ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুয়াশা বিন্দুর শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ‘প্রাণ-প্রতিমার রূপায়ণ’

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ২৫ মার্চ ২০১৯

  কুয়াশা বিন্দুর শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ‘প্রাণ-প্রতিমার রূপায়ণ’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর অদূরে গাজীপুরে স্থানীয় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নাটমন্দিরে শিল্পী কুয়াশা বিন্দুর (সুমন চন্দ্র দাস) ‘বঙ্গ’ শিরোনামে ৮ দিনব্যাপী একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী চলছে। গত ১৯ মার্চ এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। এ প্রদর্শনীতে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। প্রদর্শনীতে শিল্পীর মোট ৬৫টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। প্রদর্শনীতে প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। প্রদর্শনী চলবে আগামীকাল ২৬ মার্চ মঙ্গলবার পর্যন্ত। প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া শিল্পকর্মগুলো অনেকটাই ব্যতিক্রম। বিশেষ করে অসংখ্য কাঠের টুকরো পুড়িয়ে বঙ্গবন্ধু এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ বিভিন্ন মহান ব্যক্তির ভাস্কর্য এবং প্রতিকৃতি শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন শিল্পী কুয়াশা বিন্দু। যা দর্শনার্থীদের সহজেই আকৃষ্ট করেছে। প্রদর্শনীতে শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘৭ই মার্চের ভাষণ’, ‘বঙ্গবন্ধুর পরিবার’, ‘শেখ রাসেল’, ‘পল্লী কবি জসীম উদ্দীন’, ‘জীবনানন্দ দাস’, ‘জগদীশচন্দ্র বসু’, ‘শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন’, ‘এস এম সুলতান’, ‘নভেরা আহমেদ’, ‘প্রীতিলতা’, ‘মাস্টার দা সূর্য সেন’, বাংলার বাঘ ‘শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক’, নারী জাগরণের পথিকৃত ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত’, বিশ্বকবি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’, বাংলা দেশের জাতীয় কবি ‘কাজী নজরুল ইসলাম’, জাতীয় নেতা ‘তাজউদ্দীন আহমেদ’, শহীদ বুদ্ধিজীবী ‘শহীদুল্লাহ কায়সার’, ‘মাদার তেরেসা’, ‘শিল্পী শাহাবুদ্দিন’, ‘সাত বীরশ্রেষ্ঠ’, ভাষা শহীদ, জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতি ও শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। প্রদর্শনী প্রসঙ্গে শিল্পী কুয়াশা বিন্দু বলেন, দীর্ঘায়ু জীবন চাই না, অল্প আয়ু বিশুদ্ধতা চাই, উচ্চতা চাই। কিছু একটা করার তাগিদ, প্রতিক্ষণ। আমার শিল্পকর্ম তৈরির নেপথ্যে উৎসাহ দিয়েছেন মেজর মঈনুল হাসান ভাই, টাইগার নাজির ভাই, ভাস্কর সামিমা হক, সাজু আহমেদ, নুর-ই-আলম সিদ্দিকী, অমিত কোচসহ আরও অনেকেই। আমার এ প্রদর্শনীর পৃষ্ঠপোষক গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। আমার এ প্রচেষ্টা শুধু বাংলাদেশ নয়, ছড়িয়ে পড়বে পৃথিবীজুড়ে। দেখাব সৃষ্টি, গুণ, চর্চা। শিল্পকর্মে, দুনিয়া দেখবে প্রিয় বাংলার রূপ। সেটাই আমার স্বার্থকতা। শিল্পী কুয়াশা বিন্দু ১৯৮৪ সালে গাজীপুরের বাড়ীয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সরকারী কর্মকর্তা পিতা অতিন্দ্র চন্দ্র দাস, গৃহিণী মাতা প্রমীলা দাসের দ্বিতীয় সন্তান। গ্রামের চারপাশের মানুষদের স্বভাব, জীবনযাপন নিয়ে লিখতেন ছোট গল্প (যা পরবর্তীতে ছোট গল্প বই রূপে এই পর্যন্ত নয়টি বই বেরিয়েছে)। তৎকালীন চিত্রশিল্পী মতিলাল বাবুর নাতি, তাই শিল্প সত্তাটা শিল্পীর জন্মগত অনুভূতি, ধ্বনি। খবরের কাগজ, পাঠ্যবইয়ের ড্রইং দেখে শৈশব মনে অনুপ্রেরণা জাগিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প বিভাগ থেকে ২০১৩ সালে এমএফএ পাশ করেন। প্রায় ২৫-২৬টি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। প্রদর্শনী প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, শিল্পী কুয়াশা বিন্দু কিছুটা অন্তর্মুখী এবং আত্ম প্রচারণায় বিমুখ। সূক্ষ্ম জীবনবোধ ও উপলদ্ধির কারণে সমাজ সংসারের বিভিন্ন অসংগতি বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে তার শিল্পকর্মে। তাইতো প্রথাগত পাঠক্রমের বেড়াজাল থেকে সর্বদা নিজেকে মুক্ত করে সমাজ সচেতন ও সংবেদনশীল শিল্পচর্চার প্রতি আগ্রহী হয়েছে। মাধ্যম হিসেবে কাঠের টুকরোকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কাঠের বিটকে ছোট ছোট টুকরো করে আগুনে পুড়িয়ে রঙের বৈচিত্র্যতা এনে দৃশ্যপটে ফুটিয়ে তুলেছে বিভিন্ন মনীষীর অবয়বকে। মোজাইকের মাধ্যমে দেয়াল চিত্র রচনার প্রচলিত ধারণাকে কাজে লাগিয়ে কাঠের কিউব ব্যবহার করে শিল্প নির্মাণ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এবং শিল্পীসত্তা দেশ-কাল-পাত্রের সীমা অতিক্রম করে কালজয়ী হোক। মুইনুদ্দীন খালেদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাণ-প্রতিমা হিসেবে বিরাজ করেছেন। এই প্রাণ-প্রতিমা বা হৃদয়নিধিকে কেন্দ্রে রেখে নবীন চিত্রকর কুয়াশা বিন্দু আরও অনেক ব্যক্তিত্বের প্রতিকৃতির সমন্বয়ে স্বদেশ বাংলাদেশকে ব্যাপ্তভাবে পাঠ করেছে। বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবারের সদস্য, চার নেতার মুখ, পাশাপাশি বাংলাদেশের ইতিহাস, রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্যসহ বিদ্যাভুবনের আরও অনেকের অবয়ব রচনা করেছেন কুয়াশা বিন্দু। এই তরুণ শিল্পীর শিল্পমাধ্যম কাঠ। কাঠের টুকরো ছোট ছোট চোখুপির মতো জুড়ে তিনি তৈরি করেছেন তার ছবির ভিত। আলো-ছায়ার দোলাচলে অথবা আলো-অন্ধকারের বিশেষ বুনটে তিনি পরিস্ফুট করেছেন ইমেজ। কাঠকে তিনি পুড়িয়ে অংশত কালচে করেছেন। দগ্ধ কাঠে বিদগ্ধ ব্যক্তিত্বদের অবয়ব বিশেষ প্রকাশভঙ্গি লাভ করেছে। কাঠের লালচে, হলুদাভ ও বাদামি দেহ এবং এই দেহের মধ্যে মিহি ও পুরু আঁশের টেক্সচার আর আগুন-পোড়া কাঠের কালো অংশ। এসব শিল্পগত উপাচারে কুয়াশার শিল্পে ব্যক্তিত্বের মহিমা পরিস্ফুট হয়েছে। কুয়াশার শিল্পময় এই বন্দনার বড় অংশ জুড়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু। আছেন বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। সর্বৎসহা স্ত্রী ও আদরের পুত্র-কন্যাদের নিয়ে সাধারণ বাঙালীর যে জীবন জাতির পিতা যাপন করে গেছেন সেই মমতার সংসারকে শৈল্পিক ভাষ্য দিয়েছেন এই তরুণ শিল্পী। কুয়াশা বিন্দুর এই নক্ষত্রলোকে সবচেয়ে উজ্জ্বল জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। নক্ষত্র-ম-লীর কেন্দ্রে তিনি বিরাজ করেন, এই সত্য সমুচ্চারিত এই তরুণের শৈল্পিক আয়োজন।
×