ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আল আহাদ নিয়ন

ইতিহাসের পাঁচ সমৃদ্ধ অর্থনীতি

প্রকাশিত: ১২:০৭, ৩১ মার্চ ২০১৯

ইতিহাসের পাঁচ সমৃদ্ধ অর্থনীতি

দেশ বা সম্রাজ্যের অর্থনীতি সব সময় একই থাকে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কোন দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হয় বা আবার কেউ হারায় তার পুরনো স্থান। অর্থনৈতিক এই শক্তিই নির্ধারণ করে পুরো পৃথিবীর উপরে কর্তৃত্ব কে ফলাবে। যুগে যুগে বিভিন্ন রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উত্থান যেমন হয়েছে, তেমন পতনও হয়েছে। তবুও কালের বিবর্তনে শক্তিশালী এই অর্থনীতি ছাপ রেখে যায় ইতিহাসের পাতায়। এসব অর্থনৈতিক উত্থানের পেছনে কৃষি বিপ্লব যেমন কাজ করেছে তেমনি সময়ের বিবর্তনে কাজ করেছে শিল্প বিপ্লবও। ইতিহাসের তেমনি সর্বোচ্চ শক্তিশালী ৫টি অর্থনৈতিক সা¤্রাজ্য নিয়ে আজকের আলোচনা। রোমান সা¤্রাজ্য, ১০০ খ্রিস্টাব্দ কৃষি বিপ্লব ঘটেছিল প্রাচীন রোমে। এই কৃষি বিপ্লবই রোমকে একটি ছোট রাষ্ট্র থেকে প্রভাবশালী সা¤্রাজ্যে পরিণত করে। একইসঙ্গে ক্রমেই বিভিন্ন যুদ্ধের মাধ্যমে নিজেদের শক্তির জানান দিতে থাকে দেশটি। প্রাচীন কার্থেজ সম্প্রদায়ের সঙ্গে পুনিক যুদ্ধের পর ভূমধ্যসাগরের উপরে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে রোম এবং মিসরের মতো সমৃদ্ধ এলাকা থেকে তারা বাণিজ্য করতে আরম্ভ করে। এটা তাদের ক্রমশ অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী করে তোলে। এভাবেই তারা হয়ে ওঠে প্রাচীন অর্থনৈতিক পরাশক্তি। তখনকার সময়ে সারা বিশ্বের মোট উৎপাদনের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ভাগ তারা উৎপাদন করত। বিভিন্ন অর্থনীতিবিদের ভাষ্যমতে, প্রাচীন রোমের অর্থ ব্যবস্থাও ছিল অনেকবেশি উন্নত। তারা বিনিময় হিসেবে অন্যান্য প্রথার সঙ্গে ব্যাংক নোটও ব্যবহার করত যা ব্যবসায়ীদের লুট হয়ে যাওয়া থেকে অনেকাংশে বাঁচিয়ে দিত। চীনের সং সা¤্রাজ্য, ১২০০ খ্রিস্টাব্দ তৎকালীন মধ্যপ্রাচ্যের চাইতে বেশ দেরিতে চীনে কৃষি বিপ্লব ঘটলেও পরে তারা দ্রুত এগিয়ে যায়। কৃষির সঙ্গে তারা এই সময়ে একটা দারুণ সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। কিছু কিছু ইতিহাসবিদের মতে কৃষি বিপ্লবের পাশাপাশি ওই সময়টাতে চীনে প্রথম শিল্প বিপ্লব ঘটে। এই শিল্প বিপ্লব ইংল্যান্ডের আগেই চীনে হয়েছিল বলে তারা মনে করে থাকে। কৃষি আর শিল্প বিপ্লবের সংমিশ্রণের সময়ে সারা বিশ্বের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ভাগ পণ্য উৎপাদন করত চীন। খুব অল্প সময়েই প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয় চীন, যা তাকে জায়গা করে দেয় কালের সেরা ৫ অর্থনৈতিক সা¤্রাজ্যে। ভারতের মুঘল সা¤্রাজ্য, ১৭০০ খ্রিস্টাব্দ ১৬ শতকের মাঝামাঝি সময়ে গোড়াপত্তন হওয়া মুঘল সা¤্রাজ্য ছিল সবদিক দিয়ে পরিপূর্ণ। সাহিত্য সংস্কৃতি, চিত্রকলা, প্রতিরক্ষা, সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থা, সুবিশাল অর্থনীতি কি ছিল না তার? মুঘলদের অর্থনীতি ব্যবস্থা ছিল বর্তমানের ইংল্যান্ড কিংবা ফ্রান্সের মতো সুগঠিত । তখনকার সময়ে বিশ্বের মোট উৎপাদনের প্রায় ২৫ শতাংশ উৎপাদন হতো এই মুঘল সা¤্রাজ্যে। মুঘল স¤্রাজ্যের সবচেয়ে ধনী প্রদেশ ছিল আমাদের বাংলা। প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং নদীনালা ভারতীয় উপমহাদেশকে উর্বর করে তুলেছিল। বস্ত্র, মসলা উৎপাদন এবং সিল্ক রুট দিয়ে বাণিজ্যের ফলে এই অঞ্চল থেকে রফতানি হতো আরব, ইউরোপে। পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বণিকেরা এই বিশাল অর্থনীতির সুযোগ নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। তবে ক্রমেই শিল্প বিপ্লবে এগিয়ে থাকা ব্রিটিশদের কাছে ম্লান হতে থাকে যা একপর্যায়ে ১৯ শতকে ব্রিটিশ কলোনিতে পরিণত করে এই উপমহাদেশকে। ব্রিটিশ সা¤্রাজ্য, ১৮৭০ ভারতকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে ব্রিটিশরা নিজেদের শক্তিশালী করে তুলেছিল। অসংখ্য কলোনি, সারা বিশ্বজুড়ে একতরফা বাণিজ্য এবং কূটচালে ব্রিটিশরা অর্থনীতির চাবির দখল নেয়। শিল্প-প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি ঘটিয়ে এবং একতরফা বাজার তৈরি করে ব্রিটিশরা সারা বিশ্বে ছড়ি ঘোরাতে থাকে। নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের একক বাজার তৈরি করতে এমন কোন অন্যায় কাজ নেই যেটা সম্ভবত ব্রিটিশরা করেনি। দেশীয় তাঁতিদের আঙ্গুল কাঁটা বা আফিমের মতো মাদক নিয়ে যুদ্ধ বাঁধানো! ব্রিটিশদের কলোনিগুলো সম্মিলিতভাবে যখন বৈশ্বিক জিডিপির ৬% সরবারহ করত সেখানে ব্রিটিশরা করত ২১%। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৫০ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বের মোট উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক উৎপাদন শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক উত্থান যতটা না তাদের অর্থনৈতিক বিপ্লবের ফলে হয়েছে বরং তার চেয়ে বেশি হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে। বিশ্বযুদ্ধের ফলে ইউরোপের সব অর্থনৈতিক পরাশক্তিরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় । যুদ্ধের সময় অস্ত্র নির্মাণ মার্কিন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে। বিশাল জনসংখ্যা, মাটির নিচে প্রাকৃতিক সম্পদ আর আটলান্টিকের ওপারে যুদ্ধের আঁচ না লাগায় যুক্তরাষ্ট্র পরাশক্তিতে পরিণত হতে শুরু করে। ইউরোপের ভেঙ্গে পড়া অবকাঠামোতে উৎপাদন সম্ভব না বলে প্রচুর প্রযুক্তি এবং উৎপাদন ব্যবস্থা চলে যায় আটলান্টিকের ওপারে। সেই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে শতাধিক সামরিক ঘাঁটি এবং অপরিহার্য কিছু সম্পদের উপর খবরদারি আমেরিকাকে দিয়েছে বর্তমানের সেরা অর্থনীতির খেতাব।
×