ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাকপ্রতিবন্ধী বৃদ্ধা ৪৭ বছর স্বজনদের অপেক্ষায়

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ২৫ মার্চ ২০১৯

 বাকপ্রতিবন্ধী  বৃদ্ধা ৪৭ বছর স্বজনদের  অপেক্ষায়

নিজস্ব সংবাদদাদা, সান্তাহার, ২৪ মার্চ ॥ বগুড়ার সান্তাহার পৌর শহরের কলসা-রথবাড়ি এলাকায় সাইলো রোডে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক বৃদ্ধা বসবাস করে আসছেন ৪৭ বছর ধরে। তিনি বাক প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে তার নাম পরিচয় কেউ জানে না। জানে না কোথায় তার বাড়ি, কে তার স্বজন। নামাজ আদায় করেন বলে তিনি মুসলিম ধর্মের মানুষ হিসেবে সবাই জানে। এলাকার মানুষ তাকে বুকি বলে ডাকে। বয়স ৭০/৮০ বছরের মতো। রথবাড়ির মহল্লার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম চায়না বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে এই নারীকে রথবাড়ি এলাকায় দেখা যায়। দিনের বেলা রাস্তায় ঘুরে বেড়ান। রাত হলে কখনও মন্দিরে, কখনও মার্কেটের বারান্দায় রাত্রী যাপন করেন। কিছু দিন আগে তিনি এক মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গুরুতর আহত হন। সেই মোটরসাইকেল চালক আহত বৃদ্ধাকে নিয়ে কিছু দিন তার নিজ বাড়িতে রাখেন এবং চিকিৎসা করান। সুস্থ হওয়ার ফের তাকে রথবাড়িতে রেখে যান। সর্বশেষ তার আশ্রয় হয়েছে রথবাড়ি এলাকায় কলেজ মোড়ে চা দোকানি কমলা বেগমের বাড়িতে। কমলা তাকে একটি ছোট ঘর ছেড়ে দিয়েছেন। সেও স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। অজ্ঞাতনামা এই বৃদ্ধার বর্তমান আশ্রয়দাতা কমলা বেগম জানায়, বাকপ্রতিবন্ধী এই বৃদ্ধা তাকে ইশারা ইঙ্গিতে জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের আগে ও যুদ্ধকালে তিনি কথা বলতে পারতেন। তার স্বামী-সন্তান ও সংসার ছিল। স্বামী ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কোন একদিন হানাদার পাকি সেনারা তার চোখের সামনে গুলি করে স্বামী এবং তিন সন্তানকে হত্যা করে। ঘরের কোনে লুকিয়ে সে দৃশ্য দেখেছেন। তারপর থেকে সে বাকপ্রতিবন্ধী হয়ে যায়। পরে ট্রেনে করে তিনি সান্তাহারে চলে আসে। কেউ কোন দিন তার খোঁজ নিতেও আসেনি। যেহেতু সে বোবা তাই মানুষের কাছে সে বুকি নামেই পরিচিত হয়ে উঠেন।
×