ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ধামইরহাটে আদিবাসীদের বাড়িঘরে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২৫ মার্চ ২০১৯

ধামইরহাটে আদিবাসীদের বাড়িঘরে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ ॥ নওগাঁর ধামইরহাটে অসহায় আদিবাসীদের ৩০ থেকে ৩৫টি বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। রবিবার দিনগত মধ্যরাতে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন দিয়ে সবকিছু জ্বালিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে অসহায় আদিবাসী পরিবারের লোকজন খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। স্থানীয়রা জানায়, সন্ত্রাসীরা নিজেদের ক্ষমতাসীন দলের সদস্য এবং স্থানীয় এমপি শহীদুজ্জামান সরকারের খাস লোক বলে দাবী করে। ঘটনার পর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। জানা গেছে, ধামইরহাট উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত বস্তাবর কাগজকুটা গ্রামের পুকুর পাড়ে খাস জমিতে অন্তত ৩৫টি ঘর নির্মাণ করে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে ওই এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন। আদিবাসীদের সঙ্গে কিছু ভূমিহীন মুসলিম পরিবারও রয়েছে। তারা টিনের ছাউনি এবং বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছিল। রবিবার দিনগত রাত ১টায় দিকে ২০ থেকে ২৫ জনের একদল সন্ত্রাসী ওই পুকুর পাড়ের বাড়িঘরগুলোতে হামলা চালায়। তাদের হামলায় বাড়িঘর হারানো লগেন পাহান ও আফিজ উদ্দিন বলেন, রাতে মুখোশধারী লোকজন তাদের বাড়িঘরে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তাদের ধান, চাউল, কাপড় চোপড়, হাঁস-মুরগী, ছাগল, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত মৃত মোজাফ্ফর রহমানের বিধবা স্ত্রী মনোয়ারা বেগম এবং মৃত ঘুটু পাহানের স্ত্রী শান্তি পাহান বলেন,সন্ত্রাসীদের হাতে ধারালো বড় হাসুয়া, কুড়াল,তীর ধনুক, লাঠি ও হাতে পেট্রোলের বোতল ছিল। সন্ত্রসীরা এলোপাথাড়িভাবে তাদেরকে কোপাতে থাকে। এতে শান্তি পাহানের হাত ভেঙ্গে যায় এবং তার ৫ বছরের ছেলে আকাশ মারাত্মক আহত হয়। পরবর্তীতে গ্রামের পার্শে বস্তাবর বিজিবি ক্যাম্পের টহলদল আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এদিকে ওই জমি নিজেদের দাবী করেন বস্তাবর গ্রামের আকতার হোসেন ও তার ছেলে মোশারফ হোসেন মিস্টার। এব্যাপারে মোশারফ হোসেন মিস্টার বলেন, চৌঘাট মৌজার জেএল নং-৫৪, আরএস খতিয়ান নং-১,প্রস্তাবিত খতিয়ান নং ৩৩১,হাল দাগ নং-৮২৫,সাবেক দাগ নং-৭৭৯ এর এক একর চার শতাংশ জমি তারা ক্রয় করেন। জমির দাতা বীরগ্রামের সিরাজুল হক সিদ্দিকীর নিকট থেকে ১৯৭৭ সালের আগষ্ট মাসের ৫ তারিখে ধামইরহাট সাব রেজিষ্টার অফিস নিবন্ধন সূত্রে তারা এই জমি ক্রয় করেন। যার দলিল নং ৩৫১১। তবে জমিটি খাস থাকায় দাতা সিরাজুল হক সিদ্দিকী পত্তনীমুলে মালিক ছিলেন। তার কাছ থেকে ক্রয় সূত্রে প্রাপ্ত দির্ঘদিন তাদের দখলে থাকা জমিতে হটাৎ করে কতিপয় লোকজন অবৈধভাবে দখলের জন্য ছোট ছোট ঘর নির্মাণ করে। বিষয়টি নিয়ে চলতি মাসের ১০ তারিখে ধামইরহাট থানায় একটি নিজ দখলীয় জায়গায় অবৈধ অনুপ্রবেশের একটি মামলা করা হয়। মামলার প্রেক্ষিতে থানা পুলিশ গত বুধবার রাতে কাগজকুটা গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (২৫) এবং একই গ্রামের মৃত গোবিন্দ পাহানের ছেলে জগন্নাথ পাহান (৪৫) কে আটক করে কোর্ট হাজতে প্রেরণ করে। বিবাদমান ওই জমিতে নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। আদালতের আদেশ অমান্য করে বসতবাড়ী নির্মাণ করা হয়েছে। ধামইরহাট থানার অফিসার ইনচার্জ মো.জাকিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনা শোনার পর তিনিসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ বিষয়ে থানায় কেউ মামলা করতে আসেনি। মামলা হলে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×