ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী বাজেটে ঘোষণা দেবেন অর্থমন্ত্রী

প্রতি পরিবারে চাকরি ॥ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী

প্রকাশিত: ১১:০৮, ২৪ মার্চ ২০১৯

প্রতি পরিবারে চাকরি ॥ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী

এম শাহজাহান ॥ কর্মক্ষম বেকারদের কাজ দিতে প্রতিটি পরিবার থেকে একজনকে চাকরি দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় ব্যাপক কর্মসংস্থানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণায় চাকরি দেয়া এবং পাওয়ার প্রক্রিয়াটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যারা জড়িত তারাও ইতোমধ্যে নির্দেশনা পেয়ে এ সংক্রান্ত একটি গাইড লাইন তৈরির কাজ শুরু করেছেন। এই কর্মসূচী সফল করতে উপকারভোগীদের একটি স্বচ্ছ, পূর্ণাঙ্গ এবং কার্যকর অনলাইন ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। এই কর্মসূচীর মূল লক্ষ্যÑ রূপকল্প-২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্য নিরসন ও বেকারত্ব দূর করে ব্যাপকভিত্তিতে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় বর্তমান সরকারের ১৪৫টি কর্মসূচী রয়েছে। এসব কর্মসূচীর আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা ১ কোটি মানুষ। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৬৪ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা বাজেটের ১৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। বিপুল পরিমাণ এই টাকা খাদ্য নিরাপত্তা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচীতে ব্যয় করা হচ্ছে। অথচ উপকারভোগী অধিকাংশ পরিবারের মধ্যে কর্মক্ষম বেকার রয়েছেন। এসব বেকারকে চাকরি দিয়ে অর্থনীতির মূলস্রোতে নিয়ে আসা গেলে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি দেশে ব্যাপকহারে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রতি পরিবার থেকে একজনকে চাকরি দেয়ার কথা জানিয়েছিলেন। আর এবার বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু হলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কিছু কর্মসূচী গ্রহণ করে। দারিদ্র্য নিরসন ও এমডিজির লক্ষ্য অর্জনে এসব কর্মসূচী ব্যাপক সফলতা পেলে পরের বছরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন। সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় প্রতি অর্থবছরে জাতীয় বাজেটে এ খাতে বড় অঙ্কের বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। গত দশ বছর ধারাবাহিকভাবে এই কর্মসূচীর আওতা ও পরিধি বাড়ানো হয়েছে। দারিদ্র্য নিরসনে ব্যাপক সফলতা পাওয়ায় বিশ্বে এখন উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ। সরকারের পরবর্তী লক্ষ্য, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় ব্যাপকহারে কর্মসংস্থান ও বেকারদের চাকরির সুযোগ তৈরি করে দেয়া। এতে দেশের বেকার মানুষের সংখা যেমন হ্রাস পাবে, ঠিক তেমনি চাকরি পাওয়া পরিবারগুলোর জীবনযাত্রার মানও উন্নত হবে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি বাজেট সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে জনকণ্ঠকে জানান, দেশের প্রতিটি পরিবার থেকে একজনকে চাকরি দেয়া হবে। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সুসংহত ও আরও শক্তিশালী করা। এজন্য যেসব পরিবারে চাকরি করার মতো বেকার রয়েছে তাদের সরকারী কিংবা বেসরকারী খাতের যেকোন প্রকল্পে সুবিধামতো চাকরি দেয়া হবে। তিনি বলেন, একজন বেকারকে চাকরি দেয়া গেলে পুরো পরিবারের জীবনমান উন্নত হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে যারা রয়েছেন তাদের একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। জানা গেছে, একটি স্বচ্ছ, পূর্ণাঙ্গ এবং কার্যকর অনলাইন ডাটাবেজ তৈরিতে উপকারভোগীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনডিআই) ভেরিফিকেশন সাপেক্ষে প্রথমে একটি সুষ্ঠু তালিকা করা হবে। এর মাধ্যমে প্রকৃত উপকারভোগীদের সহায়তা প্রদানে স্বচ্ছতা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় সরকারের ৩৫ মন্ত্রণালয় ও সংস্থার অধীনে বর্তমান অসংখ্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর অধিকাংশ প্রকল্পই সমাজকল্যাণ, মহিলা ও শিশু, খাদ্য, ত্রাণ ও দুর্যোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করছে।
×