ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পাল্টে যাবে দৃশ্যপট

পতেঙ্গায় গড়ে তোলা হচ্ছে বিশ্বমানের পর্যটন হাব

প্রকাশিত: ১১:১৫, ২৭ মার্চ ২০১৯

পতেঙ্গায় গড়ে তোলা হচ্ছে বিশ্বমানের পর্যটন হাব

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥বদলে যাচ্ছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার পুরো সী বিচের দৃশ্যপট। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণে গড়ে তোলা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন পর্যটন হাব। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) তত্ত্বাবধানে বেসরকারী বিনিয়োগে পাল্টে যাচ্ছে এই সী বিচের গোটা চিত্র। ইতোমধ্যে ১৭ কিলোমিটারব্যাপী আউটার সিটি রিং রোড নির্মাণ কাজের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে এই সী বিচ উন্নয়ন প্রকল্প। মূলত তিনটি উদ্দেশ্য নিয়ে আউটার সিটি রিং রোডের নির্মাণযজ্ঞ প্রথমত দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণে পর্যটন শিল্পের হাব গড়ে তোলা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে পতেঙ্গা উপকূলকে রক্ষায় উন্নতমানের বেড়িবাঁধ এবং এর সঙ্গে সড়ক নির্মাণ করে এ নগরে যানজট হ্রাস করা। ইতোমধ্যে চউক ২ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭ কিলোমিটারের আউটার রিং রোড সঙ্গে বেড়িবাঁধে পর্যটকদের জন্য চার স্তরের স্থান নির্ধারণ। এ আউটার সিটি রিং রোড সংযুক্ত হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকু- হয়ে সুদূর মীরসরাই পর্যন্ত। আর এদিকে এই রিং রোডের শেষ অংশ যুক্ত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের সঙ্গে। ইতোমধ্যে পতেঙ্গায় টানেল ও আউটার সিটি রিং রোড নির্মাণের কাজ বহুলাংশে এগিয়ে গেছে। নতুন প্রকল্প নেয়া হয়েছে পতেঙ্গা সী বিচ ট্যুরিজম প্রজেক্ট নামে। পতেঙ্গায় বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার এলাকায় নতুন বিশেষ পর্যটন স্পট গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। চউক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের গৃহীত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রামের জন্য আধুনিক, উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার অবকাঠামো সৃষ্টি করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল, সিটি আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এই চার প্রকল্পের সংযোগস্থল হতে যাচ্ছে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। যা আগামীতে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের স্পটে পরিণত হতে যাচ্ছে। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে প্রকল্পের সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে, পাহাড়, সমুদ্র , নদীর অপরূপ সমন্বয়ে চট্টগ্রাম পর্যটনের এক লীলাভূমি। ভৌগোলিকগত অবস্থান নিয়ে চট্টগ্রামের পর্যটনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির যে সম্ভাবনা রয়েছে এর বিকাশে কাজ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম আউটারি সিটি রিং রোডের আওতায় পতেঙ্গায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার এলাকাব্যাপী নতুন বিশেষ পর্যন্ত এলাকা সৃষ্টির উদ্যোগটি যুগান্তকারী হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। পুরো প্রকল্প এলাকাটি দু’জোনে বিভক্ত করা হয়েছে, যেখানে গড়ে উঠবে বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধার সমন্বয়ে একটি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র। ইতোমধ্যে জোন-১ ও জোন ২-এ সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এলাকার ৩৯ একর জমির ওপর বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার ডিজাইন, ড্রয়িং সম্পন্ন হয়েছে। সমুদ্র সন্নিহিত এলাকায় এর অবস্থানের কারণে ঢেউ প্রতিরোধক দেওয়াল ও ৪০ ফুট প্রশস্ত রেলিংসহ ওয়ার্কওয়ের মধ্যে আড়াই কিলোমিটারের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। অবশিষ্ট আড়াই কিলোমিটারের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। চউক সূত্রে জানা গেছে, জোন-১ এ সাড়ে সাত মিটার উচ্চতায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১শ’ ফুট প্রশস্ত প্লাজা নির্মাণসহ একযোগে ৫ হাজার পর্যটকের বসার সুবিধার্থে সিসি ব্লক নির্মাণ ও স্থাপনের কাজও শুরু হয়েছে। এছাড়া জোন-১ এ প্রায় এক হাজার প্রাইভেট কার ও ২শ’ বাস পার্কিংয়ের কাজ এগিয়ে চলছে। একই স্পটে সাগরে নামার জন্য ৩টি সিঁড়ি রয়েছে নির্মাণাধীন, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা, প্যাঞ্চিং, লাঞ্চিং, পুলিশ বক্স ও লাইটিংয়ের কাজও চলছে। প্রকল্পের আওতায় বয়স্ক ও শিশুসহ সাধারণ মানুষের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের মেকানিক্যাল ও নন মেকানিক্যাল, রাইড, লাইট হাউস, ফুড কোর্ট, ক্যাবল কার, টয় ট্রেন, জেটি, ফুটওভার ব্রিজের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া জোন-১ তে থাকবে থিম পার্ক, ওয়াটার রাইড ফেরি’স হুইল, জেটি ক্যাবল কার স্টেশন, ফুটওভার ব্রিজ, কনভেনশন হল, শপিং মল, পাঁচ তারকা মানের হোটেলও থাকছে। ১৭ কিলোমিটারব্যাপী চার লেনের এ সড়কে ১১টি টাইটাল রেগুলেটর এবং সাড়ে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ওয়েব প্রোটেকশন ওয়ালসহ স্লোব প্রোটেকশন এর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থাও থাকবে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম জনকণ্ঠকে জানান, চট্টগ্রামের উন্নয়ন যুগোপৎ ও নানামুখী উন্নয়ন প্রচেষ্টা এখন বাস্তবে।
×