ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন চমক এনিসিমোভা

প্রকাশিত: ১২:০৫, ১৭ এপ্রিল ২০১৯

নতুন চমক এনিসিমোভা

শিরোপার হাসি এমান্ডা এনিসিমোভার মুখে। হ্যাঁ, ক্যারিয়ারের প্রথম ডব্লিউটিএ শিরোপা জয়ের স্বাদ পেলেন ১৭ বছরের এই তরুণী। ক্ল্যারো ওপেনের ফাইনালে কঠিন লড়াইয়ের পর এস্ট্রা শর্মাকে পরাজিত করেন তিনি। রবিবার টুর্নামেন্টের ফাইনালে আমেরিকান টেনিসের এই প্রতিভাবান খেলোয়াড় ৪-৬, ৬-৪ এবং ৬-১ গেমে পরাজয়ের স্বাদ উপহার দেন অস্ট্রেলিয়ার এস্ট্রা শর্মাকে। প্রতিপক্ষকে হারাতে এদিন তিনি সময় নেন ১ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট। ক্যারিয়ারের প্রথম শিরোপা। এনিসিমোভা তাই আনন্দে আত্মহারা। প্রতিপক্ষকে হারানোর পর থেকেই উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসছেন ১৭ বছরের এই তরুণী। ম্যাচের শেষে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে এটা অনেক কিছু। এই সপ্তাহে আমার সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ ছিল। টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা ছিল অনেক বড় লক্ষ্য। শেষ পর্যন্ত সফল হতে পেরেছি। তাতে আমি সত্যিই খুব খুশি। নিজেকে নিয়ে খুব গবির্ত। আমার প্রথম ডব্লিউটিএ শিরোপা এটা। যে কারণে স্বাভাবিকভাবেই আমি আনন্দিত।’ সামনেই ক্লে কোর্ট মৌসুম। তার আগে এই শিরোপা জয় তার আত্মবিশ্বাস বহুগুণে বেড়ে গেছে বলে মনে করেন এমান্ডা এনিসিমোভা। এ বিষয়ে তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের অভিমত, ‘এই টুর্নামেন্ট থেকে নিঃসন্দেহে আমি অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়েছি। আশা করি এটা আমার সামনের ক্লে কোর্টের মৌসুমে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করবে।’ মহিলা এককে ২০১৯ সালে এখন পর্যন্ত ১৭টি টুর্নামেন্ট হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো তার সবকটিতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন ১৭ জন খেলোয়াড়। তবে বেশিরভাগ টুর্নামেন্টেই এবার নবীন খেলোয়াড় পেয়েছে বিশ্ব টেনিস। তাদের মধ্যে রয়েছেন জাপানের নাওমি ওসাকা, বেলারুশের এরিনা সাবালেঙ্কা, সুইজারল্যান্ডের বেলিন্ডা বেনচিচ, চেক প্রজাতন্ত্রের পেত্রা কেভিতোভা, এলিস মার্টেন্স, পোলোনা হার্কোগের মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড়রা। এই তালিকার সর্বশেষ চমক এনিসিমোভা। এই টুর্নামেন্টের শিরোপা উঁচিয়ে ধরার সৌজন্যে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়েও ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে তার। এক লাফে ২২ ধাপ এগিয়ে এসেছেন এই আমেরিকান। এর ফলে বর্তমানে তার অবস্থান ৫৪ নম্বরে! স্যামসাং ওপেনের শিরোপা জিতে র‌্যাঙ্কিংয়ে অগ্রগতি হয়েছে পোলোনা হার্কোগেরও। তার অগ্রগতি এক লাফে ২৫! যার ফলে ৮৯ থেকে ৬৪ নম্বরে উঠে এসেছেন তিনি। পারফর্মেন্সের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে খুব দ্রুতই শীর্ষ পঞ্চাশে চলে আসবেন বিশ্ব টেনিসের এই দুই প্রতিভাবান খেলোয়াড়। ক্ল্যারো ওপেনের মাধ্যমে ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইনালের টিকেট কেটেছিলেন এস্ট্রা শর্মা। পুরো টুর্নামেন্টেই অসাধারণ পারফর্মেন্স উপহার দেন তিনি। সেমিফাইনালে বোগোটার সাবেক চ্যাম্পিয়ন লারা অরুয়াবেরেনাকেও পরাজয়ের স্বাদ উপহার দেন এই অস্ট্রেলিয়ান। তার আগে ইতালির তারকা খেলোয়াড় সারা ইরানিকেও পরাজিত করেন শর্মা। কিন্তু ফাইনালেই জয়রথ থেমে যায় তার। তার জয়রথ থামিয়ে দেন এমান্ডা এনিসিমোভা। তবে প্রতিপক্ষ শর্মাকে নিয়ে ম্যাচের আগে থেকেই সতর্ক ছিলেন আমেরিকান খেলোয়াড়। এ বিষয়ে এনিসিমোভা বলেন, ‘খেলোয়াড় হিসেবে সে খুব ভাল তা আগে থেকেই জানা ছিল আমার। যে কারণে ম্যাচটা কঠিন হবে বলেই ধরে নিয়েছিলাম। সে কেমন খেলে তার বিষয়ে কিছুটা ধারণা ছিল আমার। তবে খুব বেশি না। কিন্তু ফাইনাল ম্যাচে আমি শুধু নিজের দিকেই দৃষ্টি রেখেছি যেমনটা আমার প্রত্যেকটা ম্যাচেই করে থাকি।’ পায়ের ইনজুরির কারণে দীর্ঘদিন কোর্টের বাইরে ছিলেন এনিসিমোভা। প্রায় দুই বছর পর এটাই তার প্রথম ক্লে কোর্টের টুর্নামেন্ট। তবে এ বছরের শুরু থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এনিসিমোভা। এবারের মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের দ্বিতীয় সপ্তাহে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এরিনা সাবালেঙ্কাকেও পরাজিত করেছিলেন তিনি। এবার জিতলেন ক্ল্যারো ওপেনের শিরোপাও। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে এসেই প্রথম ট্রফির ছোঁয়া পেলেন বয়সে তরুণ এই খেলোয়াড়। তবে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফাইনালে কিছুটা চাপে ছিলেন এনিসিমোভা। এ বিষয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা যে আমার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফাইনাল সেটা মাথার মধ্যে ঘুরতেছিল। কিছুটা চাপও তৈরি করছিল তা। বিশেষ করে দ্বিতীয় সেটে। তবে সত্যি কথা বলতে এই ম্যাচটা জয়ের লক্ষ্য নিয়েই কোর্টে নেমেছিলাম আমি। যে কারণে নিজেকে শান্ত রেখে কোর্টের লড়াইয়ে নিজের সেরাটা দিয়েই চেষ্টা করি।’ এই টুর্নামেন্টে তিন সেটের ম্যাচ খেলাটা এনিসিমোভাকে দিয়েছে নতুন অভিজ্ঞতা। এক সপ্তাহে একের অধিক তিন সেটের লড়াই এর আগে কখনোই খেলেননি তিনি। তবে জুনিয়র ক্যারিয়ারে ক্লে কোর্টে খেলার অনেক অভিজ্ঞতা ছিল তার। যা তাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করতে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে এত বেশি তিন সেটের ম্যাচ এর আগে কখনও খেলেছি কীনা আমার জানা নেই। তবে ক্লে কোর্টে আমার জুনিয়র ক্যারিয়ারে অনেক বেশি খেলেছি। পাশাপাশি দক্ষিণ আমেরিকার মাটিতেও খেলেছি অনেক। ইনজুরির কারণে গত মৌসুমে ক্লে কোর্টে খেলতে পারিনি। তারপরও আমি অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। ক্লে কোর্টে আবারও খেলতে পেরে আমি অনেক বেশি রোমাঞ্চিত। কেননা, এটা আমার প্রিয় জায়গা। আর ইউরোপে যাওয়ার আগে এটা নিঃসন্দেহে আমাকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করবে।’ তবে ফাইনালে এনিসিমোভার কাছে হেরে গেলেও র‌্যাঙ্কিংয়ে অগ্রগতি হয়েছে এস্ট্রা শর্মার। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে এক লাফে ৩৬ ধাপ অগ্রগতি হয়েছে তার। ক্ল্যারো ওপেনের কোর্টে নামার আগে র‌্যাঙ্কিংয়ের ১৩৮ নম্বরে অবস্থান করছিলেন তিনি। বর্তমানে শর্মার অবস্থান ১০২! সর্বশেষ প্রকাশিত র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৪১ ধাপ এগিয়ে এসেছেন বিয়াত্রিজ হাদ্দাদ মাইয়া। ১৬৫ থেকে ১২৪ নম্বরে উঠে এসেছেন ব্রাজিলের এই প্রতিভাবান খেলোয়াড়।
×