ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নয় বছরে ৫২ জনকে মৃত্যুদন্ড, ২৪ জনের আমৃত্যু কারাদন্ড

প্রকাশিত: ১০:২৩, ২৫ মার্চ ২০১৯

 নয় বছরে ৫২ জনকে মৃত্যুদন্ড, ২৪ জনের আমৃত্যু কারাদন্ড

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নয় বছর পূর্তি আজ। ২০১০ সালের ২৫ মার্চে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই সময়ের মধ্যে ৩৫টি মামলার রায়ে ৮০ জন আসামির বিরুদ্ধে দন্ড প্রদান করেছে ট্রাইব্যুনাল। তদন্ত সংস্থা ৬৮টি তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে। বর্তমানে দুটি মামলার রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রয়েছে। অর্থাৎ যে কোন দিন রায় ঘোষণা করা হবে। যে সব মামলায় রায় হয়েছে তার মধ্যে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়েছে ৫২ জনকে, আমৃত্যু কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে ২৪ জনকে। আর একজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান, একজনকে ৯০ বছরের দন্ড একজনকে ২০ বছরের কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে ৩১টি মামলার বিচারকাজ চলছে। আপীল বিভাগে ৭টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি মামলায় আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। বর্তমানে আপীলে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে ২৯টি মামলা। গত দুই বছর ৭ মাসে আপীল বিভাগে নতুন করে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা শুনানি হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে শীঘ্রই এ সব মামলার শুনানি হতে পারে। এদিকে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ ট্রাইব্যুনালের নয় বছর পূর্তি উপলক্ষে জনকণ্ঠকে বলেন, যারা সত্যিকার অর্থে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল তাদের বিচার হয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে উঠে এসেছি। প্রমাণ হয়েছে অন্যায় করে কেউ পার পেতে পারে না। আইনের মুখোমুখি হতেই হবে। এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাতটি রায়ের মধ্যে ৬টিতে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আপীল বিভাগের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতের আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপীলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। মামলার সংখ্যা বাড়ায় দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০১২ সালের ২২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরও একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। তারকা খচিত আসামিদের বিচার শেষে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা দুটি থেকে একটিতে রাখা হয়েছে। যাদের আপীল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ॥ বর্তমানে ২৯ মামলা আপীল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। গত দুই বছর ৭ মাসে আপীল বিভাগে নতুন করে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা শুনানি হয়নি। আপীল বিভাগে সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট মীর কাশেম আলীর মামলার রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়ার পর নতুন মামলার শুনানি হয়নি। হাইকোর্টে অবকাশ শেষে আগামী ৩১ মার্চ থেকে যথারীতি খুলবে সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্ট। শুরু হবে নিয়মিত বিচার কার্যক্রম। আপাতত এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের আপীল শুনানি হচ্ছে না। এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শীঘ্রই এ সমস্ত মামলার শুনানি হতে পারে। এর আগে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুস সুবহান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম এবং জাতীয় পার্টি (জাপা) নেতা সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মামলা কয়েকবার কার্যতালিকায় এলেও শুনানি হয়নি। এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ রানা জনকণ্ঠকে বলেছেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দ-ের বিরুদ্ধে মোট ২৯ জন উচ্চ আদালতে আপীল করেছেন। যার মধ্যে রয়েছেন, জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির আব্দুস সুবহান, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, জাপার সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মোঃ কায়সার, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা মোবারক হোসেন, জাপার সাবেক সাংসদ আব্দুল জব্বার, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজাকার মাহিদুর রহমান, বাগেরহাটের সিরাজুল হক সিরাজ মাস্টার, মোঃ আকরাম হোসেন, পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিক, নেত্রকোনার ওবায়দুল হক তাহের, আতাউর রহমান ননী, হবিগঞ্জের মজিবুর রহমান (আঙ্গুর মিয়া) মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, কিশোরগঞ্জের সামসুদ্দিন আহম্মেদ, এ্যাডভোকেট শামসুল হক, জামালপুরের এসএম ইউসুফ হোসেন, বিল্লাল হোসেন, মোঃ মোসলেম প্রধান, মোঃ আব্দুল লতিফ, ইউসুফ আহম্মেদ, মোঃ আমির আহম্মেদ ওরফে আমীর আলী, মোঃ জয়নাল আবেদীন, মোঃ আব্দুল কুদ্দুস, হামিদুর রহমান আজাদ, এ গনি ওরফে এ গনি হালদার, মোঃ আকমল আলী তালুকদার, মোঃ ইসহাক সিকদার। দুটি মামলা রায়ের অপেক্ষায় ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেত্রকোনার দুটি মামলা রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়েছে। অর্থাৎ যে কোন দিন এ দুটি মামলার রায় ঘোষণা করা হতে পারে। মামলা দুটি হলো নেত্রকোনার পূর্বধলার মাওলানা আব্দুল মজিদসহ পাঁচ জন আরেকটি নেত্রকোনার আটপাড়ার হেদায়েত উল্লাহ ওরফে মোঃ হেদায়েতুল্লাহ ওরফে আঞ্জুসহ দুই রাজাকার। ২৮ জানুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেত্রকোনার মাওলানা আব্দুল মজিদসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়। অন্যদিকে ৭ মার্চ নেত্রকোনার হেদায়েত উল্লাহ ওরফে মোঃ হেদায়েতুল্লাহ ওরফে আঞ্জুসহ দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার জন্য সিএভি (অপেক্ষমাণ) রাখা হয়। প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, আমি আশা করছি শীঘ্রই এ দুটি মামলার রায় ঘোষণা করা হতে পারে। কারণ দুটির মধ্যে মাওনালা আব্দুল মজিদসহ ৫ রাজাকারের মামলাটি অনেক দিন আগে সিএভি রাখা হয়েছে। এ দুটি রায় হবে ট্রাইব্যুনালের ৩৬ ও ৩৭তম রায়। এর আগে আরও ৩৫টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দিয়েছে ২৪টি আর ট্রাইব্যুনাল-২ দিয়েছে ১১টি রায়। ট্রাইব্যুনালে যাদের মামলা চলছে ॥ এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে ৩১টি মামলায় ১৭১ জনের বিচার চলছে। এ সমস্ত মামলাগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। যার মধ্যে সাক্ষ্য গ্রহণ, চার্জ গঠনসহ বিভিন্ন অর্ডারের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কক্সবাজারের ১৮ রাজাকারের মামলা। এরা হলো, সালামত উল্লা খান, মৌলবী মোহাম্মদ জাকারিয়া সিকদার, মোহাম্মদ রাশিদ মিয়া, ওলি আহম্মেদ, মোহাম্মদ জামালউদ্দিন, মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ, মমতাজ আহম্মেদ ওরফে মনতাজ, হাবিবুর রহমান, মৌলবী আমজাদ আলী, মৌলবী আব্দুল মাজিদ মাস্টার, বাদশা মিয়া, ওসমান গনি, আব্দুস শুকুর, মোহাম্মদ জাকারিয়া, মৌলবী জলিল, মৌলবী রামিজ হাসান, এসআই সামসুল হক, সাতক্ষীরার আব্দুল খালেক ম-ল। সাতক্ষীরার আব্দুল খালেক মন্ডল, মোঃ আব্দুল আল বাকী, খান রকনুজ্জামান, জহিরুল ইসলাম।
×