ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য

পানিশূন্য উত্তরাঞ্চলের নদী

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ২৫ মার্চ ২০১৯

 পানিশূন্য উত্তরাঞ্চলের নদী

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ শুষ্ক মৌসুমে কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি শূন্য হয়ে পড়ছে। জলবায়ুর প্রভাব এবং নদ-নদীর তলদেশ ভরাট হবার কারণে পানির ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় প্রভাব পড়তে শুরু করেছে কৃষিসহ জীববৈচিত্র্যে। জেলার নদ-নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে অনেক নদী হারিয়ে যাবে এ জেলা থেকে। ইতোমধ্যে অনেক নদীর জীববৈচিত্র্য হারিয়ে গেছে। নদ-নদীর পানি কমে যাওয়ায় অনেক জায়গায় নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। কুড়িগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকমারসহ ছোট-বড় ১৬টি নদ-নদী বয়ে গেছে। জেলায় প্রায় ৩১৬ দৈর্ঘ্য কি.মি. নদী পথ। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বয়ে যাওয়া অধিকাংশ নদ-নদী প্রায় পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। অনেক জায়গায় মানুষজন হেঁটে চলাচল করছে। যে দিকে তাকানো যায় শুধু বালু আর বালু। গেল বছর বন্যা না হওয়ায় এবারের শুষ্ক মৌসুমে আগাম নদ-নদীর পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। ফলে কৃষিসহ জীববৈচিত্র্যে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। নদীর পানি কমে যাওয়ায় কমে গেছে মাছের আমদানি। ফলে জেলেরা বাঁচার জন্য অন্য পেশা খুঁজছে। পানি কমায় আবাদ করতে কৃষককে গুণতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। বছরের আষাঢ়, শ্রাবণ,ভাদ্র,আশ্বিন এই ৪ মাস নদীতে কানায়-কানায় পানি থাকে। বছরের বাকি ৮ মাসের মধ্যে কার্তিক, অগ্রহায়ণ ২ মাস পানি মাঝামাঝি এসে দাঁড়ায়। পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ এই ছয় মাস পানি হাঁটু জলে নেমে এলেও এবার অনেক নদীর পানি আগাম শুকিয়ে চরে পরিণত হয়েছে। ভারতের উজান থেকে নদ-নদী দিয়ে প্রায় ২ বিলিয়ন মেট্রিক টন পলি মাটি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তার মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ পলিমাটি জেলার বিভিন্ন নদী দিয়ে আসে। ফলে নদীগুলো দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে। জালের মতো বিছিয়ে থাকা নদ-নদী একে একে বিলীনের পথে। পানির অভাবে স্থায়ী মরুকরণের পথে যাচ্ছে দেশের উত্তরের সর্বশেষ এই জেলাটি। চিলমারী নৌ বন্দরের মাঝি মালেক, হাসমত আলীসহ অনেকেই জানান, ব্রহ্মপুত্র ভরাট হবার কারণে নৌ চলাচলে বিঘ্নিত হচ্ছে। পানি কম থাকায় নৌকা ঘুরে যেতে তেল ও সময় দুটোই বেশি লাগে। এতে করে মাঝিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রৌমারী উপজেলার ফুলুয়ার চরের বাসিন্দা আকবর আলী, মজিদ মিয়া জানান, এখন আর তেমন নদ-নদীতে মাছ পাওয়া যায় না। ফলে জেলেরা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। আর নদ-নদী খনন না থাকায় সারাবছরই ভাঙ্গনের শিকার হতে হয় এখানকার মানুষদের। সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউপি’র প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম রিপন বলেন, নদীর পানি কমে যাওয়ায় পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। সেচ দিয়ে পানি তুলে আবাদ করতে গুণতে হচ্ছে কৃষককে বাড়তি খরচ। দিন দিন তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় চরের ফলনও কমছে। ফলে ধারদেনা করে আবাদ করলেও লোকসানের মুখে পড়েছে চরাঞ্চলের কৃষক। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, দেশের বৃহত্তম নদ-নদীময় জেলা কুড়িগ্রাম। ব্রিটিশ আমলেও ৪৭টি নদ-নদী থাকলেও সময়ের বিবর্তনে বর্তমানে ১৬টি নদ-নদী। উজানে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে পানি প্রবাহ কমে আসায় বর্তমানে অধিকাংশ নদীগুলো মৃত প্রায়। তবে যেসব নদীর এখনও জীবন আছে সেগুলো হচ্ছে কালজানি, কালো, গঙ্গাধর, জালশিরা, জিঞ্জিরাম, তিস্তা, দুধকুমার, ধরণী, ধরলা, নীলকুমার, ফুলকুমার, ফুলসাগর, ব্রহ্মপুত্র, শিয়ালদহ, সঙ্কোশ, সোনাভরি, হলহলিয়া, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমার। দ্রুত বৈজ্ঞানিক উপায়ে নদ-নদীগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পদক্ষেপ নেবার দাবি এই নদী গবেষকের। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান জানান, বন্যা আর বৃষ্টিপাত না থাকায় কৃষককে ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে। দেশের অন্যান্য জায়গার তুলনায় কুড়িগ্রামের আবাদি জমিতে পানি ধরে রাখার ধারণ ক্ষমতা কম থাকাকেও খরার জন্য দায়ী বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা। জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন বলেন, দ্রুত পানি শুকিয়ে যাবার কারণে জেলার কৃষি এবং পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
×