ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পরাজিত আইএস

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ২৬ মার্চ ২০১৯

পরাজিত আইএস

বিশ্বের শীর্ষ জঙ্গী সংগঠনের শক্তি স্তিমিত হয়ে পড়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রিত আর কোন অঞ্চল নেই। তাদের সম্পূর্ণভাবে উচ্ছেদ করা গেছে বলে দাবি করছে হোয়াইট হাউস। পূর্ব সিরিয়ায় আইএসের শেষ ঘাঁটি বাঘুুজ দখল করে নিয়েছে মার্কিন সমর্থিত আইএসবিরোধী যোদ্ধারা। এর মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত কথিত ‘খেলাফত’-এর অবসান হয়েছে বলা যায়। প্রতিষ্ঠার পর গত পাঁচ বছর ধরে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদের যে বিস্তার ঘটেছে, মানুষ হত্যা ও সম্পদ বিনষ্ট করেছে তার ইয়ত্তা নেই। আরবীতে যাকে ‘দায়েশ’ বলা হয়, সেই ইসলামিক স্টেট বা আইএস অনেক আগে থেকেই ভেতরে ভেতের ক্ষয়ে যেতে থাকে। জঙ্গী সংগঠনটি এর বিদেশী ও স্থানীয় সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে এক বছরের বেশি সময় ধরে নানা জটিলতায় আবর্তিত হতে থাকে। পাশাপাশি যুদ্ধের ময়দানে প্রতিপক্ষের কাছে পরাজয় বরণ করতে থাকে। সামরিক তৎপরতা চালানোর ক্ষেত্রে তেমন কার্যকর হয়ে উঠতে পারেনি। কোন্দল, সপক্ষ ত্যাগ এবং রণাঙ্গনে বিপর্যয় সংগঠনটির প্রাণশক্তি ক্রমশ নিঃশেষ করে দিয়েছে। কোথাও কোন জনসমর্থন পায়নি। নৃশংসভাবে তারা মানুষ হত্যা যেমন করেছে, তেমনি জনপদ, ঘরবাড়ি, প্রাচীন ঐতিহ্য ধ্বংস করে দিয়েছে। শুধু প্রাচীন স্থাপত্য ভাঙ্গা নয়, জাদুঘরে সংরক্ষিত ভাস্কর্য প্রাচীন নগরীর স্থাপনা, এমনকি পিরামিড ভাঙ্গার কাজও করেছে। এই জঙ্গীরা নিজেদের ‘অজেয়’Ñএমন ধারণাও দিয়েছিল। তাদের সহিংস স্বেচ্ছাচারী শাসনাধীনে বসবাসরত মানুষ বিভীষিকার চোরাবালিতে আটকা পড়ে ছিল। তাদের দখল করা এলাকার মানুষের অসহায়ত্ব ছিল মানবেতর। নির্মমতা, নৃশংসতার শিকার হয়েছে শিশু, নারী, বৃদ্ধ, বৃদ্ধারাও। ধর্মকে সামনে রেখে সব অপরাধমূলক কার্যকলাপ চালিয়ে এসেছিল। তারা এক কল্পিত ‘খেলাফত রাষ্ট্র’ নামক ইসলামিক রাষ্ট্রের আওতায় বিভিন্ন গোত্রের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিল। ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়ার বিশাল এলাকা এবং মিসরের কয়েকটি শহর দখল করে বর্বরতা চালিয়েছে। যেসব স্থান দখল করেছে, সেখানেই চালিয়েছে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ। ধর্মের নামে অধর্ম আর নৃশংসতার যে বহির্প্রকাশ ঘটিয়েছে আইএস, তা বিশ্ববিবেককে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। হত্যা, রক্তপাত ঘটানোর যে বীজমন্ত্র তারা ধারণ করেছিল তা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে জঙ্গীবাদের ব্যাপক বিস্তার ঘটিয়েছিল। ইসলামী শাসন ব্যবস্থা চালুর নামে যে কার্যকলাপ অব্যাহত রেখেছিল, তা দিন দিন ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। আল কায়েদা, তালেবান, বোকো হারামসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জঙ্গী গোষ্ঠীগুলো আইএসের নেতৃত্বে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটিয়েছিল। বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদের যে প্রসার ঘটেছিল একুশ শতকের গোড়াতে তা হঠাৎ আইএসের হাত ধরে শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। বিশ্ববাসী এদের বিনাশই কামনা করেছে এতকাল। আইএস নামক জঙ্গী সংগঠনটি সারাবিশ্বকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে যে তৎপরতা চালিয়েছে তা বিশ্বের প্রায় সব দেশকেই নাড়া দিয়েছে। কারণ যেখানেই প্রতিষ্ঠিত হোক জঙ্গীদের ধর্ম একটাই, তা হচ্ছে মানুষ হত্যা, সম্পদহানি ও ধর্মকে গ্লানিকর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। জঙ্গীবাদ নামক আদর্শ লালনকারীরা মানবিকতার বিপরীতে অবস্থান করে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদের যে বিস্তার ঘটিয়েছে, তা যে এক সময় নিঃশেষ হবে, বিশ্বমানব সেই আশ্বাসে বলীয়ান হয়ে আছে। শেষ ঘাঁটি থেকে আইএস নির্মূল হয়েছে। আপাতত হারলেও তাদের পুনর্গঠিত হওয়ার সুযোগ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে বিশ্ববাসীর। আইএস মতাদর্শের অনুসারীরা ‘খিলাফত হারালেও তাদের অস্তিত্ব ফুরিয়ে যায়নি। ইরাকের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আবার তারা সংগঠিত হচ্ছে বলে খবর আছে। তাদের হাতে এখনও ভারি অস্ত্র রয়েছে। তারা নৃশংস হত্যাকা- ঘটাতে সক্ষম এখনও। তাদের মূল নেতা বাগদাদীর অবস্থান এখনও অজানা। বড় ধরনের পরাজয় হলেও এখনও হাজার বিশেক জঙ্গী রয়েছে ইরাক ও সিরিয়ায়। এরা চোরাগোপ্তা হামলা করতে পারে। আইএসে মতাদর্শসহ অনুসারীদের সম্পূর্ণ বিনাশের কোন বিকল্প নেই।
×