ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুদানে সাবেক সরকারের সদস্যদের গ্রেফতার করছে সামরিক কাউন্সিল

প্রকাশিত: ০০:৪৪, ১৫ এপ্রিল ২০১৯

সুদানে সাবেক সরকারের সদস্যদের গ্রেফতার করছে সামরিক কাউন্সিল

অনলাইন ডেস্ক ॥ সুদানের অন্তবর্তী সামরিক পরিষদ সাবেক সরকারের সদস্যদের গ্রেফতার করেছে এবং বিক্ষোভকারীদের বাধা না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি জানিয়েছে। সামরিক পরিষদের এক মুখপাত্র পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করার জন্য বিরোধীদলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এবং তাদের পছন্দ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। কয়েক মাস ধরে চলা ব্যাপক সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পর বৃহস্পতিবার দীর্ঘদিনের শাসক ওমর আল বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর গ্রেফতার করেছে সুদানের সামরিক বাহিনী। কিন্তু বেসামরিক শাসকের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা পর্যন্ত বিক্ষোভকারীরা রাস্তা ছেড়ে যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তারা রাজধানী খার্তুমে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছে। রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সামরিক পরিষদের মুখপাত্র মেজর জেনারেল শামস আদদিন শান্ত জানিয়েছেন, বিরোধীদলগুলো যে বেসামরিক সরকারের বিষয়ে সম্মত হবে তাদের কাছেই ‘সমর্পণের’ জন্য প্রস্তুত সামরিক পরিষদ। বিরোধীদল ও প্রতিবাদকারী দলগুলোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা কোনো প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবো না। প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তারাই ঠিক করবে।” সেনাবাহিনী অবস্থান ধর্মঘটরত বিক্ষোভকারীদের সরাতে বল প্রয়োগ করবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি, কিন্তু অননুমোদিতভাবে রাস্তা বন্ধ করে না রেখে ‘স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনতে’ বিক্ষোভকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ‘অস্ত্র তুলে নেওয়া সহ্য করা হবে না’ বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছে সামরিক পরিষদ। এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হল: সেনাবাহিনী ও পুলিশের নতুন প্রধান প্রভাবশালী জাতীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বিভাগের (এনআইএসএস) নতুন প্রধান সাবেক ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে তদন্ত ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কমিটি গঠন গণমাধ্যমের ওপর আরোপিত সকল নিষেধাজ্ঞা ও সেন্সরশিপ তুলে নেওয়া বিক্ষোভকারীদের সমর্থন করার জন্য গ্রেফতার পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মুক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডে নিযুক্ত সব সুদানি কূটনীতিকদের অপসারণ ও কূটনীতিক মিশনগুলোর পর্যালোচনা। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ডিসেম্বর থেকে সুদানজুড়ে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, পরে তা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলনে রূপ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহের শেষদিকে অভ্যুত্থানে শেষ হয় বশিরের ৩০ বছরের শাসনামল। অভ্যুত্থানের নেতা প্রতিরক্ষামন্ত্রী আওয়াদ ইবনে আউফ তিন মাসের জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত অন্তবর্তী দুই বছর সামরিক বাহিনী দেশ শাসন করবে বলে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তার ঘোষণার তোয়াক্কা না করে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান কর্মসূচী অব্যাহত রাখে এবং বেসামরিক সরকারের কাছে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানাতে থাকে। আওয়াদ ইবনে আউফ এর পরের দিনই পদত্যাগ করেন। উত্তরসুরী হিসেবে তিনি লেফটেনেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আবদেলরহমান বুরহানের নাম ঘোষণা করেন। শনিবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে বুরহান ‘বশির সরকারের শিকড় উপড়ে ফেলা’, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা, রাত্রিকালীন কারফিউয়ের অবসান, রাজনৈতিক বন্দিদের তাৎক্ষণিক মুক্তি, সব প্রাদেশিক সরকার ভেঙে দেওয়া, বিক্ষোভকারীদের যারা হত্যা করেছে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা ও দুর্নীতির নিয়ন্ত্রণে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা বেসামরিক সরকারের কাছে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে অটল থেকে অবস্থান কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছে।
×