ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঋণখেলাপীদের আরেকটি সুযোগ দিচ্ছে সরকার ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:১১, ২৬ মার্চ ২০১৯

ঋণখেলাপীদের আরেকটি সুযোগ দিচ্ছে সরকার ॥ অর্থমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করেননি, সেসব ঋণখেলাপীর ঋণমুক্ত হওয়ার জন্য আরও একটি সুযোগ করে দিচ্ছে সরকার। যারা ঋণ শোধ করতে না পারার যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা করতে পারবেন, তাদের মোট ঋণের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৭ শতাংশ সুদে ১২ বছরে ওই টাকা পরিশোধের সুযোগ পাবেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সোমবার বিকেলে সরকারের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান অর্থমন্ত্রী। বৈঠকে ব্যাংক সুদের হার ডাবল ডিজিট থেকে কীভাবে সিঙ্গেল ডিজেটে নামিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ব্যাংক খাতের সমস্যা দূর করতে যে কমিটি করে দিয়েছিলেন, সেই কমিটির সুপারিশেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শীঘ্রই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে জানিয়ে মন্ত্রী বলেছেন, ঋণ নেয়ার সময় সুদের হার যাই থাকুক না কেন, এই সুযোগ নিয়ে খেলাপী ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ৭ শতাংশ হারেই সুদ প্রযোজ্য হবে। মন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের ব্যাংক খাত নিয়ে আলোচনা করতে বসেছিলাম। ব্যাংক খাতের দুরবস্থা দূর করতে আমাদের সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত ভাই গবর্নরের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দিয়ে গিয়েছিলেন। সেই কমিটির সুপারিশেই আমরা ঋণখেলাপীদের ঋণ পরিশোধের, অর্থাৎ ঋণখেলাপী থেকে বেরিয়ে আসার একটি সুযোগ করে দিচ্ছি। তবে এ সুযোগ অবশ্যই ‘ভাল ঋণখেলাপীদের জন্য’ মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের ব্যাংক খাতে ঋণগ্রহীতা দুই ধরনের। ভাল এবং অসাধু ঋণগ্রহীতা। ভাল ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধের জন্য আমরা বিশেষ সুবিধা দিচ্ছি। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপী হননি অথবা বেশ কিছু কিস্তি শোধের পর সুনির্দিষ্ট কারণে আর শোধ করতে না পেরে খেলাপী হয়েছেন, তাদের জন্য এ সুযোগ। অর্থমন্ত্রী বলেন, যারা ভাল ঋণগ্রহীতা, তাদের সুদের হার আমরা কমিয়ে দিচ্ছি। তাদের কাছ থেকে দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে বাকি ঋণের ওপর ৭ শতাংশ হারে সুদ নেয়া হবে। এটা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। সর্বোচ্চ এক মাস সময় লাগবে। কিন্তু এটা কার্যকর হবে ১ মে থেকে। মন্ত্রী আরও বলেন, আর যারা ‘অসাধু’ ঋণগ্রহীতা, অর্থাৎ যারা ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপী হয়েছেন, তাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি ১০ বার ব্যাংক থেকে টাকা নিলাম অথচ দিলাম না, আমি কি ভাল? আমি দুইবার টাকা নিলাম দিলাম না, আমি ভাল? অথবা ১০ বার রফতানি করলাম একবারও টাকা ব্যাংকে ঢুকালাম না, তারা কি ভাল? কারা ভাল ঋণ গ্রহীতা তা নির্ধারণের জন্য একটি অডিট কমিটি করে দেয়া হবে। সেই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই খেলাপী ঋণ পরিশোধের বিশেষ সুযোগ পাবেন ঋণখেলাপীরা বলেন মন্ত্রী। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর বাইরে দীর্ঘদিন আদায় করতে না পারা যেসব ঋণ ব্যাংকগুলো অবলোপন করেছে, তার পরিমাণ প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা। খেলাপী ঋণের সঙ্গে অবলোপন করা এ মন্দ ঋণ যুক্ত করলে প্রকৃত খেলাপী ঋণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। ২০১৭ সাল শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপী ঋণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপী ঋণ বেড়েছে সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা।
×