ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শাহনাজ রহমতুল্লাহর হৃদয় ছোঁয়া গান

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ২৫ মার্চ ২০১৯

শাহনাজ রহমতুল্লাহর হৃদয় ছোঁয়া গান

গৌতম পান্ডে ॥ তার গানে শ্রোতারা কখনও সাগরের ঢেউ অথবা হয়ে যায় ফুলের রেণু আবার কখনও পাখির ডানার মতো পাখা মেলে উড়তে চায়। তার গায়কী শ্রোতার মনকে সিক্ত করে। কখনও যেন বৃষ্টি নামে! সেই গানের পাখি শাহনাজ রহমতুল্লাহর কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে গেল। পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিলেন কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ। আরও সাত-আট বছর আগেই গান গাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। এবার পৃথিবীকে জানিয়ে দিলেন বিদায়। বাংলা গান সমৃদ্ধ হয়েছে তার অনন্য গায়কীতে। দীর্ঘ ৫০ বছর গান করেছেন তিনি। কালজয়ী গানগুলোই তাকে চিরদিন শ্রোতাদের মনে বাঁচিয়ে রাখবে। বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় রয়েছে শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া গানই চারটি! এগুলো হচ্ছে ‘আবার তোরা মানুষ হ’ চলচ্চিত্রে খান আতাউর রহমানের কথা ও সুরে ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কথা ও আনোয়ার পারভেজের সুরে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’ ও ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল’। দেশাত্মবোধক গান গেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ। এ তালিকায় উল্লেখযোগ্য ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’, ‘আমার দেশের মাটির গন্ধে’, ‘আমায় যদি প্রশ্ন করে’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে আমায় বল’ প্রভৃতি। দেশীয় চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগে প্লেব্যাকে অপরিহার্য ছিলেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ। ‘অধিকার’ চলচ্চিত্রে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের কথা ও আলী হোসেনের সুরে তিনি গেয়েছিলেন ‘কোন লজ্জায় ফুল সুন্দর হলো’। ১৯৯০ সালে ‘ছুটির ফাঁদে’ চলচ্চিত্রের ‘সাগরের সৈকতে কে যেন ডাকে আয়’ গানটির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা গায়িকার সম্মাননা ওঠে তার হাতে। শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া কালজয়ী গানের তালিকায় রয়েছে ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’, ‘ফুলের কানে ভ্রমর এসে’ (পিচঢালা পথ), ‘ওই ঝিনুক ফোঁটা সাগর বেলায়’, ‘পারি না ভুলে যেতে’ (সাক্ষী), ‘যেভাবে বাঁচি বেঁচে তো আছি’, ‘আমি সাত সাগরের ওপার হতে’ (কত যে মিনতি), ‘শোনেন শোনেন জাঁহাপনা’ (সাত ভাই চম্পা), ‘কে যেন সোনার কাঠি ছোঁয়ায় প্রাণে’, ‘আমি যে কেবল বলে তুমি’ (আগন্তুক), ‘একটু সময় দিলে না হয়’ (সূর্য উঠার আগে), ‘স্বপ্নের চেয়ে সুন্দর কিছু নেই’, ‘আবার কখন কবে দেখা হবে’, ‘যদি চোখের দৃষ্টি দিয়ে চোখ বাঁধা যায়’, ‘তোমার আগুনে পোড়ানো এ দুটি চোখে’, ‘তুমি কি সেই তুমি’, ‘ও যার চোখ নাই’ (তাসের ঘর), ‘ঘুম ঘুম ঘুম চোখে’ (ঘুড্ডি), ‘আমি তো আমার গল্প বলেছি’, ‘বন্ধুরে তোর মন পাইলাম না’, ‘খোলা জানালায় চেয়ে দেখি তুমি আসছো’, ‘একটি কুসুম তুলে নিয়েছি’, ‘আমায় তুমি ডাক দিলে কে’, ‘ওই আকাশ ঘিরে সন্ধ্যা নামে’, ‘আমার ছোট্ট ভাইটি মায়ায় ভরা মুখটি’, ‘আষাঢ় শ্রাবণ এলে নেই তো সংশয়’, ‘বারোটি বছর পরে’, ‘আরও কিছু দাও না দুঃখ আমায়’, ‘আমি ওই মনে মন দিয়েছি যখন’, ‘আমার সাজানো বাগানের আঙিনায়’, ‘দিগন্ত জোড়া মাঠ’, ‘তোমার আলোর বৃন্তে’, ‘এই জীবনের মঞ্চে মোরা’ প্রভৃতি। এসব গানের মাঝেই বাঙালীর হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ।
×