ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আল আহাদ নিয়ন

ইতিহাসের পাঁচটি বাজে মুদ্রাস্ফীতি

প্রকাশিত: ১২:১৫, ২৪ মার্চ ২০১৯

ইতিহাসের পাঁচটি বাজে মুদ্রাস্ফীতি

কেমন হতো যদি ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে গিয়ে শুধু পকেটটাই বাজার ভর্তি করা যেত? অথবা এক বস্তা টাকায় একটা রুটি পাওয়া যেত শুধু। এমনটা হয় যখন পণ্যের দামের চেয়ে টাকার মান কমে যায়। যাকে আমরা অর্থনীতির ভাষায় মুদ্রাস্ফীতি বলি। মুদ্রাস্ফীতি কখনও অকল্পনীয় মাত্রায় হয়। নানা কারণে অর্থনীতিতে করুণ মুদ্রাস্ফীতির দেখা দিতে পারে। যে কারণেই হোক না কেন তা কোন রাষ্ট্রের জন্যই সুখকর না। এরকম পাঁচটি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে আলোচনা করা হলো। হাঙ্গেরি, ১৯৪৬ ইতিহাসের পাতায় উল্লেখিত উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি বা সবচেয়ে বাজে মুদ্রাস্ফীতির যদি তালিকা করা হয় তবে যে কয়টি নাম উঠে আসে তাতে হাঙ্গেরির ১৯৪৫-৪৬ সালের মুদ্রাস্ফীতি সবার উপরে থাকবে। এ সময় মুদ্রার মান এত কমে গিয়েছিল যে সর্বোচ্চ টাকার নোট ছিল ১০০ কুইন্টিলিয়ন (১ কুইন্টিলিইয়ন = ১ এর পর ১৮টি ০)। পণ্যের দাম বাড়ত প্রায় প্রতি ১৫ ঘণ্টায় দ্বিগুণ হারে । এত কিছুর পেছনে ছিল মূলত বিশ্বযুদ্ধের ফলে ঘটা ক্ষয়ক্ষতি এবং যুদ্ধের ঋণ পরিশোধ। পরবর্তী সময়ে হাঙ্গেরীয় সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে নতুন মুদ্রা চালু করে এই মুদ্রাস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে আনে । জিম্বাবুইয়ে, ২০০৮ দ্বিতীয় স্থানে যে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি সেটা হলো জিম্বাবুইয়ের ২০০৭-০৮ সালের কথা। মূলত স্বাধীনতা লাভের পর থেকে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি থাকলেও ২০০৭ সালে এসে তা খুবই বাজে রূপ নেয়। এর পেছনে ছিল প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের ভূমি পুনর্বণ্টন নীতি। তিনি সাদা চামড়ার জিম্বাবুইয়ানদের থেকে জমি জোরপূর্বক কৃষ্ণাঙ্গ জিম্বাবুইয়ানদের প্রদান করেন। রাতারাতি এত মালিকানা পরিবর্তন দুর্যোগ ডেকে আনে। হঠাৎ করেই ফসলের উৎপাদন কমে যায়। যার ফলে পণ্যের মূল্য বেড়ে যায়। প্রায় ২৪ ঘণ্টায় পণ্যের মূল্য দ্বিগুণ হতে শুরু করে। মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়ায় ৯৮% এ। বাধ্য হয়ে জিম্বাবুইয়েন সরকার নিজস্ব নোটের বদলে ইউএস ডলারের ব্যবহার শুরু“করে। এ সময় লোকজন বার্টার ইকোনমিতে ফিরে যায়। যেমন, খাদ্যদ্রব্য বা কোন ফলমূলের পরিবর্তে কেউ একজন চুল কেটে নিল বা একটা ফসলের পরিবর্তে আরেকটা ফসল। যুগোস্লাভিয়া, ১৯৯৪ ১৯৯০ সালের সোভিয়েত ভাঙনের পর নতুন নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। রাষ্ট্রসমূহের পারস্পরিক অসহযোগিতায় যুগোস্লাভিয়া বিপাকে পড়ে। নতুন রাষ্ট্রের জন্মের পরও পুরনো যুগোস্লাভিয়ার বিশাল আমলাতান্ত্রিকতা, বিশাল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভরণপোষণও অনেক বড় একটা কারণ ছিল। এদিকে নতুন রাষ্ট্রের জন্মের ফলে অনেক উৎপাদন কমে যায় শিল্প কারখানাতে। ফলে পণ্যের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। এদিকে জনগণের পকেটে টাকা দেয়ার জন্য মাসিক প্রায় ৯০০০০০ পরিমাণ নোট ছাপাতে থাকে সরকার। যার ফলে টাকার মানও কমতে থাকে প্রতিনিয়ত। এমন একটা পর্যায়ে গিয়ে মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়ায় প্রায় ৩১৩ মিলিয়ন % এবং পণ্যের দাম প্রায় ৩৬ ঘণ্টায় দিগুণ হতে থাকে। জার্মানি, ১৯১৪ প্রথম বিশ্বযুদ্ধেব পরাজয়ের পর ভারসাই চুক্তি চাপিয়ে দেয়া হয় জার্মানির কাঁধে। চুক্তি তৈরিতে জার্মানির সঙ্গে কোন ধরনের আলোচনা করা হয়নি। জার্মান অর্থনীতিকে কাবু করতে ক্ষতিপূরণ দেয়ার শর্ত আরোপ হয় তাদের বিরুদ্ধে। হাজার কোটি ডলার দিতে হতো তাদের। এত পরিমাণ অর্থের জন্য জার্মানি বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করতে থাকে। ফলে ২৯৫০০% মুদ্রাস্ফীতি তৈরি হয়। প্রায় চার দিনে পণ্যের মূল্য দ্বিগুণ হওয়া শুরু করে। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, ডাক্তাররা তাদের সম্মানী টাকার বদলে ডিম কিংবা অন্যান্য খাদ্যদ্রবে নেয়া শুরু করেন। এমতাবস্থায় তখন হিটলার ক্ষমতা গ্রহণ করেন। হিটলারের ক্ষমতা গ্রহণের পর সময়ের সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতি কমে আসতে থাকে। গ্রীস, ১৯৪৪ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পরে গ্রীসের ওপর প্রায় ৪ লাখ সৈন্যের ভরণপোষণের ভার চাপিয়ে দেয়া হয়। শুরু হয় তাদের দুর্দিন। একদিকে যুদ্ধ ঋণ পরিশোধ, তার ওপর আবার সৈনিকদের ভরণপোষণ, এদিকে নতুন কর্মসংস্থানের ফলে কর্মীদের বেতন দিতে না পারার জন্য গ্রীস সরকার বিপুল পরিমাণে টাকা ছাপাতে শুরু করে। ফলাফল গিয়ে শেষ হয় মুদ্রাস্ফীতির উচ্চহারে। দিনে ১৮% হারে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয় যা ইতিহাসের বাজে মুদ্রাস্ফীতির ঘটনাগুলোর একটি । এবার বর্তমানে আসা যাক। ভেনিজুয়েলার মুদ্রাস্ফীতি এমন একটি পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে, মানুষ বাজারে যাচ্ছে বস্তাভরে টাকা নিয়ে অথচ ব্যাগই ভরছে না। একটু উদাহরণ দিলে পরিষ্কার হবে। ২ দশমিক ৪ কেজি ওজনের একটি মুরগির দাম ভেনিজুয়েলার মুদ্রায় এক কোটি ৪৬ লাখ বলিভার!! সূত্র : বিজনেস ইন্সাডার অবলম্বনে
×