ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হালদায় মা মাছের বিচরণ ক্ষেত্র হুমকিতে

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ২৫ মার্চ ২০১৯

 হালদায় মা মাছের বিচরণ ক্ষেত্র  হুমকিতে

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফটিকছড়ি, ২৪ মার্চ ॥ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর উভয় বাঁধ সংরক্ষণ করতে গিয়ে নদীর চিহ্নিত অভয়ারণ্যগুলোর ক্ষতি এবং এসব অভয়ারণ্যে মৎস্য শিকারীদের খপ্পরে পড়ে মা মাছের আনাগোনা ব্যাহত হচ্ছে। নদীর বাঁধ সংরক্ষণ প্রকল্পটি পানি উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়নের কাজ চালানো হচ্ছে শ্লথ গতিতে। এছাড়া প্রফেলারের আঘাতে মা মাছের মৃত্যুর কারণে ২০ মার্চ থেকে নদীতে বন্ধ করা হয়েছে ড্রেজার চলাচল। প্রকল্পের নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের জন্য নদীতে এসব ড্রেজার ব্যবহার করা হয়েছে। এদিকে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত হালদা নদীতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নদীর গুরুত্বপূর্ণ কুম ভরাট হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ডিম সংগ্রহকারীরা। কয়েকজন ডিম সংগ্রহকারী অভিযোগ করে বলেন, হালদা প্রকল্পের মাধ্যমে নদীর বাঁকে ভাঙ্গন রোধে ব্লক দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এতে বাঁকে বিপুল পরিমাণের বালির বস্তা ফেলা হয়েছে। অথচ এসব বাঁকে রুই জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) অবস্থান ও প্রজননের সময় ডিম ছাড়ে। কিন্তু বাঁক ভরাটের কারণে এবার মা মাছ ডিম ছাড়ার শঙ্কা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নকালে হালদার ব্রিডিং গ্রাউন্ডের ৯টি কুমের (অভয়ারণ্য) মধ্যে ৭টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বালিভর্তি বস্তা ফেলার কারণে কুম ভরাট হয়েছে। অথচ এসব কুমে রুই জাতীয় মা মাছ অবস্থান করে এবং বর্ষার শুরুতেই ডিম ছাড়ে। তাছাড়া, আগামী কিছু দিনের মধ্যে নদীতে ডিম ছাড়বে রুই জাতীয় মাছ। নদীতে এখন মাছের আনাগোনা বেড়েছে। এ অবস্থায় নদীতে ড্রেজার চলাচল করলে মা মাছ প্রফেলারের আঘাতে মারা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি, এ আঘাতের কারণে নদী থেকে কয়েকটি মৃত মাছ পাওয়া গেছে। পরে এগুলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার্স রিসার্স ল্যাবরেটরিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সুতরাং প্রকল্প বাস্তবায়নকালে এসব বিষয় মাথায় রাখা দরকার। মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, ‘হালদার চলমান সমস্যা নিয়ে তিনি ইতোমধ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। সচিব তাকে জানিয়েছেন, চলমান প্রকল্পটি আপাতত : স্থগিত রাখা হয়েছে। এটি আরও রিভিউ’র মাধ্যমে হালদাবান্ধব করে বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া, প্রজনন মৌসুম ঘনিয়ে আসার কারণে নদীতে ড্রেজার চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। অপরদিকে, এ মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র রক্ষা করতে এবং মা মাছের বিচরণে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন এবং মৎস্য বিভাগ সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। বিশেষ করে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বালু উত্তোলন ও ড্রেজার চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি পৃথক অভিযান চালিয়ে হালদা নদীর গড়দুয়ারা, মেখলসহ কয়েকটি পয়েন্ট অভিযান চালিয়ে গেল এক সপ্তাহে প্রায় ৩৫ হাজার ফুট জাল জব্দ করেন। সূত্রে আরও প্রকাশ, ফরহাদাবাদের কম্মার বাড়ি থেকে নাজিরহাট পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ২ কিঃ মিঃ বাঁধ পতিত অবস্থায় পড়ে আছে। ওই ২ কিঃ মিঃ বাঁধ সংরক্ষণে পানি উন্নয়ন বোর্ড এখনও কোন কাজ শুরু করেনি। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে এ বাঁধ সংরক্ষণের কাজ সম্পন্ন করা না হলে পাহাড়ি ঢলে প্রায় ৩২ বর্গ কিঃ মিঃ সংরক্ষণ বাঁধ ফের বিলীন হয়ে যেতে পারে। অভিযোগে প্রকাশ, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারেরা সংরক্ষণ বাঁধের কয়েকটি অংশে মাটির সঙ্গে বালির পরিমাণ বেশি থাকায় এ সংরক্ষণ বাঁধের টেকসই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির প্রয়োজন মনে করছেন এলাকাবাসী।
×