ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নয়া আইনে হুমকির মুখে মার্কিন টেক কোম্পানি

প্রকাশিত: ১২:০৭, ২৭ মার্চ ২০১৯

নয়া আইনে হুমকির মুখে মার্কিন টেক কোম্পানি

ফেসবুক তার লাখ লাখ ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যাবলী বাইরের রাজনৈতিক ফার্ম কেম্ব্রিজ এনালাইটিকার কাছে ফাঁস করে দিয়ে বিশ্বব্যাপী যে কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়েছিল তার ধাক্কা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এর ধকল অন্যান্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ফার্মকেও পোহাতে হচ্ছে। দাবি উঠেছে যে বৃহৎ টেক ফার্মগুলোর রাশ টেনে ধরতে হবে। টেক ফার্মগুলো হয়ত নানা দিক দিয়ে বিশ্বকে গ্রাস করছে। তবে এটাও ঠিক যে বিশ্বও তাদের পাল্টা কামড় বসাতে লেগেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট দলীয় সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন সম্প্রতি ফেসবুক, গুগল ও এ্যামাজনসহ বড় টেক কোম্পানিগুলোকে ভেঙ্গে দেয়ার এবং আগে সেসব কোম্পানির সঙ্গে তারা একীভূত হয়েছিল সেগুলোকে বের করে আনার প্রস্তাব দিয়েছেন। যেমন ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসএ্যাপ কিনে নিয়েছিল। ওয়ারেন বলেন, বৃহৎ টেক ফার্মগুলো সমাজ, অর্থনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর অত্যধিক ক্ষমতা প্রয়োগ করছে। টেড ক্রাজ নামে এক রিপাবলিকান সিনেটর ওয়ারেনের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, বৃহৎ টেক ফার্মগুলোর হাতে এত ক্ষমতা যে তারা স্বাধীন মতো প্রকাশকে স্তব্ধ করে দিতে পারে। এটা গণতন্ত্রের প্রতি মারাত্মক হুমকি। ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযানে এই বৃহৎ টেক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে এন্টি ট্রাস্ট অর্থাৎ ট্রাস্ট ও বৃহৎ কোম্পানিগুলোর একাধিপত্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য বিশেষ প্রাধান্য লাভ করবে। এমি ক্লোবুচার নামে আরেক সিনেটর কিছু বিল উত্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন যা আমেরিকার ট্রাস্টবিরোধী আইনকানুনকে আরও কড়াকড়ি করবে। যেমন একটি বিলে বলা হয়েছে যে একীভূত হওয়ার জন্য সম্মত ফার্মগুলোকে প্রমাণ করতে হবে যে, তাদের একীভবনের কারণে প্রতিযোগিতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। অন্যান্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরাও টেক ফার্মগুলোর প্রতি আরও চরম অবস্থান নেয়ার দিকে যেতে পারে। প্রতিযোগিতা বিরোধী আচরণের জন্য টেক ফার্মগুলোকে শায়েস্তা করার ব্যাপারে প্রায় সবাই একমত। এ ব্যাপারে সরকারের আরও বেশি হস্তক্ষেপ থাকা উচিত বলে অনেকে মনে করেন। হাভার্ডের অর্থনীতিবিদ জ্যাসন ফারম্যানের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল এক নতুন রিপোর্টে বেশ কিছু পদক্ষেপের সুপারিশ করেছে। তার মধ্যে আছে টেক ফার্মগুলোর জন্য আচরণবিধি উদ্ভাবন, একীকরণের নিয়মবিধি কঠোর করা, গ্রাহকদের নিজস্ব তথ্যাবলী প্রতিদ্বন্দ্বী ফার্মগুলোর কাছে স্থানান্তর সহজতর করা ইত্যাদি ইত্যাদি। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রাহকদের স্বার্থের ওপর নজরদারি করা প্রতিষ্ঠান ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) ফেসবুকের ড্যাটা ফাঁসের কেলেঙ্কারির ওপর তদন্ত প্রায় শেষ করে এনেছে। কেউ কেউ মনে করছেন যে ফেসবুককে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হবে। সম্ভবত ৫শ’ কোটি ডলার হবে। এফটিসি বিশেষভাবে টেক ফার্মগুলোর ওপর দৃষ্টি নিবন্ধ করে একটি ট্রাস্কফোর্সও চালু করেছে। এ ছাড়া আলাদা আলাদাভাবে ফেডারেল কৌঁসুলিরা অন্যান্য ফার্মকে ফেসবুকের ড্যাটা দেয়ার বিষয়ে ফৌজদারি তদন্ত অনুষ্ঠানের কথা ভাবছে বলে জানা গেছে। টেক ফার্মগুলো যে আইনের আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণে পড়তে যাচ্ছে তার লক্ষণ ধরতে পারার আরেকটি ক্ষেত্র হলো ফেডারেল প্রাইভেসি আইন যা বর্তমানে ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রণীত হচ্ছে। নিজেদের ড্যাটা কিভাবে অনলাইনে সংগৃহীত ও ব্যবহৃত হয় সে ব্যাপারে গ্রাহকদের বৃহত্তর নিয়ন্ত্রণ প্রদানের ব্যবস্থা সংবলিত একটা জাতীয় আইন সর্বোত্তম কোন উপায়ে প্রণীত হতে পারে তা নিয়ে সিনেটররা যথেষ্ট মাথা ঘামাচ্ছেন। ক্যালিফোর্নিয়া সরকার তার নিজস্ব প্রাইভেসি আইন প্রণয়ন ও পাস করে ফেডারেল সরকারকে প্রকারান্তরে এমন এক আইন প্রণয়নে বাধ্য করেছে, নতুন ফেডারেল প্রাইভেসি বিল খুব শীঘ্রই যে উত্থাপিত ও গৃহীত হচ্ছে এমন নয়। তবে প্রাইভেসি আইনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এত বেশি ঐকমত্য আগে আর কখনও হয়নি। অন্য আরেক প্রধান উদ্বেগের বিষয় হলো বৃহৎ টেক ফার্মগুলো প্রতিযোগিতাকে দমিয়ে রাখে। তবে এন্টি ট্রাস্ট আইন প্রয়োগ করে এই সমস্যাটি মোকাবেলা করা যেতে পারে। প্রতিযোগিতা বিরোধী আচরণের জন্য মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর থেকে গত ২০ বছরে আমেরিকায় বৃহৎ কোন টেক কোম্পানির বিরুদ্ধে এন্টি ট্রাস্ট আইনে বড় ধরনের কোন মামলা হয়নি। তবে ২০২০ সাল পর্যন্ত টেক জায়েন্টদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোন পদক্ষেপ গ্রহণের সম্ভাবনা নেই। তেমন কিছু হলে ২০২০ সালের পরেই হবে। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×