ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শ্রুতির সুকান্ত গুপ্ত

প্রকাশিত: ১২:০৪, ১৬ এপ্রিল ২০১৯

শ্রুতির সুকান্ত গুপ্ত

ধ্রুব হাসান ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির সঙ্গে জড়িত, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যাত্রা শুরু সাহিত্যের ছোটকাগজ শ্রুতি সম্পাদনার মাধ্যমে। সব সময় চেষ্টা করেন নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিদের শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে। সিলেটের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সঙ্গে ছিলেন এবং আছেন। বাংলাদেশ বেতার সিলেটের অনুষ্ঠান ঘোষক ও আবৃত্তি শিল্পী হিসেবে নিয়মিত কাজ করছেন। শিশু-কিশোরদের আবৃত্তি, সঙ্গীত, চিত্রকলায় প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন; যা তাদের যোগ্য সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে। বন্ধুরা, এতক্ষণ যার কথা বলছি তিনি হলেন সিলেটের পরিচিত মুখ, সংস্কৃতিকর্মী, বাচিক শিল্পী সুকান্ত গুপ্ত। জন্ম ১৯৮৪ সালে। প্রকৃতির আবহে বেড়ে ওঠা সুকান্তের শৈশব-কৈশর কেটেছে সিলেট শহরে। আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে নিজেকে একটু একটু করে তৈরি করেছেন, সংগঠিত করেছেন। বাংলাদেশ বেতার সিলেট কেন্দ্রসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে আবৃত্তি, সংবাদপাঠ ও উপস্থাপনা নিয়ে কাজ করছেন। সুকান্ত বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সদস্য সংগঠন শ্রুতি সিলেটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। আবৃত্তিকে গণমানুষের মধ্যে পৌঁছে দিতে কাজ করছেন। তার বাবা সন্তোষ কুমার গুপ্ত পেশায় ছিলেন আইনজীবী, মা মৃদুলা গুপ্ত চাকরি করেছেন সোনালী ব্যাংকে। আবৃত্তিশিল্পে প্রভাব বিস্তারকারী তরুণ এই শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভক্ত। রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গে তিনি বলেন রবীন্দ্রনাথকে দেখলে বোঝা যায় মানুষের বোধ ও চেতনার স্তর কতদূর উন্নীত করা সম্ভব। আমরা রবীন্দ্রনাথ সমুদ্রে সর্বদাই হারিয়ে যাই। আমাদের শত ব্যর্থতা, গ্লানি আর আশ্রয়হীনের আশ্রয় রবীন্দ্রনাথ। সব ভালবাসার প্রকাশ তারই মধ্যে। যে মানুষ কবিতা ও গান লেখেন একাধারে নাট্যকার ও অভিনেতা, গানে নিজে সুরারোপ করে নিজেই গান, এমন কারো পক্ষে ইন্দ্রিয়নির্ভরতা আবশ্যিক শর্ত হয়ে দেখা দেয়ার কথা এবং তা হলে মানতেই হয় রবীন্দ্রনাথেরও ইন্দ্রিয়ের ধারণক্ষমতা গ্যোয়টে বা তলস্তয়ের মাপেরই ছিল। অথচ তার জীবনযাপনের যে শুদ্ধতার আভা ছড়িয়ে থাকে সেখানে মৃত্তিকাসম্পৃক্ত নেই, কেবলই দেখা যায় ফুলের ফুটে থাকা ও কুসুমসৌরভ। তীব্র আবেগের প্রকাশও তার ক্ষেত্রে কুণ্ঠিত, গোপনচারী হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথের যাত্রা ব্যক্তি থেকে শিল্পীর দিকে, এভাবেই চিরন্তন রবীন্দ্রনাথ। শিল্পাঙ্গনে আসার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন সিলেটের লোককবিদের কাছ থেকে। তাদের জীবনবোধ এবং সৃষ্টির প্রতি ছোটবেলা থেকেই এক ধরনের ভাল লাগা কাজ করত সুকান্তের। রাধার মণ, হাসন রাজা, শাহ আব্দুল করিমসহ সিলেটের অনেক লোককবি-মনীষীই আছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাদের সৃষ্টি-সৃজনের আবেদন থেকেই এ পথে আসার মূল অনুপ্রেরণাটা পান তিনি। সঙ্গে পারিবারিক উৎসাহও কিন্তু কম ছিল না। বিশেষ করে ছোটবেলা থেকেই আমার মা অনেক বেশি উৎসাহিত করতেন। তখন মা নিজেই রেডিওতে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাকে নিয়ে যেতেন। সুকান্ত আবৃত্তিশিল্পকে দেখেন শক্তিশালী একটি শিল্পমাধ্যম হিসেবে। তা ছাড়া তার মতে আমাদের মহান স্বাধীনতা আন্দোলনসহ যে কোন গণআন্দোলনে আবৃত্তির ভূমিকা অনন্য। একজন গায়ক যখন গান করছেন তখন বাদ্যযন্ত্র একটা আবহ তৈরি করছে। কিন্তু একজন আবৃত্তিশিল্পী বাড়তি কোন কিছুর সহায়তা ছাড়াই তার কণ্ঠের কারুকাজ দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করছেন। পাবলো নেরুদার কথাই যদি বলি, তিনি তার কবিতা দিয়ে দেশপ্রেমের কথা বলেছেন, বিপ্লবের কথা বলেছেন। কাজী নজরুল তার কবিতা দিয়ে সময়ের কথা বলেছেন সাম্যের জয়গান গেয়েছেন। ২০১৫ সালে সুকান্তের প্রথম একক আবৃত্তির এ্যালবাম ‘জল হাওয়ার লেখা’ প্রকাশিত হয়। মাঝে আরও কিছু এ্যালবামের পর বর্তমান সময়ে কাজ করছেন নজরুল ইসলামের কবিতা নিয়ে, এ্যালবামের নাম দিয়েছেন আপন পিয়াসী। সুকান্ত বলেন যারা আবৃত্তি চর্চার সঙ্গে জড়িত তারা প্রথাগত বিদ্যাচর্চা বা কর্মের পাশাপাশি যেটুকু সময় অবসর পান সেই সময়টা বাজে কাজে না দিয়ে এই শিল্পে দিচ্ছেন। প্রতিদিনই কোন একটি কবিতা মুখস্থ করার চেষ্টা করছেন। আমরা আমাদের আবৃত্তির শিক্ষার্থীদের বলি যে, এ শুক্রবার এই কবিতাটি মুখস্থ করে আসবে। এমনই চর্চার মধ্যে থাকলে তারা অনেক বেশি শিল্পমুখী বা সংস্কৃতিমনা হয়ে উঠবেন। এতে করে একটি মানবিক ও সৃজনশীল জাতি বিনির্মাণে তারা ভূমিকা রাখবে।
×