ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নারী উদ্যোক্তা রিমার স্বপ্নজয়ের গল্প

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ১৩ এপ্রিল ২০১৯

 নারী উদ্যোক্তা রিমার স্বপ্নজয়ের গল্প

কল্পনা আর ইচ্ছেশক্তির প্রতিফলন ঘটাতে পারলেই মানুষ স্বপ্নজয়ের হাতছানি দেয়। তেমনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হচ্ছেন রিমা আক্তার (২৫)। জামা-কাপড়ে হাতের কাজ, এপ্লিক ও ব্লক বাটিকের মাধ্যমে স্বাবলম্বী জীবনের স্বপ্ন ও বাস্তবের যোগসূত্র গড়ে দিচ্ছেন এই উদ্যমী তরুণী। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার জামষাইট গ্রামের রিমা আজ তরুণী-নারীদের কাছে আদর্শ। তার জামা-কাপড়ে এপ্লিক, ব্লক বাটিক ও হাতের কাজের ব্যবসায় শ্রম দিয়ে জেলার চার শতাধিক নারী পেয়েছেন সচ্ছল জীবনের খোঁজ। বাবা আবদুল হাশেম ও মা আনোয়ারা বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে ইয়াসমিন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। দ্বিতীয় ছেলে মাহবুব আলম রুবেল মালয়েশিয়া প্রবাসী। ২০০৯ সালে বড় মেয়ে ইয়াসমিনের চাকরি হয়। ২০১৫ সালে ছোট মেয়ে রিমা আক্তার এইচএসসি পাস করেন। স্বভাবতই বাবা-মা ও ভাইবোনের প্রত্যাশা ছিল রিমাকেও চাকুরে বানানোর। কিন্তু রিমার ভাবনায় ছিল নিজে কাজ করার পাশাপাশি অন্যদের স্বাবলম্বী করা। এ জন্য নিজেকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে একদিন মায়ের কাছে পাঁচ হাজার টাকা চেয়েও ব্যর্থ হয় রিমা। পরে খালা লাভলী আক্তারের মাধ্যমে শহরে এক রুমের বাসা ভাড়া নিয়ে তার দুই শিশুসন্তানকে পড়ানোর পাশাপাশি রিমা জেলা পরিষদের এপ্লিক প্রশিক্ষণে ভর্তি হয়। ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি জেলা পরিষদের দুই মাসব্যাপী এপ্লিক প্রশিক্ষণে প্রথম হয় রিমা। প্রশিক্ষণের দৈনিক ভাতা হিসেবে মোট ৭শ’ টাকা পায়। এই টাকা দিয়ে শুরু হয় রিমার স্বপ্নযাত্রা। কিনেন সুতা। তৈরি করেন এক জোড়া কুশি কাটা জামার হাতা। এতে নিজের শ্রম ছাড়া ৬৫ টাকা খরচ হয়। বিক্রি হয় ৬শ’ টাকায়। সুতা কেনার পরিচয় ধরে আট হাজার টাকার কাজের অর্ডার পায় রিমা। এতে প্রায় চার হাজার টাকা লাভ হয়। পরে অনলাইনে ফেসবুকভিত্তিক বিভিন্ন বেচাকেনা গ্রুপে জামার ডিজাইন দিলে, সেখান থেকে ভাল অর্ডার আসতে থাকে। রিমি ফ্যাশন নামের একটি ফেসবুক পেজও খোলেন। পরে সেখানে কাপড়ের কোয়ালিটি, কোথায় তৈরি হয়, নতুন নকশা, সুতার মান, বাজারে কিভাবে বিক্রি হয়, অনলাইনে কেমন চাহিদা এসবের ওপর নতুন ডিজাইনের পোশাক বিশেষ করে মেয়েদের পোশাকের পোস্ট দেন। এছাড়া পরিচিতজনের মাধ্যমেও তার কাজের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৫ সালের মার্চে জামায় কুশি কাটা জামার হাতার কাজ করে তার পথচলা শুরু। বর্তমানে রিমা একজন সফল উদ্যোক্তা। কাজ করছেন পোশাক বিপণনে। গড়েছেন নিজের প্রতিষ্ঠানও। শুধু পোশাকই নয়। বর্তমানে তিনি ক্রেতাদের পছন্দের অনেক পণ্যই সরবরাহ করছেন। কিন্তু এতদূর আসাটা মোটেও তার জন্য সহজ ছিল না। রিমা যখনই যেখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, পরিশ্রম আর নিষ্ঠা দিয়ে আলো ছড়িয়েছেন সেখানে। ব্লক বাটিক, সেলাই, এপ্লিক, স্ক্রিন প্রিন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর নেন বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ। বাস্তবিক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি নেন হাতে কলমে প্রশিক্ষণ। ২০১৬ সালের উন্নয়ন মেলা বদলে দেয় রিমার জীবন। যুব উন্নয়নের স্টল সাজান নিজের তৈরি করা হাতের কাজের জামা দিয়ে। এই মেলায় ব্যাপক পরিচিতি পাওয়ার পাশাপাশি এক লাখ টাকার অর্ডার পান রিমা। পরবর্তীতে ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা, বইমেলা, বৈশাখী মেলা, নবান্ন মেলা সবখানেই সফল অংশগ্রহণ ছিল রিমার। ২০১৮ সালে কিশোরগঞ্জে অনুষ্ঠিত প্রথম এসএমই মেলায় অংশ নিয়ে তৃতীয় এবং ২০১৯ সালের এসএমই মেলায় প্রথম হন। -মাজহার মান্না, কিশোরগঞ্জ থেকে
×