ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিঙ্গারের মালিকানায় আসছে আর্সেলিক

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ২৫ মার্চ ২০১৯

 সিঙ্গারের মালিকানায়  আসছে আর্সেলিক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেডের ৫৭ শতাংশ শেয়ার কিনছে তুরস্কের আর্সেলিক এএস। এই শেয়ার কিনতে আর্সেলিকের খরচ হবে ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৬৩১ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। সিঙ্গারের মালিকানায় থাকা নেদারল্যান্ডসভিত্তিক রিটেইল হোল্ডিংস সিঙ্গার বাংলাদেশের পর্ষদকে শেয়ার ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, রিটেইল হোল্ডিংসের মালিকানায় থাকা সিঙ্গার বাংলাদেশের ৫৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ বা ৪ কোটি ৩৭ লাখ ৭ হাজার ১৮৩টি শেয়ার কিনে নেবে আর্সেলিকের সাবসিডিয়ারি আরডাচ বিভি। হোম এ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদক ও সরবরাহকারী কোম্পানিটি আরও জানায়, সিঙ্গার বাংলাদেশের পূর্ণ মালিকানা আরডাচ বিভির কাছে চলে গেলেও কোম্পানির ব্যবসায় কোন পরিবর্তন হবে না। ‘সিঙ্গার’ ট্রেডমার্কেই ব্যবসা পরিচালিত হবে। রিটেইল হোল্ডিংসের চেয়ারম্যান স্টিফেন এইচ গুডম্যান বলেন, আর্সেলিক আমাদের তুলনায় বেশ বড় প্রতিষ্ঠান এবং তাদের আর্থিক সক্ষমতাও বেশি। এতে সিঙ্গার বাংলাদেশ উপকৃত হবে বলে আমি মনে করি। শেয়ার বিক্রির পর এসভিপির কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে সিঙ্গার বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী তাদের ব্র্যান্ড নেম ও ট্রেডমার্ক ব্যবহার করতে পারবে। চুক্তি সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, সিঙ্গার বাংলাদেশের ৫৭ শতাংশ শেয়ার রিটেইল হোল্ডিংস বিহোল্ড বিভির কাছে থাকলেও এর ২০ শতাংশ ব্লকড শেয়ার। এখনই তা বিক্রি করতে পারবে না। ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরে ৩০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দেয়ার কারণে সিঙ্গার বাংলাদেশের শেয়ার সংখ্যা দাঁড়াবে ৯ কোটি ৯৭ লাখ ২ হাজার ৮০০। এর ৫৭ শতাংশ বা ৫ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার ৬০০ শেয়ার কিনবে আরডাচ। এ হিসাবে শেয়ার প্রতি বিক্রিমূল্য দাঁড়ায় ১১১ টাকায়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সিঙ্গার বাংলাদেশের শেয়ার ২৬৯ টাকায় লেনদেন হয়েছে। ফলে বিদ্যমান দরের চেয়ে প্রায় ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ কম দামে সিঙ্গার বাংলাদেশের শেয়ার বিক্রি করা হবে। মূলত ব্লকড হিসেবে থাকা ২০ শতাংশ শেয়ারের কারণেই এর দর তুলনামূলক কম নির্ধারিত হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর্সেলিকের সিইও হাকান বুলগুরলু বলেন, সামনের দিনগুলোতে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি আসবে। বাংলাদেশের মতো একটি সম্ভাবনাময় বাজারে প্রবেশের জন্য সিঙ্গার বাংলাদেশের শেয়ার ক্রয় আমাদের জন্য কৌশলগতভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত। সিঙ্গার বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ইমেজের পাশাপাশি বিস্তৃত বিক্রি নেটওয়ার্ক ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা রয়েছে। আমরা এগুলোকে কাজে লাগিয়ে বাজারের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করব। আর্সেলিক ১৯৫৫ সালে যাত্রা করে। ৩২ হাজার কর্মীর মাধ্যমে কোম্পানিটি বিশ্বের ১৪৬টি দেশে এর পণ্য সরবরাহ করছে। তুরস্ক, রোমানিয়া, রাশিয়া, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান ও ভারতে ২১টি উৎপাদন লাইন রয়েছে আর্সেলিকের। বিশ্বজুড়ে তাদের ৩৪টি বিক্রি ও বিপণন কোম্পানি রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে আর্সেলিক, বেকো, গ্রানডিগ, ব্লুমবার্গ, ইলেক্ট্রা ব্রেগেঞ্জ, আর্কটিক, লেইজার, ফ্ল্যাভেল, ডিফে, ডোল্যান্স, ভলটাস বেকো ও অলটাস। আর্সেলিক ইস্তানবুল স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানি। সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড ১৯০৫ সাল থেকে এ অঞ্চলে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কোম্পানিটি সেলাই মেশিন ও কিস্তিতে পণ্য বিক্রির জন্য সুপরিচিত। বর্তমানে সিঙ্গার বাংলাদেশ নিজস্ব ব্র্যান্ডের বাইরে অন্যান্য ব্র্যান্ডের পণ্যও বিক্রি করছে। দেশব্যাপী ৩৮৫টি নিজস্ব বিক্রিকেন্দ্রের পাশাপাশি ৭২০-এর বেশি হোলসেল ডিলারের মাধ্যমে কার্যক্রম চালাচ্ছে কোম্পানিটি। ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০১৮ হিসাব বছরে সিঙ্গার বাংলাদেশের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৩০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এ সময়ে কোম্পানিটির বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। যেখানে আগের বছরে বিক্রি ছিল ১ হাজার ১০৬ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৯২ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৭৫ কোটি টাকা।
×