ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যে ছবিতে আশা খুঁজে পায় নিউজিল্যান্ডবাসী

প্রকাশিত: ০৯:০১, ২৬ মার্চ ২০১৯

যে ছবিতে আশা খুঁজে পায় নিউজিল্যান্ডবাসী

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে বন্দুকধারীর হামলায় ৫০ মুসলিম নিহত হওয়ার পর হতবিহ্বল লোকজন আশাব্যঞ্জক একটি ছবি খুঁজছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের শোকার্ত একটি ছবিতে আশার সঞ্চার হয় তাদের মনে। ছবিতে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী আরডার্নের মাথায় কালো কাপড় আর গ্লাসের মধ্যে প্রতিফলিত ফুল তাঁর চারপাশে। এই ছবিটিই এখন নিউজিল্যান্ডের শোকের প্রতীক। এতে দেখা যায়, মসজিদে হামলায় ৫০ জন নিহত হওয়ার ২৪ ঘণ্টারও আগে প্রধানমন্ত্রী আরডার্ন এক হাতের ওপর আরেক হাত রেখে ক্রাইস্টচার্চে মুসলিম সম্প্রদায়ের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন। তিনি যে সমব্যথী, সেটা তাঁর চেহারায় ফুটে ওঠে। নিউজিল্যান্ডের ‘সবচেয়ে কালো দিনে’ প্রধানমন্ত্রী আরডার্নের প্রকৃত গুণাবলি উঠে এসেছে ছবিটিতে। ছবিটি তোলেন ক্রাইস্টচার্চ সিটি কাউন্সিল ফটোগ্রাফার কির্ক হারগ্রিভস। মসজিদে হামলার পর দিন শনিবার দুপুরে ফিলিপসটাউন কমিউনিটি সেন্টার থেকে ছবিটি তোলেন তিনি। এর কিছুক্ষণ আগে অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন ক্রাইস্টচার্চে আসেন। এ সময় তার সঙ্গে ওয়েলিংটন থেকে একদল সাংবাদিকও এসেছিল। সেখান থেকে তিনি সরাসরি চলে যান ওই কমিউনিটি সেন্টারে। সেখানে তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। প্রধানমন্ত্রী আরডার্ন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন একটি ছোট্ট কক্ষে সমবেত হন। কিন্তু সময় মতো আসতে না পারায় সেখানে প্রবেশ করতে পারেননি ক্রাইস্টচার্চের ‘দ্য প্রেস’র সাবেক সাংবাদিক কির্ক হারগ্রিভস। তিনি বলেন, ‘বাইরে অবস্থান করা আমার কাছে মোটেই সুখকর ছিল না। ফলে আমি কোন ছবিও তুলতে পারছিলাম না। এ কারণে বাইরে দাঁড়িয়েই ছবিটি তুলি আমি।’ হারগ্রিভস ওই আলোচনা অনুষ্ঠানের ছবি জানালা দিয়ে তোলার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু জানালায় আলোর প্রতিফলনের কারণে তিনি ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী আরডার্ন উঠে দাঁড়ালেন। জানালার গ্লাসের ভেতর দিয়ে হারগ্রিভস প্রধানমন্ত্রী আরডার্নের মুখ দেখতে পান। হারগ্রিভস বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আরডার্নের ছবি আমি প্রথমে তুলতে পারিনি। কারণ জানালার গ্লাসে খুবই প্রতিফলন হচ্ছিল। তাই আমি একটি ফিল্টার ব্যবহার করি, যেটাকে ‘পোলারাইজিং ফিল্টার’ বলে... তবে এটাও কাজ করছিল না। এতে আমি হতাশ হয়ে পড়ি এবং ছবি তোলার চিন্তা বাদ দেই। হারগ্রিভস বলেন, তবে এরপর আমি ছবি তোলার জন্য এই অবস্থান পেয়ে যাই। পরে তার বিস্ময়কর শরীরী ভাষার এই ছবি তুলি। এরপর বাইরের সব গাছপালা ও ফুলের প্রতিফলিত রূপের সমন্বয়ে অসাধারণ এই দৃশ্যের দৃষ্টি হয়। তার শরীরী ভাষা, নানা ধর্মের মিশ্রণ এসব মিলিয়ে দারুণ এক দৃশ্যের অবতারণা হয়। আমার কাছে মনে হয়েছে, এ দৃশ্যের ছবি তুলতেই এখানে এসেছি। হারগ্রিভসের তোলা এই ছবিটি ক্রাইস্টচার্চ সিটি কাউন্সিলের ফেসবুক পেজে আপলোড করা হয়। পরে ছবিটি ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও মূলধারার সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তারা ছবিটিকে আরডার্নের নেতৃত্বের গুণাবলির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে ব্যাখ্যা করে। ক্রাইস্টচার্চ শহরের ইতিহাসের সবচেয়ে কালো অধ্যায়ে ছবিটিকে আশার প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করেন হারগ্রিভস। তিনি বলেন, ছবিটিকে ‘বিশ্বের যেকোন ধর্মের, যে কোন সংস্কৃতির’ ছবি হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।-দ্য গার্ডিয়ান
×