ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

যাতায়াতে ভোগান্তি

যমুনায় জেগে ওঠা চর যেন একেকটি দ্বীপ

প্রকাশিত: ০৯:০৬, ২৬ মার্চ ২০১৯

যমুনায় জেগে ওঠা চর যেন একেকটি দ্বীপ

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ২৫ মার্চ ॥ যমুনা নদীর একেকটি জেগে ওঠা চর একেকটি দ্বীপে পরিণত হচ্ছে। মূল নদীতে চর জেগে কয়েকটি চ্যানেলে ভাগ হয়েছে। অন্যদিকে চরের মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছে। অনেক সময় বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বিশাল চর পাড়ি দিতে হয় তাদের। আবার খরার সময় মাথার ওপর প্রচ- সূর্যের তাপ নিয়েই ধু ধু বালুচর পাড়ি দিতে হয় চরের মানুষের। যমুনা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় চরের মানুষের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। নদী শাসন না হওয়ায় পানি শুকিয়ে যমুনা নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। এমন চিত্র দেখা গেছে ভূঞাপুর যমুনা নদীতে। জেলার উত্তরে জামালপুর এবং সিরাজগঞ্জের কাজিপুর হতে ভূঞাপুর বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যমুনা নদী শুকিয়ে কয়েকটি চ্যানেলে ভাগ হয়ে খালে পরিণত হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত নাব্যতা না থাকার কারণে যমুনা নদীতে নৌ চলাচল মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। মাঝ নদীতেই আটকে যাচ্ছে নৌকা। নদীতে চর জেগে ওঠায় নৌকাগুলো বিভিন্ন পয়েন্টে রেখে দিয়েছে মালিকরা। দু’একটি নৌকা পালা-বদল করে চলাচল করছে। নির্ধারিত কোন ঘাট না থাকায় নৌকা চালকরা সুবিধামতো মানুষ নামিয়ে দিচ্ছে। ফলে কষ্ট করে নৌকায় ওঠা-নামা করতে হচ্ছে চরের মানুষের। উপজেলার গাবসারা ও অজুর্না এই দুইটি ইউনিয়নে চর জেগে উঠেছে। নৌকা চলাচল বন্ধ থাকায় এর মালিকরা ভিন্ন পেশায় চলে গেছে। কেউ ইটভাঁটিতে, কেউ খেতে-খামারে কাজ করছে। জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে যমুনা নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নতুন নতুন এলাকায় ভাঙ্গন শুরু হয়। বাস্তুহারা হয়ে যায় শতশত পরিবার। আবার শুষ্ক মৌসুমে সেই এলাকা বিশাল চরে পরিণত হয়। যমুনা নদী ভেঙ্গে ক্রমেই পূর্বের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ফলে ভেঙ্গে যাচ্ছে পুরাতন জনপদ। অন্যদিকে ভরা মৌসুমে চরের মানুষের যাতায়াতের তেমন ভোগান্তি পোহাতে না হলেও শুষ্ক মৌসুমে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় চরের মানুষের। শিক্ষার্থীরা পায়ে হেটে বিশাল চর পাড়ি দিয়ে নৌকা ঘাটে এসে এরপর তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হচ্ছে। চরাঞ্চলের ভুক্তভোগী জনগণ জানান, চরে বাস করতে করতে কষ্ট কি জিনিস ভুলে গেছি। এখন আর কেউ চরে বাড়ি শুনলে মেয়ে-ছেলে বিয়ে করতে চায় না। যাতায়াতের সমস্যার কারণে রোগীদের হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয় না। এখন খরা মৌসুম তাই মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হয়। তাদের অভিযোগ চরে যোগাযোগ ব্যবস্থা, যাতায়াত, দুর্যোগকালীন নিরাপত্তা অনেক সমস্যা এখনও রয়েছে। ফলে চরের চারদিক বেড়িবাঁধ দিয়ে যমুনার ভাঙ্গন ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে চরের মানুষকে রক্ষার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। গাবসারা চরাঞ্চলের মাদরাসার শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, বন্যার সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে সহজ হয়। নৌকায় চড়ে মাদরাসার পিছনে গিয়ে নামতে পারি। আর এখন ১০টাকা দিয়ে নৌকায় নদী পার হয়ে পরবর্তীতে দুই কিলোমিটার পায়ে হেঁটে মাদরাসায় যেতে হচ্ছে। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফিজুর রহমান বলেন, যমুনা নদীর ভূঞাপুর অংশের নদী শাসনের কোন প্রকল্প নেয়া হয়নি। তবে উপজেলার কুঠিবয়ড়াসহ কয়েকটি স্থানে ভাঙ্গনরোধে কাজ শুরু হয়েছে।
×