ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খালেদাকে প্যারোলে মুক্ত করতে বিএনপির দৌড়ঝাঁপ

প্রকাশিত: ১১:০৫, ২৭ মার্চ ২০১৯

খালেদাকে প্যারোলে মুক্ত করতে বিএনপির দৌড়ঝাঁপ

শরীফুল ইসলাম ॥ কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে আইনী প্রক্রিয়ায় মুক্ত করা সম্ভব নয় এমনকি আপাতত জামিনও হচ্ছে না এমনটি নিশ্চিত হয়ে ভিন্ন কৌশল নিয়েছে বিএনপি। এখন গুরুতর অসুস্থতার কথা বলে চিকিৎসার অজুহাতে তাকে প্যারোলে মুক্ত করার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন দলটির নেতারা। খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ উল্লেখ করে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরাই তার সুচিকিৎসা দাবি করে আসছে। তবে তাকে প্যারোলে মুক্ত করার বিষয়ে বিএনপি নেতারা দ্বিধাবিভক্ত। দলের উদারপন্থী অংশের নেতারা চাচ্ছেন যেকোনভাবে মুক্ত করে খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করার পাশাপাশি দলকে এগিয়ে নেয়ার স্বার্থে তার পরামর্শ নিয়ে কাজ করতে। তাই খালেদা জিয়ার আত্মীয়স্বজনদের ইচ্ছায় এ অংশের নেতারা তাকে প্যারোলে মুক্ত করতে নানামুখী দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন। অবশ্য বিএনপির কট্টরপন্থী নেতারা চান আইনী প্রক্রিয়ার পাশাপাশি আন্দোলন করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে। তাই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ এ অংশের নেতারা সবসময়ই বলে থাকেন আইনী প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে না, তাকে মুক্ত করতে হবে আন্দোলনের মাধ্যমে। কিন্তু এ অংশের নেতারা না পারছে আইনী লড়াই করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে, না পারছে তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করতে। সূত্র জানায়, বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান সরকারী দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি এগিয়ে নিতে বেশি দৌড়ঝাঁপ করছেন। এ জন্য তিনি দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহলের সহযোগিতা নিচ্ছেন। তবে বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীই খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তির পক্ষে নয় বলে জানা গেছে। আর এ জন্যই প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে এখন দল কিংবা আত্মীয় স্বজনের পক্ষ থেকে কোন আবেদন করা হয়নি। যদিও সরকারী দলের কোন কোন নেতা প্রকাশ্যেই বলছেন প্যারোলে মুক্তি পেতে হলে খালেদা জিয়ার পক্ষে আগে আবেদন করতে হবে, তারপর দেখা যাবে দেয়া যায় কি না। সূত্র জানায়, খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্ত করতে হলে বিএনপিকে কয়েকটি শর্ত মানতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে দল থেকে নির্বাচিত ৬ জনকে শপথ নিয়ে জাতীয় সংসদে যোগদান, রাজপথে কোন নেতিবাচক আন্দোলন কর্মসূচী পালন না করা এবং এ সরকারের অধীনে সকল নির্বাচনে অংশ নেয়া ইত্যাদি। দলের উদারপন্থী নেতারা বিশেষ করে যারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছে তাদের এসব শর্তের বিষয়ে তেমন আপত্তি না থাকলেও কট্টরপন্থী নেতারা এসব শর্ত মেনে খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্ত করতে নারাজ। আর এ কারণেই বিষয়টি এখনও ঝুলে আছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্ত করতে হলে বিএনপিকে সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছতে হবে। আর তা করতে হলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের অনুমতি লাগবে। এ ছাড়া এ অনুমতি পেলেও প্যারোলে মুক্তি পেলে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কি দেশে হবে না বিদেশে হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সমঝোতার সময় এ বিষয়টিও স্পষ্ট করতে হবে। সূত্র জানায়, বিএনপির যে অংশটি খালেদা জিয়াকে প্যারোলেমুক্ত করতে চায় তার চিকিৎসার বিষয়ে তাদের মধ্যে আবার দ্বিমত রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ চায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইউনাইটেড অথবা দেশীয় অন্য কোন বিশেষায়িত হাসপাতালে হোক। আবার কেউ কেউ চায় খালেদা জিয়াকে লন্ডনে তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের কাছে রেখে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হোক। এ নিয়ে ভেতরে ভেতরে বিএনপি নেতাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। আইনী প্রক্রিয়ার পাশাপাশি আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও জামিন যারা চায় তারা এখন হতাশ। কারণ, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দুর্নীতি প্রমাণ করে যেভাবে রায় দেয়া হয়েছে তাতে তার মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। আর এক মামলায় জামিন পাওয়া গেলেও আরেক মামলায় আটকে রাখা হবে। কারণ খালেদা জিয়ার নামে কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে। এ ছাড়া আন্দোলন করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার মতো পরিস্থিতিও তারা তৈরি করতে পারছে না। দলের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত কেউ রাজপথে আন্দোলনে নামতে সাহস পাচ্ছে না। যদিও মাঝেমধ্যে দলের নেতারা আন্দোলনের হুমকি দেয়। অবশ্য খোদ কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও তার মুক্তির পক্ষে জোরালো আন্দোলন চান না বলে জানা গেছে। গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর এক বছরেরও বেশি সময় অতিক্রম করলেও তার মুক্তির জন্য দলের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কঠোর কোন কর্মসূচী পালন না করায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। দলের লন্ডন প্রবাসী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বার বার কঠোর আন্দোলনের পক্ষে মতামত দিচ্ছেন। তারপরও দলটি আন্দোলন করতে পারছে না। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি এ পর্যন্ত বেশ কয়েক দফা আন্দোলন কর্মসূচীও পালন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল, মানববন্ধন, গণঅনশন এবং গণঅবস্থান কর্মসূচী। তবে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা এসব কর্মসূচীকে দায়সারা কর্মসূচী বলে অভিহিত করেছে। তবে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি এ পর্যন্ত যেসব কর্মসূচী পালন করেছে তা সফল করতে দলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। অধিকাংশ কর্মসূচীতেই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি ছিল কম। তবে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এসব কর্মসূচী পালনের চেষ্টা করেছে। উল্লেখ্য, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পর টানা ৯২দিন অবরোধ কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরে বিএনপি। সে আন্দোলনে দেড় শতাধিক মানুষ হত্যাসহ জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি কেউ ভালভাবে নিতে পারেনি। তাই এ আন্দোলনের পর বিএনপি আর রাজপথে জোরালো কোন আন্দোলনে নামতে সাহস পাচ্ছে না। এমন বাস্তবতায় রাজপথে আন্দোলন করে চাপ সৃষ্টি করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে না এমনটি ধরে নিয়েই বিএনপির একটি অংশ তাদের প্রিয় নেত্রীকে প্যারোলে মুক্ত করতে দৌড়ঝাঁপ করছেন বলে জানা যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের মামলা পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত আইনজীবী ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি হওয়ার কথা অবান্তর। এ ধরনের কথার কোন সত্যতা নেই।
×