ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খসড়া রিপোর্ট তৈরি ॥ বাস্তবায়নে টাস্কফোর্স গঠন করা হচ্ছে

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ১১১ দফা সুপারিশ

প্রকাশিত: ১১:০২, ২৪ মার্চ ২০১৯

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ১১১ দফা সুপারিশ

রাজন ভট্টাচার্য ॥ ‘সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত কমিটি চার স্তরে পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ তুলে ধরে একটি খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করেছে। আশু, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা স্থান পেয়েছে এই প্রতিবেদনে। যেখানে প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে ‘সড়ক নিরাপত্তা’ কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া ওই খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস ও শৃঙ্খলা বৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। ২০২৪ সালের মধ্যে সবকিছু বাস্তবায়নের সময়সীমা উল্লেখ করে ১১১ দফা সুপারিশসহ এই প্রতিবেদন সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হবে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে। তবে খসড়া চূড়ান্ত করার আগে কিছু পরিবর্তন আনারও ইঙ্গিত দিয়েছেন কমিটির সদস্যরা। অন্যদিকে প্রায় ১৯ লাখ অবৈধ চালকদের বৈধতা দেয়ার সুপারিশ থাকছে সুপারিশে। সেই সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তুলতে দেশব্যাপী কর্মসূচীও নেয়ার কথা জানিয়েছেন কমিটির সদস্যরা। আগামী এক এপ্রিল থেকে ঢাকা শহরে টিকেট পদ্ধতিতে বাস সার্ভিস চালুর কথাও জানান পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এবারের সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন মন্ত্রণালয় বা মালিক সমিতির হাতে থাকছে না। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে পৃথক টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। যারা পর্যায়ক্রমে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। তাছাড়া বাস্তবায়ন কতটুকু হচ্ছে এর দেখভালের দায়িত্ব থাকবে টাস্কফোর্সের হাতে। সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান বলেছেন, আগামী ৪ এপ্রিলের আগেই এই সুপারিশমালা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হবে। পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ও দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়ন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তিনি বলেন, কমিটির সকল সদস্যের মতামতের প্রেক্ষিতে সুপারিশমালা তৈরি করা হয়েছে। যা দ্রুতই চূড়ান্ত হবে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আসবে বলেও মনে করেন এই শ্রমিক নেতা। গতবছর জুলাই মাসে জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় সারাদেশে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে। নজিরবিহীন এই আন্দোলনে পরিবহন খাতের বিভিন্ন স্তরে বিশৃঙ্খলার বিষয়গুলো সামনে আসে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হস্তক্ষেপ করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। তিনি নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেন। যার একটি কার্যকর করতে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গঠিত কমিটি বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিলেও এখন সবই ভেস্তে গেছে। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পরিবহন মালিক, শ্রমিক, পুলিশ, গবেষক ও বিআরটিএসহ বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে ২২ সদস্যের এই কমিটি করা হয়। জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ২৬তম সভায় সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা আনয়ন এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে কমিটি গঠন হয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ কাউন্সিল সভায় সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে তখন তিনি বলেন, কমিটি ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেবে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এসব সুপারিশ একে একে বাস্তবায়ন করা হবে। একই সভায় সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাস্তবায়নে তিন সদস্যের আরেকটি কমিটি করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও রেলপথমন্ত্রীকে কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। এ কমিটিকেও ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ দফায় দফায় ট্রাফিক সপ্তাহ পালনসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মকা- চালালেও সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামেনি। গত ১৯ মার্চ রাজধানীর প্রগতি সরণিতে বাসচাপায় এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর আবারও রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা। দেখা যায় নিয়ম মেনে রাস্তা পার হলেও মেধাবী এই শিক্ষার্থীকে বাসচাপায় মরতে হয়েছে। অথচ সুপ্রভাত পরিবহনের চাপা দেয়া গাড়িটির রুট পারমিট ছিল না। তেমনি চালকের লাইসেন্সও ঠিক ছিল না। এই প্রেক্ষাপটে ফের দেশজুড়ে দাবি ওঠে নিরাপদ সড়কের। সুপারিশে যা থাকছে ॥ শাজাহান খানের কমিটি সুপারিশমালার যে খসড়া তৈরি করেছে, তাতে চালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, ২০২০ সালের মধ্যে এক হাজার প্রশিক্ষক তৈরি, সব ড্রাইভিং ¯ু‹লকে নিবন্ধনের আওতায় আনা, সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ, চালকের পোশাক, আট ঘণ্টা গাড়ি চালানোর পর চালক বদল, পাঁচ ঘণ্টা পর চালকের বিশ্রাম, ঢাকার কমলাপুরে ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো (আইসিডি) ও তেজগাঁওয়ে অবস্থিত কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদাম দ্রুত সময়ে ঢাকার বাইরে স্থানান্তর, জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি, ফুটপাথ পরিষ্কার রাখা, রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে গিয়ে পদক্ষেপ বাস্তবায়ন, কোম্পানির মাধ্যমে গাড়ি চালানো, মহাসড়কের দু’পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, সড়ক নিরাপত্তায় জোর দেয়া, সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন, দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া, প্রশিক্ষিত চালক তৈরি, নারী চালক তৈরি, সরকারী খরচে বিআরটিএকে গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষক তৈরির কার্যক্রম গ্রহণ, লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে দুই দিনের নবায়ন প্রশিক্ষণ, অবৈধ চালকদের শনাক্ত করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হালকা শ্রেণীর লাইসেন্স প্রদান, শিক্ষিত বেকারদের চালকের পেশায় আনতে উৎসাহিত করা, মোটরসাইকেল আরোহীদের মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার করা, চালকদের সচেতনতা বাড়ানোর মতো নানা বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অবিলম্বে সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালা জারি, সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি স্কুলের পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা, সড়ক উন্নয়নে নেয়া প্রকল্পের ৫ শতাংশ অর্থ সড়ক নিরাপত্তার জন্য রাখা, জেলা ও উপজেলা সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ক্ষমতা বৃদ্ধি, ইন্সট্রাক্টর নিয়োগে সরকারী বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্তদের অগ্রাধিকার দেয়া, ট্রাফিক পুলিশের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ, রাজধানী থেকে রিক্সা তুলে দেয়া, রাইড শেয়ারিং কোম্পানির জন্য গাড়ির সংখ্যা নির্ধারণ করা, বহুতল ভবনে আন্ডারগ্রাউন্ডে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, পার্কিংয়ের স্থান নির্ধারণ, দেশের সব সড়কে সড়ক বাতি ও সাইনের ব্যবস্থা, হাটবাজার অপসারণের লক্ষ্যে ইজারা বাতিল, সাইকেলের জন্য লেন করা, ঢাকার চারদিকে নদীর নাব্যসঙ্কট দূর করে তীর বরাবর রিং রোড নির্মাণ, লাইসেন্সধারী চালকদের মোটরসাইকেল বিক্রি, দৈনিক ভিত্তিতে চালক নিয়োগ না দেয়া, চালকদের সুনির্দিষ্ট মজুরি নির্ধারণ, সড়কে প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন ও সড়কে ডিজিটাল মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা। আশু করণীয় সুপারিশ বাস্তবায়ন ডিসেম্বরের মধ্যে ॥ কমিটির ১১১ সুপারিশের বেশিরভাগই এর আগে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কমিটির প্রতিবেদনে এসেছে। সড়কে নিরাপত্তা চেয়ে রাস্তায় নামা শিক্ষার্থীদের দাবির কিছু বিষয়ও এর মধ্যে রয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের এই কমিটি মনে করছে, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়নে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো এর বাস্তবায়নের সময়সীমা। এ কারণে কমিটির সুপারিশগুলোকে বাস্তবায়নে মেয়াদের ভিত্তিতে চার ভাগে সাজানো হয়েছে প্রতিবেদনে। এর মধ্যে আশু করণীয় সুপারিশগুলো এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে, স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনাগুলো ২০২১ সালের মধ্যে এবং দীর্ঘমেয়াদী সুপারিশগুলো ২০২৪ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করা উচিত বলে কমিটি মনে করছে। আর একটি ভাগের সুপারিশগুলো চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে থাকবে। খসড়ায় বলা হয়েছে, দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে, সব সংস্থা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবে এবং সরকার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে ধরে নিয়েই এ সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে সুপারিশ বাস্তবায়নে বেশি সময় লাগবে, আর এ কারণেই সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকারের প্রসঙ্গ টেনেছে কমিটি। আট ঘণ্টার পর বিকল্প চালক ॥ কমিটি বলছে, চলন্ত অবস্থায় চালকের মোবাইলে কথা বলা বা হেডফোনে গান শোনা বন্ধে কঠোর হতে হবে। গণপরিবহনের নির্ধারিত জায়গায় চালক ও হেলপারের ছবি, লাইসেন্স নম্বর ও ফোন নম্বর দেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে। খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূরপাল্লার বাস ও ট্রাকে প্রতি ৫ ঘণ্টা পর চালকদের বিশ্রাম এবং ৮ ঘণ্টা পর একজন বিকল্প চালকের ব্যবস্থা করতে হবে। দৈনিক ভিত্তিতে চালক নিয়োগ না দিয়ে চালকদের সুনির্দিষ্ট মজুরি নির্ধারণের সুপারিশ এসেছে প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, প্রয়োজনে চালকদের জন্য নির্ধারিত পোশাকের ব্যবস্থা করার কথা ভাবতে হবে। রুট পারমিট ছাড়া গাড়ি চলবে না ॥ রুট পারমিট ছাড়া যেসব গাড়ি ঢাকাসহ সারাদেশে চলছে সেগুলো বন্ধে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কমিটির পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হচ্ছে। অর্থাৎ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে তদন্তে যেন বেরিয়ে না আসে এই গাড়ির রুট পারমিট ছিল না। তাছাড়া রুট পারমিট ছাড়া রাস্তায় গাড়ি চলতে না দেয়ারও সুপারিশ থাকছে। এ বিষয়ে সরকারকে সর্বোচ্চ কঠোর হওয়ার পরামর্শ থাকছে প্রতিবেদনে। এক এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে টিকেট পদ্ধতি ॥ আগামী এক এপ্রিল থেকে রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে ওঠানামার চিত্র একেবারেই পাল্টে যাবে। ইতোমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে গঠিত কমিটি রাজধানীতে কাউন্টার সার্ভিস চালুর পরামর্শ দিয়েছে। দুর্ঘটনা রোধে আশু করণীয় হিসেবে আগামী এক এপ্রিল থেকে ঢাকায় টিকেট সিস্টেম চালুর কথা জানিয়েছেন কমিটির সদস্যরা। তারা বলছেন, কাউন্টার সার্ভিস শুরু হলে যেখানে ইচ্ছা যাত্রী ওঠানামা সম্ভব হবে না। লাইসেন্স ছাড়া চালকদের বৈধতা দেয়া হবে ॥ দেশে রেজিস্ট্রেশনকৃত পরিবহনের সংখ্যা ৩৮ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি। বিআরটিএ বলছে, তালিকাভুক্ত চালকের সংখ্যা ২৮ লাখ। এর মধ্যে এক লাইসেন্স নিয়ে একই ব্যক্তি অন্য যানবাহনও চালান। এই হিসাব বাদ দিলে দেশে বর্তমানে বৈধ চালকের সংখ্যা ২০ লাখ। প্রায় ১৯ লাখ গাড়ি চলছে অবৈধ চালক দিয়ে। এর বাইরে অনিবন্ধিত পরিবহন তো রয়েছেই। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে গঠিত কমিটি বলছে, যারা লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাচ্ছেন তাদের সচেতন করার পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে বিআরটিএর পক্ষ থেকে লাইসেন্স দেয়ার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। রোড সেফটি অথরিটি ॥ সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে রোড সেফটি অথরিটি গঠন করার সুপারিশ করা হয়েছে খসড়া প্রতিবেদনে। এই কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে বাস্তব পরিকল্পনা নেবে এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাজের তদারকি করবে। সড়ক, নৌ ও রেল এ তিনটি মাধ্যমের বহুমুখী সমন্বিত পরিবহন নীতিমালার পূর্ণ বাস্তবায়নের সুপারিশ এসেছে প্রতিবেদনে। চার ভাগে প্রস্তাব ॥ সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চার ভাগে ভাগ করে প্রস্তাব করা হচ্ছে। এরমধ্যে শর্ট, মিডিয়াম, লম্বা ও আশু করণীয় রয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী জনকণ্ঠকে বলেন, কমিটির সদস্যরা নানা দিক বিবেচনায় নিয়ে চার ধাপে বেশকিছু সুপারিশ সরকারের কাছে তুলে ধরবে। তাই চারটি ধাপে এসব সুপারিশ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। সচেতনতা ॥ কমিটির খসড়া প্রতিবেদনের প্রথম সুপারিশটি জনসচেতনতা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার ওপর। তাতে বলা হয়েছে, সচেতনতা বাড়াতে সড়কে আচরণবিধি ও সচেতনতামূলক নাটিকা গণমাধ্যমে বিনামূল্যে প্রচার বাধ্যতামূলক করতে হবে। এগুলো দিতে হবে বিজ্ঞাপন, বিলবোর্ড এবং বাসের টিকেটেও। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ট্রাফিক আইন ও সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে ধারণা দিতে প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্যক্রমে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নারী চালকদের অগ্রাধিকার ও প্রশিক্ষণ ॥ প্রশিক্ষিত লোক দিয়ে দক্ষ চালক তৈরির জন্য দেশের সব জেলায় মানসম্মত ড্রাইভিং স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে বলছে কমিটি। এ বিষয়টি বিআরটিএর উদ্যোগে বাস্তবায়নের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ড্রাইভিং স্কুল প্রতিষ্ঠায় বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে কম সুদে দীর্ঘমেয়াদী ব্যাংক ঋণ দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে খসড়া প্রতিবেদনে। নারী গাড়ি চালক ‘অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকি নেয়’- এমন পর্যবেক্ষণ দিয়ে এ পেশায় তাদের আলাদা সুযোগ দেয়া, চাকরিতে নারী চালকদের অগ্রাধিকার দেয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে। বেপরোয়া পথচারী রোধে ব্যবস্থা ॥ পথচারীদের বেপরোয়া মানসিকতার কারণেও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই দেশের সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা নিয়েও বেশকিছু সুপারিশ রয়েছে কমিটির খসড়া প্রতিবেদনে। শহরের ফুটপাথ দখলমুক্ত করা, যেসব জায়গায় ফুটপাথ নেই সেখানে ফুটপাথ নির্মাণ, স্কুল-কলেজ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সামনে উঁচু করে জেব্রাক্রসিং নির্মাণ এবং সড়ক বিভাজকে পথচারীদের জন্য প্রতিবন্ধকতা দেয়ার সুপারিশ রয়েছে সেখানে। যানবাহনের জন্য সুপারিশ ॥ মহাসড়কে নসিমন জাতীয় যানবাহন নিষিদ্ধ করা এবং সাইকেলের জন্য আলাদা লেন তৈরি করে দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে খসড়া প্রতিবেদনে। শহরের ভেতর চলাচলকারী যানবাহনের শৃঙ্খলা আনা এবং যানবাহনের ধরন কেমন হবে সে বিষয়েও কিছু প্রস্তাব রয়েছে। এর মধ্যে শহরে বাসের মধ্যে প্রতিযোগিতা দূর করতে ফ্র্যাঞ্চাইজি গঠন করার কথা বলা হয়েছে। গাড়িতে মোবাইল ট্র্যাকার স্থাপনেরও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
×