ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘দেশে শ্বাসকষ্ট বা এ্যাজমা রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮০ লাখ’

প্রকাশিত: ০৭:০২, ২৪ মার্চ ২০১৯

‘দেশে শ্বাসকষ্ট বা এ্যাজমা রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮০ লাখ’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অপরিকল্পিত নগরায়ন, পরিবেশ দূষণকারী যান্ত্রিক যানবাহনের সংখ্যাবৃদ্ধি, শব্দদূষণ ও শিল্প-কারখানায় নির্গত ধোঁয়ার কারণে দেশে বক্ষব্যাধি ও হৃদরোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে শ্বাসকষ্ট বা এ্যাজমা রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮০ লাখ। প্রতি বছর যুক্ত হয় নতুন ৩ লাখ রোগী এবং বছরে মারা যায় প্রায় ৫০ হাজার রোগী। রবিবার সকালে রাজধানীর মহাখালীস্থ বিসিপিএস অডিটোরিয়ামে দি চেস্ট এন্ড হার্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা ও বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসব কথা বলেন। এসোসিয়েশেনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মির্জা মোহাম্মদ হিরণ এর সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের(বিএমএ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডা. মো. ইউনূস আলী সরকার, এমপি, বিএমএ’র সাবেক মহাসচিব ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ, দি চেস্ট এন্ড হার্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ সভাপতি ডা. বিশ্বাস আখতার হোসেন, মহাসচিব ডা. মো. আবু রায়হান প্রমুখ। বক্ষব্যাধি ও হৃদরোগের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, বক্ষব্যাধি ও হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। উপজেলা পর্যায়ে এই দু’টি রোগের পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। জন সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে এই দু’টি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। অধ্যাপক ডা. মির্জা মোহাম্মদ হিরণ বলেন, অব্যাহত বায়ু দূষণের ফলে এজমা, এলার্জি, শ্বাসনালী ও ফুসফুসে নিউমোনিয়া সংক্রমণ, সিওপিডি এবং ফুসফুসের ক্যান্সার ছাড়াও বিভিন্ন কার্ডিওভাসকুলার রোগ বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে ফুসফুসের যক্ষ্মা আমাদের বৃহত্তম স্বাস্থ্য সমস্যা। প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ মানুষ নতুনভাবে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয় এবং ৫০ হাজার লোক মৃত্যুবরণ করে। তবে জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কার্যক্রমের আওতায় বর্তমানে চিকিৎসা সাফল্যের হার ৯১ শতাংশ, রোগ নির্ণয়ের হার ৭৩ শতাংশ সন্তোষজনক। তিনি বলেন, প্রতিরোধযোগ্য সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলেও আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবে বক্ষব্যাধি বা হৃদরোগের মতো রোগসমূহকে কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে আমাদের দেশে চিকিৎসার সুযোগ বাড়িয়ে সকল রোগীর জন্য চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা অত্যন্ত দুরূহ। ফলে জনগণের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। দি চেস্ট এন্ড হার্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব ডা. মো. আবু রায়হান বলেন, বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে একজন ব্যক্তি যক্ষ্মার জীবাণু দ্বরা আক্রান্ত হয়। বর্তমানে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ জনগণ যক্ষ্মার জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত। তবে নিয়মিত পূর্ণ মেয়াদের চিকিৎসায় যক্ষ্মা সম্পূর্ণ ভাল হয়। তিন সপ্তাহের বেশি কাশি যক্ষ্মার প্রধান লক্ষণ। অবহেলা না করে কফ পরীক্ষা করাতে হবে। বিশেষজ্ঞরা জানান, যক্ষ্মা একটি সংক্রামক রোগ, যা মাইকোব্যাটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস নামক অতি সুক্ষ জীবাণুর মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। প্রধানত ফুসফুসই যক্ষ্মা জীবাণু দ্বারা সর্বাধক আক্রান্ত হয়। যক্ষ্মা জীবাণু দেহের অন্য অংশকেও আক্রান্ত করে যক্ষ্মা রোগ তৈরি করতে পারে। ফুসফুসের যক্ষ্মায় আক্রান্ত কফে জীবাণুযুক্ত রোগী যদি বিনা চিকিৎসায় থাকে, তবে বছরে প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন লোককে যক্ষ্মার জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত করে। জীবাণু দ্বারা সকল সংক্রমিত ব্যক্তিই যক্ষ্মা রোগে ভুগে না। যে সকল ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারাই প্রধানত যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়।তাই প্রতিটি রোগীর দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা শেষ করা জাতীয়, আঞ্চলিক ও বিশ্বের যক্ষ্মা প্রতিরোধের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়। বিশ্বে প্রতি বছর ৮.৮ মিলিয়নের বেশি লোক যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আর প্রতি বছর ১.৪ মিলিয়ন লোক প্রতি বছর যক্ষ্মায় মারা যায়। ২২টি দেশে বিশ্বের মোট যক্ষ্মা রোগীর শতকরা ৮০ ভাগ বাস করে। মোট যক্ষ্মা রোগীর শতকরা ৪০ ভাগ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে বাস করে।
×