ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কেমন হলো ভারতের বিশ্বকাপ দল

প্রকাশিত: ১২:০৩, ১৭ এপ্রিল ২০১৯

কেমন হলো ভারতের বিশ্বকাপ দল

ভারতের বিশ্বকাপ দল নিয়ে মূল আলোচনা ছিল একাদশে চারে নামবেন কে? ওপেনিংয়ে রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ানের জায়গা পাকা। এরপরই বিরাট কোহলি। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর থেকে চার নম্বর পজিশন নিয়ে বিপদে দলটি। একের পর এক ব্যাটসম্যানকে সুযোগ দিয়েও লাভ হয়নি। সবচেয়ে বেশি সুযোগ পেয়েও বিশ্বকাপে যাওয়া হচ্ছে না আম্বাতি রাইডুর। বিশ্বকাপে যার ঝড়ের অপেক্ষায় ছিল অনেক ভারতীয়, সেই ঋষভ পন্থও নেই। বরং আরেক উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান দিনেশ কার্তিক পেয়েছেন সুযোগ। তব মূল একাদশে কার্তিক নয় লোকেশ রাহুলেরই থাকার কথা। অনেকে অবশ্য ওপেনার রাহুলকে তিনে খেলিয়ে কোহলির চারে নেমে আসার কথাও বলছেন। আসলেই কোন সিদ্ধান্ত নেবে ভারত, সেটা বিশ্বকাপ শুরু হলেই দেখা যাবে। অস্ট্রেলিয়ায় ঐতিহাসক সিরিজজয়ের আগেই প্রধাণ কোচ রবি শাস্ত্রী এবং তারকা ওপেনার রোহিত শর্মা জানিয়েছিলেন, বিশ্বকাপের জন্য ভারতীয় স্কোয়াড মোটামুটি প্রস্তুত। দু-একটি জায়গা বাদে দলে তেমন কোন সমস্যা নেই। ঘরের মাটিতে সেই অস্ট্রেলিয়ার কাছে টি২০ এবং ওয়ানডে হারের পর কিছুটা দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে চার নম্বর পজিশন নিয়ে। তরুণ ঋষভ পন্থ, প্রতিভাবান আমবাতি রাইডুরা ছিলেন অতশী কাঁচের নিচে। কিন্তু অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিয়েই দল ঘোষণা করে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। পন্থের স্থলে বেছে নেয়া হয় দীনেশ কার্তিককে। ওপেনিংয়ে রোহিতের পার্টনার যথারীতি শিখর ধাওয়ান; লোকেশ রাহুল, অধিনায়ক বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনি, কেদার যাদবদের নিয়ে শক্তিশালী টপঅর্ডার। ফিনিশিংয়ে থাকবেন দিনেশ কার্তিক, হারদিক পান্ডিয়া, রবিন্দ্র জাদেজা। ভারতের প্রধাণ নির্বাক এমএসকে প্রসাদ জানিয়েছেন, চাপের মুখে ভাল খেলতে পারে এমন অভিজ্ঞদের নিয়েই বিশ্বকাপ দল গড়া হয়েছে। মুম্বাইয়ে সোমবার অধিনায়ক বিরাট কোহলির সঙ্গে বৈঠক করার পর ভারতের বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেন প্রধাণ নির্বাচক এমএসকে প্রসাদ। যেখানে মূল নজর ছিল চার নম্বর পজিশনের দিকে। ব্যাটিং অর্ডারে এই একটা জায়গা নিয়ে ছিল তীব্র লড়াই। সম্প্রতি ঘুড়ে ফিরে অনেকে সুযোগ পেয়েছেন, কিন্তু কেউই থিতু হতে পারেন নি। প্রধান নির্বাচক জানিয়েছে, বোলিংও করতে পারায় আর ফিল্ডার হিসেবে রায়ডুর চেয়ে এগিয়ে থাকায় চার নম্বরে ব্যাটিংয়ের জন্য দলে জায়গা পেয়েছেন শঙ্কর। অভিজ্ঞ দিনেশ কার্তিককে রাখা হয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনির ব্যাকআপ হিসেবে। কিপিংয়ে দক্ষতায় এবং ব্যাট হাতে ফিনিশিংয়ে দারুণ কিছু ম্যাচ উইনিং পারফর্মেন্সে কারণে এগিয়ে থাকায় ভারতের টেস্ট কিপার পন্থকে পেছনে ফেলে জায়গা পেয়েছেন কার্তিক। দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ানের সঙ্গে বিকল্প ওপেনার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন লোকেশ রাহুল। প্রয়োজনে তাঁকে টপঅর্ডারেও দেখা যেতে পারে। হারদিক পান্ডিয়া ও শঙ্করের সঙ্গে অলরাউন্ডার হিসেবে আছেন রবীন্দ্র জাদেজা। অনুমিতভাবে জায়গা পেয়েছেন দুই রিস্ট স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল আর কুলদীপ যাদব। পেসার জাসপ্রিত বুমরাহর সাথে নতুন বল পাওয়ার লড়াইয়ে থাকবেন ভুবনেশ্বর কুমার ও মোহাম্মদ শামি। শামি খেললে লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিংয়ে গভীরতা বাড়াতে সেরা একাদশে বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার জাদেজার খেলা নিশ্চিত বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন ভারতের প্রধান নির্বাচক প্রসাদ। অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিলেও ফর্মহীনতার কারণে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না অজিঙ্কা রাহানে, হনুমা বিহারির মতো তারকা। সেই অর্থে নতুনদের মধ্যে বিজয় শঙ্করের জায়াগা করে নেয়াটাই হয়ত বড় চমক। ইংল্যান্ডের পেস সহায়ক কন্ডিশনে মাত্র তিন জন বিশেষজ্ঞ পেসার (বুমরাহ,শামি, ভুবনেশর) নিয়ে খেলতে যাওয়া কতটা ঠিক, সেই প্রশ্ন থাকছেই। জায়গা হয়নি উমেশ যাদব, শার্দূল ঠাকুর, মোহাম্মদ সিরাজ, খলিল আহমেদ, দীপক চাহার ও সিদ্ধার্থ কাউলদের। সাম্প্রতিক সময়ে ঘুড়িয়ে-ফিরিয়ে এদের সবাইকেই খেলানো হয়েছিল। পেস আক্রমনে কোহলিকে তাই বুমরাহ-ভূবিদের পাশাপাশি অলরাউন্ডার হারদিক পান্ডিয়া এবং বিজয় শঙ্করদের ওপর অনেকটা নির্ভর করতে হবে। তৃতীয় অলরাউন্ডার কে? পান্ডিয়ার জায়গা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না। স্পিন করা কেদার যাদবেরও একাদশে জায়গা পাকা। তৃতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে কে যাবেন, সেটা নিয়েই আলোচনা ছিল। বাঁহাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা নাকি পেস বোলিং অলরাউন্ডার বিজয় শঙ্কর। ভারতীয় নির্বাচকেরা এখানেই চমক দেখিয়েছেন। বিশ্বকাপ দলে সুযোগ মিলেছে দুজনেরই। চারজন অলরাউন্ডার নিয়ে বিশ্বকাপে যাবে ভারত। পেসার কি কম হয়ে গেল? ভারতের বিশ্বকাপ দলে পেসার হিসেবে তিনজন সুযোগ পেয়েছেন। জসপ্রীত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামি ও ভুবনেশ্বর কুমার—তিনজনের জায়গা নিশ্চিতই ছিল। চতুর্থ পেসার হিসেবে উমেশ যাদব বা অন্য কাউকে নেওয়া হবে কি না, এ নিয়ে কৌতূহল ছিল। কারণ দুই মাস লম্বা প্রতিযোগিতায় তিনজন পেসারকেই টানা খেলানো হলে ক্লান্তির প্রসঙ্গটা আসেই। কিন্তু হারদিক পান্ডিয়া ও বিজয় শঙ্করের উপস্থিতিকেই যথেষ্ট মনে হয়েছে ভারতীয় দলের। ইংলিশ কন্ডিশনে এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। ঐতিহ্যগতভাবে এ সিদ্ধান্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আবার আইসিসি ইদানীং প্রতিযোগিতা মানেই ব্যাটিং সহায়ক উইকেট দেয়ার নীতিতে হাঁটছে, ফলে ভারতের পক্ষেও যেতে পারে এ সিদ্ধান্ত। কুলদীপ যাদব ও যুবেন্দ্র চাহাল দুজন ভিন্ন ধরনের রিস্ট স্পিনার নিয়ে বিশ্বকাপে যাওয়ার অনবদ্য এক সুযোগ পাচ্ছে ভারত। সে সঙ্গে পরিস্থিতি ও উইকেট বুঝে কেদার যাদব ও রবীন্দ্র জাদেজার অর্থোডক্স স্পিন তো থাকছেই। অন্তত স্পিনিং বৈচিত্র্যের দিক থেকে ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তান ছাড়া আর কোনো দল টেক্কা দিতে পারছে না। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হতে পারে পন্থকে টপকে কার্তিক সুযোগ পেলেন কিভাবে? ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন, চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রেখে ম্যাচ বের করার ক্ষমতার জন্যই কার্তিক হারিয়ে দিয়েছেন ঋষভ পন্থকে। কার্তিকের হয়ে কথা বলেছে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল। কলম্বোতে অনুষ্ঠিত প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচটি অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে জয় ছিনিয়ে নেন দিনেশ কার্তিক। ৮ বলে খেলেছিলেন অপরাজিত ২৯* রানের টর্নেডো ইনিংস। আরেকটি ফাইনাল হারের দুঃখে কাঁদতে হয়েছিল টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দন্ত খেলা বাংলাদেশকে। কার্তিকের ওই ইনিংস প্রমাণ করে দিয়েছিল, পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক, উইকেটে থাকলে তিনি ম্যাচ শেষ করে ফেরার ক্ষমতা রাখেন। আইপিএলে নাইট রাইডার্সের হয়েও বহুবার কার্তিক মনে রাখার মতো ইনিংস খেলেছেন। কিন্তু, নিদাহাস ট্রফির ফাইনালের ওই ৮ বলে অপরাজিত ২৯* রানই কার্তিককে পৌঁছে দেয় অন্য উচ্চতায়।
×