ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে এক মাস পর তথ্য ফাঁস

হুন্ডির ২৪ লাখ টাকা ভাগবাটোয়ারা

প্রকাশিত: ০৯:১২, ২৫ মার্চ ২০১৯

হুন্ডির ২৪ লাখ টাকা ভাগবাটোয়ারা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের তিন এসআইর বিরুদ্ধে হুন্ডির মাধ্যমে আসা ২৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। খাতুনগঞ্জের হুন্ডি ব্যবসায়ী খ্যাত প্রবাসী জাফার আহম্মদের দোকান থেকে ব্যাগভর্তি এই টাকা ও কয়েকটি চেক বই হাতিয়ে নিয়েছে ডিবি পুলিশ। সাইনবোর্ডবিহীন লাকি ড্রাই ফিশ নামক দোকানের আড়ালে হুন্ডি ব্যবসা চলছে। দোকানের ম্যানেজার খোরশেদকেও গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর পৌনে ১টার দিকে ডিবির এই তিন কর্মকর্তা তুলে নিয়ে যায়। তবে এই ম্যানেজারকে ডিবি অফিসে নেয়া হয়নি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে গোয়েন্দা বিভাগের একটি সূত্রে। জানা গেছে, বিদেশ থেকে রেমিটেন্স করলে প্রবাসীকে সেখানের ব্যাংকে দিতে হয় শতকরা ১০ ভাগ সার্ভিস চার্জ। যা প্রবাসীদের কাছে অনেক ব্যয়বহুল। ফলে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠানোকে বেছে নিয়েছে প্রবাসীরা। এছাড়াও হুন্ডিতে টাকা পাঠালে মাত্র শতকরা দুই ভাগ অর্থ ব্যয় হয়। অনেক সময় রেগুলার লেনদেনের জন্য আরও কম হারে খরচ দিলেও কয়েক মিনিটের ব্যবধানে হুন্ডির অর্থ পৌঁছে যায় গ্রাহকের কাছে। ফলে বন্ধ হচ্ছে না হুন্ডি ব্যবসা। প্রশ্ন উঠেছে, গোয়েন্দা পুলিশ অপরাধীকে ধরেই বা কেন নিল আবার কেনইবা ছেড়ে দেয়া হলো রাতের আঁধারে। দীর্ঘ ২৫ দিনেরও বেশি সময় পার হলেও ২৪ লাখ টাকার জন্য কেন টু শব্দ করেনি দুবাই প্রবাসী জাফর আহম্মদের লোকজন। এদিকে ঘটনার পর থেকে খাতুনগঞ্জের আবু ছৈয়দ মার্কেটের ওই দোকানটিও বন্ধ রয়েছে প্রায় এক মাস। এদিকে পুলিশের অসাধু এই তিন জনের বিরুদ্ধে হালিশহরে আরেক হুন্ডি ব্যবসায়ীর ৬ হাজার ডলার হাতিয়ে নেয়ার কেলেঙ্কারির তদন্ত চলছে বলে গোয়েন্দা বিভাগের আরেকটি সূত্রে জানা গেছে। অপরদিকে খাতুনগঞ্জের আবু ছৈয়দ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জানা গেছে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে সিভিল পোশাকে এসআই রুপন কুমার দে, এসআই মাসুদ ও এসআই মোশারফ অবস্থান নেয় কোতোয়ালি থানাধীন খাতুনগঞ্জের ওসমানিয়া লেনের আবু ছৈয়দ মার্কেটে। সোর্সের সূত্র ধরেই ব্যাংক থেকে হুন্ডি ব্যবসায়ী জাফর আহম্মদের লোকজনকে অনুসরণ করেন পুলিশের এই তিন কর্মকর্তা। কিন্তু পুলিশ খাতুনগঞ্জের ওই ব্যাংকের সামনে থেকে অনুসরণ করলেও আবু ছৈয়দ মার্কেটে গিয়ে হারিয়ে ফেলে জাফরের লোকজনকে। পরে দুয়েক ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞেস করে খুঁজে বের করে সাইনবোর্ডবিহীন লাকি ড্রাই ফিশ নামের দোকানটি। অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যানুযায়ী প্রবাসী জাফর আহম্মদ ইয়াবা গডফাদারদের তালিকায় ৮ নম্বরে রয়েছে। গত ৬ মাস আগেও ডিবি পুলিশের একটি টিম এই দোকান থেকে হুন্ডির টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে কর্মচারীদের একটি সূত্রে জানা গেছে। ৭/৮ কর্মচারীর এই দোকানে প্রতি মাসে হুন্ডির দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে আবু ছৈয়দ মার্কেটের মালিক আবু ছৈয়দের বিরুদ্ধেও ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ করেছেন খাতুনগঞ্জের কয়েক ব্যবসায়ী। কারণ গত ১০ বছর আগেও আবু ছৈয়দ আর্থিক অনটনে ভুগছিলেন। অথচ মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জের ওসমানিয়া লেনে আবু ছৈয়দ মার্কেট গড়ে তুলেছেন। গৈায়েন্দা বিভাগের কয়েক উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হুন্ডির টাকা লুটে নেয়া বা ভাগাভাগির বিষয়ে দফতর কিছুই জানে না। তবে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এসআই মোশারফ মাস খানেক আগে সিএমপির এই বিভাগে যোগদান করেছেন। তবে এসআই মাসুদ ও রুপন এ দফতরে পুরাতন। বিভিন্ন স্থানে অপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে নিজেরাই অপরাধ করছে। আবার অপরাধীদের সঙ্গে আর্থিক দফারফা করে প্রশাসনকে কুলশিত করছে।
×