ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশে ‘এ্যাড ব্রেকস’ সুবিধা চালু করেছে ফেসবুক, দেশে প্রথম

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ২৭ মার্চ ২০১৯

বাংলাদেশে ‘এ্যাড ব্রেকস’ সুবিধা চালু করেছে ফেসবুক, দেশে প্রথম

ফিরোজ মান্না ॥ বাংলাদেশে ‘এ্যাড ব্রেকস’ সুবিধা চালু করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। এখন থেকে দক্ষ যোগ্য তরুণ-তরুণীরা এই এ্যাড ব্রেকস থেকে সহজেই উপার্জন করতে পারবেন। বিশ্বের অনেক দেশেই এ্যাড ব্রেকস দিয়ে তরুণ-তরুণীরা বড় অঙ্কের টাকা আয় করছেন। দেশে এই প্রথম ফেসবুক আপলোড করা ভিডিওতে বাংলা ও ইংরেজী উভয়ই ভাষার সুবিধা দেয়া হয়েছে। এখন যোগ্য প্রকাশক ও নির্মাতারা এ্যাড ব্রেকস সুবিধার মাধ্যমে ফেসবুকে দেয়া ভিডিওগুলো থেকে আয়ের সুযোগ পেয়েছেন। শুধু তাই নয়- বাড়াতে পারবেন ফেসবুক পেজের ফলোয়ারও। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ প্রথমবারের মতো এমন একটি সুযোগ দিয়েছে। দেশে বর্তমানে ফেসবুক আইডি রয়েছে ২ কোটি ৫৬ লাখের বেশি। এখান থেকে দক্ষরা ভাল মানের ভিডিও আপলোড করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ বলেছে, বিশ্বের অনেক দেশেই এ ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। আমাদের দেশে গত বছরের শেষ নাগাদ এই সুযোগ চালু করেছে। বর্তমানে ফেসবুকে অনেকেই বাংলা ও ইংরেজী উভয়ই ভাষায় ভিডিও আপলোড করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন। এখন যোগ্য প্রকাশক ও নির্মাতারা এ্যাড ব্রেকস সুবিধা বেশি নিতে পারছেন। বাংলাদেশের তুলনায় আমেরিকাতে ফেসবুক এ্যাকাউন্টের সংখ্যা অনেক কম। মার্কিন মুল্লুকে মাত্র ২ কোটি ৯ লাখ লোকে ফেসবুক ব্যবহার করেন। ভারতে ২ কোটি ১৩ লাখ, ইন্দোনেশিয়ায় ২ কোটি ২২ লোকের ফেসবুক আইডি রয়েছে। তবে থাইল্যান্ডে ৩ কোটি ২৪ লাখ লোক ফেসবুক ব্যবহার করছেন। থাইল্যান্ডের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। আর বাংলাদেশে শতকরা ৫২ ভাগ লোক ফেসবুকে সব সময় থাকছেন। বাংলাদেশে ফেসবুক থেকে আয়ের পরিমাণ বেশি হতে পারে, যদি তারা দক্ষতার সঙ্গে কাজটি করেন। সূত্র জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় এই সুবিধা চালুর উদ্যোগ হিসেবে ফেসবুক বাংলাদেশেও এই সেবা সম্প্রসারিত করেছে। ফেসবুক জানে, বিভিন্ন দেশের প্রকাশক ও নির্মাতারা সব সময় তাদের ফলোয়ারদের সঙ্গে থাকতে ভাল ভাল ভিডিও তৈরি করে। আর এসব ভিডিও আপলোড করে। এ সব প্রকাশক ও নির্মাতার সহায়তা দিতে সুযোগ তৈরি করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। বিশ্বের যেসব দেশ ও ভাষায় এই সুবিধা পাওয়া যায় তার তালিকাও প্রকাশ করেছে তারা। ‘এ্যাড ব্রেকসে’ এ যোগ দিতে প্রকাশক ও নির্মাতারা ভিজিট করতে পারেন এই ঠিকানায় সব/লড়রহধফনৎবধশং, ঈৎবধঃড়ৎ ঝঃঁফরড় ভন। অথবা তাদের পেজের ভিডিও ইনসাইট অপশনে। যেখানে যাদের দক্ষতা শর্তের সঙ্গে মিলবে না, তারা ফেসবুক ফলোয়ার, ভিডিও ভিউয়ার এবং মনিটাইজেশন এলিজিবিলিটি স্ট্যান্ডার্ডস্ কমপ্লায়েন্সের ওপর একটি গ্রাফ্রি প্রেজেন্টেশন দেখতে পাবেন। যেখানে প্রতিটি পেজের যোগ্যতা অর্জনের অগ্রগতি ট্র্যাক করা যাবে। মনিটাইজেশন এলিজিবিলিটি স্ট্যান্ডার্ডস্ কমপ্লায়েন্সের বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রকাশক ও ক্রিয়েটর স্টুডিওতে একটি নতুন ভিজ্যুয়ালাইজেশন দেখা যাবে, যা নির্দেশ করবে পলিসি ভঙ্গ করা হয়েছে কিনা। পলিসি ভঙ্গ করা হলে ফেসবুক থেকে আয়ের ওপর ও তাদের যোগ্যতার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। এছাড়াও সেখানে তারা নিয়ম ভঙ্গের তালিকা দেখতে পারবেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওই তালিকা থেকে সরাসরি আপীল করা যাবে। যখনই প্রকাশক ও নির্মাতারা এ্যাড ব্রেকসের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন সেই মুহূর্তেই তাদের আপলোড করা ভিডিওতে এ্যাড চালু করতে পারবেন। এছাড়াও যোগ্য হওয়ার পর ফেসবুক পেজগুলো একসঙ্গে একাধিক ভিডিও আপলোডের মাধ্যমে তাদের পেজের উপস্থিতি বাড়াতে পারবেন ও সেখান থেকে প্রচুর আয় করতে পারবেন। এ্যাড ব্রেকস যোগ্যতা অর্জন ও ব্যবস্থাপনা ও ন্যায্য অর্থ উপার্জন নির্ভর করবে কনটেন্টের ওপর। দর্শকরা এ ধরনের ভিডিও দেখার জন্য বার বার ওই পেজে ফিরে যাবেন। যেখানে ফেসবুকের এলিজিবিলিটি স্ট্যান্ডার্ডস্ শুধু প্রকাশক ও নির্মাতাদের এ্যাড ব্রেকের মাধ্যমে আয় নিশ্চিত করতে প্রাথমিক গাইড লাইন দিতে পারে। তবে ভাল কাজটি তাদের নিজেদেরই তৈরি করতে হবে। উল্লেখ্য ওয়ার্কপয়েন্ট এন্টারটেরমেন্ট ফেসবুক পেজে থাইল্যান্ড গট ট্যালেন্ট নামে একজন জাদুকরের পারফরমেন্সের ওপর একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। পরবর্তীতে ৩০ লাখ (৩ মিলিয়ন) ফেসবুক ব্যবহারকারী সেটা দেখেন, যাদের মধ্যে ৫১ শতাংশ দর্শক এক মিনিটের বেশি সময় ধরে ওই ভিডিওটি দেখেন। এর মধ্যে ৯৪ শতাংশ মানুষ এ্যাড ব্রেকসের পরও সম্পূর্ণ ভিডিওটি দেখেন। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি তাদের বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, দীর্ঘ কনটেন্ট তৈরি বিষয়ে প্যাস্কুয়েলে স্কিয়ারাপ্পা নামে একজন তার ফেসবুক পেজে নিউজার্সিতে রান্নাঘরে ধারণ করা প্রিয় ইতালিয়ান রেসিপি তৈরির ওপর ভিডিও পোস্ট করেন। ১০ মিনিটের বেশি সময়ের এই ভিডিওর প্রাসঙ্গিক কনটেন্টের ওপর দর্শক বা ফলোয়ারদের মনোযোগ ধরে রাখতে বা দর্শকদের ফিরিয়ে আনতে তার ভিডিওগুলো আদর্শ ধরা হয়েছে। বিশ্বস্ত দর্শক তৈরি বিষয়ে বলা হয়েছে, অল ডেফ’র মজার ভিডিওটি ভাল কনটেন্টের প্রতি দর্শকদের আগ্রহের বিষয়ে একটি চমৎকার উদাহরণ। প্রায় ৭০ শতাংশ দর্শক এই ভিডিওটি তাদের ওয়াচলিস্ট ও সার্চ অপশনে যুক্ত করেছে। যে দর্শক নতুন নতুন ভিডিওর প্রতি আগ্রহী হন, তিনি অর্থ উপার্জনে বেশি সহায়ক। নিজের কমিউনিটিকে যুক্ত করার বিষয়ে বলা হয়, জয় শেঠী তার নিজের কমিউনিটির মানুষের জীবন গড়তে গভীর অর্থপূর্ণ ও জ্ঞানসম্পন্ন কনটেন্ট তৈরি করেন। তিনি তা এ্যাড ব্রেকসে পোস্ট করেন। এটি বিপুলসংখ্যক ফেসবুক ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে যায়। সাধারণ প্রোপ্রামগুলোর বিজ্ঞাপন বিরতির পর ৭০ শতাংশ দর্শক ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখেছেন। এ্যাড ব্রেকসের পরও ভিডিওটি দেখার জন্য এই ভিডিওর গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি ৮০ শতাংশ দর্শককে অনুপ্রাণিত করেছে। বিপুলসংখ্যক মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার জন্য উৎকৃষ্ট উদাহরণ ছিল এই ভিডিওটি। বিশ্বব্যাপী ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে, যা আমাদের জন্য আশীর্বাদ। এটা মানুষের জীবনযাত্রার রূপান্তর ও বিশ্বব্যাপী ব্যতিক্রম কিছু করার মানসিকতার ফল। আমি ফেসবুকের মতো একটি প্ল্যাটফর্ম পেয়ে খুবই খুশি, যে প্ল্যাটফর্ম আমার কথা লাখ লাখ মানুষের সঙ্গে শেয়ার করতে সাহায্য করেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে fb.me/joinadbreaks ও ফেসবুকের Creators Launchpad program এই পেজ ভিজিট করতে হবে।
×