ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না নকল ও ভেজাল ওষুধের কারবার

প্রকাশিত: ১০:২৬, ২৫ মার্চ ২০১৯

 কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না নকল ও ভেজাল ওষুধের কারবার

নিখিল মানখিন ॥ র‌্যাব ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অভিযানে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভেজাল, নকল ও মানহীন ওষুধ জব্দ হচ্ছে। দেশের নামী-দামী হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং ফার্মেসিগুলোকেও এমন ওষুধ রাখার দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত জেল-জরিমানা করছে। এত কিছুর পরও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক নকল ওষুধ কারখানার সন্ধান পাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতোমধ্যেই এমন কয়েকটি কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি মানহীন ওষুধ প্রস্তুত করায় সম্প্রতি লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে বিশটি কোম্পানির। এরপরও নানা কৌশলে লাইসেন্স বাতিল হওয়া অনেক কোম্পানি ওষুধ উৎপাদন ও বিতরণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর তালিকা না থাকায় রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে নিষিদ্ধ ওষুধ লিখে যাচ্ছেন অনেক চিকিৎসক। অবৈধ পথেও বিদেশ থেকে আসছে বিভিন্ন ওষুধ। এ ধরনের ওষুধের বেশ কয়েকটি চালান ধরাও পড়েছে। ওষুধ প্রশাসন এগুলো নিষিদ্ধের সুপারিশ করেছে অনেক আগেই। অথচ অদৃশ্য কারণে এসব ওষুধই বাজার মাতিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ভেজাল ওষুধ সেবন করলে রোগ ভাল না হয়ে উল্টো মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। ক্যান্সার, হৃদরোগ স্ট্রোক হতে পারে ওসব ওষুধ সেবনে। এমনকি হঠাৎ কিডনি বিকল হয়ে রোগীর মৃত্যু ঘটার আশঙ্কাও থাকে। দক্ষ ফার্মাসিস্টের অভাব ॥ দেশের শতকরা ৯৯ শতাংশ ফার্মেসি চলছে ‘ সি’ ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট ও প্রশিক্ষণহীন লোকজন (ভুয়া ফার্মাসিস্ট) দিয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফার্মেসির অনুমোদন দেয়ার শর্তাবলীতেই বড় ধরনের গলদ রয়ে গেছে। ‘সি’ ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট দিয়েও ফার্মেসি চলতে পারে বলে অনুমোদনের শর্তাবলীতে উল্লেখ রয়েছে। আর ‘সি’ ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্টরা মাত্র তিন মাসের কোর্সধারী, যাদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতাও মাত্র মাধ্যমিক পাস। ওষুধের গুণাগুণ, ব্যবহার, প্রয়োগবিধি, কার্যকর বা ক্ষতি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকে না তাদের। ‘ সি’ ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট দিয়ে ফার্মেসি চালানোর অনুমতি দেয়ার সুযোগ গ্রহণ করছেন ভুয়া ফার্মাসিস্টরা। ফার্মেসি বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ পর্যন্ত নেই। তারা যত্রতত্র গড়ে তুলছে অবৈধ ফার্মেসি। এমন ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট দিয়ে নিরাপদ ওষুধ সংরক্ষণ, বিক্রি এবং ক্রেতাদের কাছে সঠিক মানের ওষুধ তুলে দেয়া সম্ভব নয়। তাদের কারণে জীবনরক্ষাকারী ওষুধ হয়ে উঠতে পারে প্রাণনাশের বিষ। এমন ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্টরা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সম্প্রতি ফার্মাসিস্ট ছাড়া ওষুধের দোকান পরিচালনা করা যাবে না বলে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসির সংখ্যা বাড়ছেই ॥ সরকারী তালিকাভুক্ত ৯৫ হাজার ফার্মেসির মধ্যে ৬০ হাজারের লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ দোকানগুলো সামাল দিতেই হিমশিম খাচ্ছেন অভিযান টিমের সদস্যরা। ওই সব ফার্মেসির মালিকরা গত দু’ থেকে পাঁচ বছর ধরে লাইসেন্স রিনিউ না করে অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অর্থাৎ বর্তমানে দেশে মাত্র ৩৫ হাজার ফার্মেসি বৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আর অননুমোদিত ফার্মেসির সংখ্যা সোয়া লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে জানা গেছে। লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ দোকানগুলো সামাল দেয়ার পর অননুমোদিত, অবৈধ দোকানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। এতে অভিযানের সফলতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দোকানগুলোর ঠিকানা, বৈধতা ও অবৈধতা যাচাই করাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে । যেখানে সেখানে গড়ে উঠছে ওষুধের দোকান। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের চা, পান, বিড়ি, মুদির দোকানেও দেদার বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ওষুধ। রাজধানীতেও এ সংখ্যা একেবারে কম নয়। অবৈধ ওষুধের দোকান জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানায়, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনের দায়ে দেশের ৮৬ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে এ্যালোপ্যাথিক ৩২, ইউনানী ১৬, আয়ুর্বেদিক ২৩ এবং হোমিওপ্যাথিক ১৫ প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানায় মন্ত্রণালয়।
×