ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পূর্ববর্তী খবর পাঁচের পাতায়

সিরিয়া থেকে আইএস নির্মূল, খেলাফত বিলুপ্ত

প্রকাশিত: ১১:০২, ২৪ মার্চ ২০১৯

সিরিয়া থেকে আইএস নির্মূল, খেলাফত বিলুপ্ত

মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল আমিন ॥ সিরিয়ার সব জায়গা থেকে আইএস (ইসলামিক স্টেট) সম্পূর্ণ নির্মূল হয়েছে বলে দাবি করেছে হোয়াইট হাউস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ দাবির সপক্ষে সাংবাদিকদের সামনে প্রমাণও তুলে ধরেছেন। শুক্রবার ফ্লোরিডায় সাংবাদিকদের সামনে তিনি আগের এবং বর্তমানের দুটি মানচিত্র তুলে ধরেছেন। ওই দুটি মানচিত্রে দেখা গেছে, আগে সিরিয়াজুড়ে আইএসের আধিপত্য থাকলেও এখন তা একেবারেই নেই। খবর ওয়াশিংটন পোস্টের। ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, যদি আপনারা দেখেন- এই হলো আইএস। গতরাত পর্যন্ত তাদের অবস্থা ছিল এই। বর্তমানে আমাদের কাছে যা আছে তা হলো এটা। এর আগে বুধবারও এ ধরনের মানচিত্র দেখিয়েছিলেন ট্রাম্প। মানচিত্র নিয়ে ছবি তোলার পর ট্রাম্প মানচিত্র দুটি এক সাংবাদিকের হাতে তুলে দেন। এর পর বলেন, আপনারা এই মানচিত্র দুটি নিতে পারেন। অভিনন্দন, আপনারা এগুলো প্রচার করতে পারেন। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সিরিয়ায় আইএসের প্রাধান্য আগের চেয়ে কমলেও এখনও তারা আছে। পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন গুহায় লুকিয়ে আছে তারা। অবশ্য এরই মধ্যে ট্রাম্প আইএস সম্পূর্ণ নির্মূলের ঘোষণা দিয়েছেন। কুর্দী নেতৃত্বাধীন বাহিনীও শনিবার আইএসকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূলের ঘোষণা দেয়। সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে জিহাদীদের সর্বশেষ ঘাঁটি দখলে নেয়ার পর তাদের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা দেয়া হয়। কুর্দী বাহিনীর মুখপাত্র মোস্তফা বালি এক বিবৃতিতে বলেন, সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স (এসডিএফ) তথাকথিত খিলাফতের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘোষণা করেছে। জিহাদী গ্রুপ আইএসকে শতভাগ পরাস্ত করা হয়েছে। তিনি জানান, এসডিএফ বাগুজের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এটি ছিল জিহাদীদের সর্বশেষ ঘাঁটি। মার্কিন সমর্থিত কুর্দী-আরব জোটের যোদ্ধারা এই ঐতিহাসিক বিজয় উদযাপনে শনিবার সকালে বাগুজে তাদের হলুদ পতাকা উত্তোলন করে। কুর্দী নেতৃত্বাধীন বাহিনী শনিবার ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপের পাঁচ বছরের কথিত ‘খিলাফত’ সম্পূর্ণভাবে নির্মূলের ঘোষণা দেয়। সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে জিহাদীদের সর্বশেষ ঘাঁটি দখলে নেয়ার পর তাদের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা দেয়া হলো। যেভাবে উত্থান ॥ সিরিয়ায় চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়েছে জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। সেখানে আইএস নিয়ন্ত্রিত আর কোন অঞ্চল নেই। শনিবার এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স (এসডিএফ)। ইরাকেও এখন অনেকটাই দুর্বল ভয়াবহ জঙ্গী সংগঠনটি। অনেকের মনেই এখনও প্রশ্ন রয়েছে, কিভাবে এদের উত্থান হলো? আইএসের উত্থান মূলত ২০০৬ সালে। এর আগে ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার সময় ইরাকে আল কায়েদার একটি শাখা গঠিত হয়। ২০০৬ সালে সেই সংস্থাটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ইসলামিক স্টেট (আইএস)। সংগঠনটি ২০১১ সালে সিরিয়া সঙ্কটের সময় সেখানে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এর নেতৃত্ব দেন আইএসের তৎকালীন প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদী। ২০১৩ সালে আল কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে আইএস। পরে সংস্থাটির নাম নতুন করে রাখা হয় ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক এ্যান্ড লেভান্ট। ২০১৪ সালে ইরাকের ফালুজা এবং সিরিয়ার রাকা শহর দখল করার মধ্য দিয়ে হঠাৎ বড় ধরনের সাফল্য পায় ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক এ্যান্ড লেভান্ট। ওই বছর জুনে জঙ্গী সংগঠনটি ইরাকের মসুল এবং তিকরিত দখল করে নেয়। সেই বছর ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক এ্যান্ড লেভান্টের নাম আবার পরিবর্তন করে ইসলামিক স্টেট (আইএস) করেন সংগঠনটির প্রধান আবু বকর আল বাগদাদি। সেই সঙ্গে তিনি তথাকথিত খিলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণাও দেন। এরপর থেকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করে সংগঠনটি। ওই সময় ইরাকে হাজার হাজার ইয়াজিদী সম্প্রদায়ের মানুষকে জবাই করে হত্যা এবং ৭ সহস্রাধিক নারী ও কিশোরীকে যৌন দাসী বানায় জঙ্গী গোষ্ঠী আইএস। এছাড়া সিরিয়ার শেইতাত উপজাতির শত শত মানুষকে হত্যা করে তারা। আইএসের এমন নির্মমতা দেখে তখন নড়েচড়ে বসে পশ্চিমা দেশগুলো। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে একটি জোট গঠন করে আইএসের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে তুরস্ক সীমান্তবর্তী সিরিয়ার কোবানি থেকে জঙ্গীদের উচ্ছেদ করতে কুর্দী দল ওয়াইপিজিকে সমর্থন দেয় মার্কিন সরকার। ২০১৫ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে শার্লি হেবদো নামে একটি রম্য সাময়িকীর অফিসে হামলা চালায় আইএস। এ ঘটনার পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হামলা চালিয়ে দায় স্বীকার করে আইএস এবং এর অনুসারীরা। এরপর ২০১৬ সাল থেকেই পতন শুরু হয় আইএসের। ওই বছরের জুনে আইএসের প্রথম দখল করা ফালুজা পুনর্দখলে নেয় ইরাকী বাহিনী। একই বছরের আগস্টে মার্কিন সমর্থিত কুর্দী দল ওয়াইপিজে নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) বাহিনী সিরিয়ার মানবিজ দখলে নেয়।
×