ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চলে গেলেন নানামুখী চলচ্চিত্র প্রতিভা টেলি সামাদ

প্রকাশিত: ১৩:০৪, ৯ এপ্রিল ২০১৯

চলে গেলেন নানামুখী চলচ্চিত্র প্রতিভা টেলি সামাদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলা চলচ্চিত্রে কৌতুক অভিনেতা বলতে যে ক’জন অভিনেতার নাম চলে আসে তার মধ্যে অন্যতম টেলি সামাদ। এককালে খান আতা, রবিউল, সাইফুদ্দিন, আনিস, দিলদারসহ অনেকে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিলেন। তবে সর্বাগ্রে টেলি সামাদের নামটিই উঠে আসে। অসম্ভব মেধাবী এই অভিনেতা কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। অবশেষে গত ৬ এপ্রিল শনিবার চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলা চলচ্চিত্রে যখন ভাল শিল্পীর সঙ্কট চলছে সেই মুহূর্তে টেলি সামাদের মতো বিজ্ঞ এবং দক্ষ অভিনেতার চলে যাওয়া সত্যি পীড়াদায়ক। তার শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার নয়। বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পী জগতে অনেকটাই কিংবদন্তিতুল্য ছিলেন টেলি সামাদ। তিনি ছিলেন একাধারে অভিনেতা, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, চিত্র পরিচালক, চিত্রশিল্পী। অনেক গুণের সমন্বয় ছিল তার মধ্যে। তাকে হারিয়ে অনেকটাই অভিভাবকশূন্য হলো বাংলাদেশের সংস্কৃতি তথা চলচ্চিত্র অঙ্গন। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে। চলচ্চিত্রসহ সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীসহ আরও অনেকেই। তারা বলেছেন, টেলি সামাদ ছিলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কৌতুকাভিনেতা। কমেডি অভিনয়ে তিনি ছিলেন অনন্য প্রতিভার অধিকারী। বাংলাদেশের মানুষ তার অভিনয় ও কর্মের জন্য তাকে দীর্ঘকাল স্মরণে রাখবে। টেলি সামাদ ১৯৪৫ সালের ৮ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের (তৎকালীন বিক্রমপুর) সিরাজদিখান উপজেলার নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন। তার বড় ভাই চারুশিল্পী আব্দুল হাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের তুখোড় ছাত্র টেলি সামাদের অভিনয় করার প্রচ- নেশা ছিল। সেই নেশার টানেই ১৯৭৩ সালে ‘কার বউ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় পা রাখেন। এরপর চার দশকের অভিনয় জীবনে ৬ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার আসল নাম আবদুস সামাদ। বাংলাদেশ টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যান মোস্তফা মামুন তার ডাক নাম দিয়েছিলেন টেলি সামাদ। তারপর থেকে তিনি এ নামেই পরিচিত হন। চলচ্চিত্রে এসেও টেলি সামাদ শক্তিশালী কৌতুক অভিনেতা হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। শক্তিমান অভিনেতা হিসেবে তিনি সবার হৃদয়ে জায়গা করে নেন। সর্বশেষ অনিমেষ আইচের ‘জিরো ডিগ্রি’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। চলচ্চিত্রটি ২০১৫ সালে মুক্তি পায়। ১৯৭৩ সালে ‘কার বউ’ চলচ্চিত্রে কৌতুকাভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। ‘নয়নমনি’ ও ‘পায়ে চলার পথ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দর্শকপ্রিয়তা লাভ করেন। ‘মনা পাগলা’ চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনার পাশাপাশি ৫০টির মতো চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেন। অভিনয় জীবনে চার দশকে ৬০০’র মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। টেলি সামাদের জনপ্রিয় যত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘জিরো ডিগ্রি’ (২০১৫) ‘কুমারী মা’ (২০১৩) ‘সাথী হারা নাগিন’ (২০১১) ‘মায়ের চোখ’ (২০১০) ‘আমার স্বপ্ন আমার সংসার’ (২০১০) ‘রিকসাওয়ালার ছেলে’ (২০১০) ‘মন বসে না পড়ার টেবিলে’ (২০০৯) ‘কাজের মানুষ’ (২০০৯) ‘মায়ের হাতে বেহেস্তের চাবি’ (২০০৯) ‘কে আমি’ (২০০৯) ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ (১৯৯৩) ‘মিস ললিতা’ (১৯৮৫) ‘নতুন বউ’ (১৯৮৩) ‘মাটির ঘর’ (১৯৭৯) ‘নাগরদোলা’ (১৯৭৯) ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ (১৯৭৮) ‘অশিক্ষিত’ (১৯৭৮) ‘জয় পরাজয়’ (১৯৭৬) ‘গু-া’ (১৯৭৬) ‘সুজন সখী’ (১৯৭৫) ‘চাষীর মেয়ে’ (১৯৭৫) ‘রঙিন রূপবান’ প্রভৃতি। প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই নানা অসুখে ভুগছিলেন বরেণ্য এই অভিনেতা। সম্প্রতি শরীর বেশি খারাপ হলে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে টেলি সামাদের বাইপাস সার্জারি করা হয়েছিল। এ ছাড়া গত বছরের ২০ অক্টোবর তার বাঁ পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলিতেও জরুরী অস্ত্রোপচার করা হয়। সর্বশেষ গত বছরের ৪ ডিসেম্বর অসুস্থ হয়ে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন টেলি সামাদ। তখন ডাক্তার বলেছিলেন, টেলি সামাদের খাদ্যনালীতে সমস্যা রয়েছে। শুধু তাই নয়, তার বুকে ইনফেকশন ছিল, ডায়াবেটিস ছিল। রক্তের প্লাটিলেটও কমে যাচ্ছিল বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসক। শরীর বেশি খারাপ হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ এপ্রিল তার মৃত্যু হয়। জনপ্রিয় এই অভিনেতার মৃত্যুতে চলচ্চিত্রসহ সংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।
×