ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সঞ্চয়পত্র বিক্রি কার্যক্রম সম্পূর্ণ অটোমেশন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৮:৩৪, ২৭ মার্চ ২০১৯

সঞ্চয়পত্র বিক্রি কার্যক্রম সম্পূর্ণ অটোমেশন হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় প্রকৃত গ্রাহকদের সুবিধা দিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রির কার্যক্রম পুরোপুরি অটোমেশন করা হচ্ছে। এর ফলে কেউ আর ৪৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবে না। এছাড়া সঞ্চয় স্কিমের সুদ ও আসল সরাসরি গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে পাঠিয়ে দেয়া হবে। নগদ টাকার পরিবর্তে চেকের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র বিক্রির টাকা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ৩০ জুনের মধ্যেই দেশব্যাপী এটি শুরুর জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এছাড়া আবেদন ফরমের সঙ্গে বাধ্যতামূলক টিআইএন নম্বর জমা দিতে হবে। জানা গেছে, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি সরকারী চিঠি সম্প্রতি সঞ্চয়পত্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, অর্থ বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘সরকারী ব্যয় ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ : অগ্রাধিকার কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা (পিইএমএস)’ শীর্ষক কর্মসূচীর আওতায় প্রণীত জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালুসহ সঞ্চয় স্কিমের সুদ ও আসলের (বিইএফটিএন) মাধ্যমে সরাসরি গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে প্রেরণের বিষয়ে নিম্নবর্ণিত নির্দেশনা অনুসরণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হলো। নির্দেশনাগুলো হচ্ছেÑ সঞ্চয়পত্র অটোমেশন সিস্টেমটি চলতি মাসের মধ্যেই ঢাকা মহানগরীতে, এপ্রিলে বিভাগীয় শহরে এবং জুন মাসের মধ্যে দেশের অন্যান্য স্থানে অবস্থিত সব দফতরে চালু করতে হবে। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে এ সিস্টেমের আওতাবহির্ভূতভাবে কোন সঞ্চয় স্কিম লেনদেন না করার বিষয়ে সঞ্চয় স্কিম লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন দফতরগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। এ সিস্টেম থেকে প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুযায়ী দৈনিকভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংকের হিসাব ডেবিট করে সরকারী হিসাবে ক্রেডিট করা এবং সঞ্চয় স্কিমের সুদ ও আসলের (বিইএফটিএন) মাধ্যমে সরাসরি গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে প্রেরণের বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক অধঃস্তন দফতর ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংককে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। চিঠিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর জাতীয় সঞ্চয় অধিফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যেই সঞ্চয়পত্র বিক্রির কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে অটোমেশন (অনলাইন) পদ্ধতিতে শুরু করেছে জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতর। প্রাথমিকভাবে অটোমেশন পদ্ধতি চালু হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখায়, সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখায়, জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের ব্যুরো অফিস (গুলিস্তান) এবং বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের প্রধান কার্যালয়ে। পরীক্ষামূলকভাবে তিন মাস চলার পর অটোমেশন প্রক্রিয়া সারাদেশে বিভাগীয়, জেলা শহরের কার্যালয়ে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এর অংশ হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সরকারী ব্যয়-ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ কর্মসূচীর আওতায় সোনালী ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ৪২টি ব্যাচে ভাগ করে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, অর্থ বিভাগে বাস্তবায়নাধীন ‘সরকারী ব্যয় ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ : অগ্রাধিকার কার্যক্রমসমূহের ধারাবাহিকতা রক্ষা’ শীর্ষক কর্মসূচী জাতীয় সঞ্চয় স্কিম ব্যবস্থাপনা অটোমেশনের জন্য একটি ওয়েবভিত্তিক সিস্টেম প্রণয়ন করেছে। ওই সিস্টেম যথাযথভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করতে সঞ্চয়পত্র লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ৪২টি ব্যাচে ভাগ করে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ অব্যাহত রয়েছে। ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিন্যান্সের কম্পিউটার ল্যাবে এ প্রশিক্ষাণ দেয়া হয়। জানা গেছে, ‘ন্যাশনাল সেভিং সার্টিফিকেটস অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামে সঞ্চয়পত্রের অনলাইন ডাটাবেজ তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে। নতুন এ ডাটাবেজ চালু হলে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্রের ই-টিন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) সনদ জমা দিতে হবে। ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নগদ টাকা দিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। টাকার পরিমাণ এর বেশি হলে অবশ্যই ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। এজন্য সঞ্চয়কারীর ব্যাংক হিসাব নম্বর, মোবাইল নম্বর দিতে হবে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যে যারা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন তাদেরও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও ই-টিন সনদ জমা দিতে হবে। এ উদ্যোগের ফলে সঞ্চয়পত্রে প্রকৃত বিনিয়োগকারীরাই আসবে। একই সঙ্গে কালো টাকা বিনিয়োগকারীদের চিহ্নিত করা যাবে। এ বিষয়ে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের মহাপরিচালক সামসুন্নাহার বেগম বলেন, নতুন ডাটাবেজ চালু করা হলে ৫০ হাজার টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে চেকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে হবে। দিতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ই-টিন সনদের কপি। আশা করছি আগামী জুনের মধ্যেই আমাদের এ কার্যক্রম দেশব্যাপী কার্যকর করতে পারব।’ অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ এতটাই বেড়েছে যে, বর্তমানে বছরে এ ঋণের সুদবাবদ সরকারকে ব্যয় করতে হচ্ছে ৫৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। সরকারী চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় বছরে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয় তার থেকেও এ ব্যয় ১ হাজার কোটি টাকা বেশি।
×