ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সাগর কোড়াইয়া

সামাজিক আন্দোলন জরুরী

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

সামাজিক আন্দোলন জরুরী

নারী মায়ের জাতি। নারী জাতির কল্যাণেই মানুষের অস্তিত্ব পৃথিবীজুড়ে। পৃথিবীর ইতিহাসের দিকে তাকালে নারীর অবদান প্রতিটি দেশেই অনস্বীকার্য। উন্নয়নের তরী পাড়ে ভেড়াতে নারীর অগ্রগতি বিস্ময়কর। বাংলাদেশের মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান যেন এর জীবন্ত প্রমাণ। তাই জাতীয় কবি কাজী নজরুল বহু আগেই নারীর অবদানকে মর্যাদার শিখরে উত্তোলন করে কবিতার পঙ্ক্তিতে তা ব্যক্ত করেছেন, ‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’ একটি দেশ কতটা উন্নত তা সে দেশের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিটি সূচকে নারীর অবস্থানের ওপর নির্ভর করেই গণ্য হয়ে থাকে। বাংলাদেশ নারী উন্নয়নে বেশ সক্রিয়। নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সংসদের স্পীকার, এমপি, মন্ত্রী ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলে নারীর অবদান পুরুষের পাশাপাশি অবস্থান করছে। এছাড়াও শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, চিকিৎসা, মানবাধিকার, ব্যবসা ও গবেষণায় বাংলাদেশের নারী সমাজ আজ বিশ্বের মাঝে মডেলস্বরূপ। নারীর ইতিবাচক ও আন্তরিক ভূমিকার কথা সর্বজনবিদিত। রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে নারীর অবস্থান সুসংহত হলেও কোন এক অদৃশ্য দানবীয় হাতের ছোঁবলে কেন জানি সমাজের সর্বস্তরে এর পুরো প্রভাবটা পড়ছে না। যে মায়ের গর্ভে আমাদের অস্তিত্বের প্রথম স্পন্দন এবং আঁচলের স্পর্শে বেড়ে ওঠা সে মায়ের জাতিকে যদি যথাযোগ্য সম্মান দেয়া না হয় তাহলে আমাদের জন্য তা কলঙ্কজনক। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়- আজকের এই আধুনিক যুগে এসেও অনেকের মাঝে নারী যেন শুধুমাত্র ভোগ্যপণ্য হিসাবেই গণ্য হয়। মান্ধাতা আমলে নারীকে যেমন বন্দী জীবনযাপন করতে হতো তেমনি অনেকে আবারও নারীকে বন্দীর বেড়াজালে আটকাবার মনোবাসনায় লিপ্ত হয়ে ওঠে। যা আমাদের সমাজব্যবস্থার জন্য লজ্জা ও দুর্ভাবনার। এই সমাজের কিছু মানুষরূপী নরপিশাচের কারণে নারীরা এখনও যথাযথ সম্মান পাচ্ছে না। তারা মনে করে নারীদের কোন অধিকার, মতামত, স্বাধীন চিন্তা-চেতনা, ইচ্ছা ও আগ্রহ থাকবে না। সবকিছুই পুরুষের অঙ্গুলিহেলনে পরিচালিত হবে। নারীদের আলাদা সত্তা বলে কিছু থাকবে না। পুরুষের পাশাপাশি পা ফেলার অধিকার নারীর নেই। যৌন নির্যাতনের শিকার হলে নারী ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করলে বিনিময়ে জীবননাশের কবলে পড়তে হবে। সম্প্রতি নোয়াখালীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতকে যৌন হেনস্তা, আগুনে পুড়িয়ে হত্যা নারীর প্রতি পুরুষের অবজ্ঞা-অবহেলা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যকেই প্রকাশ করেছে। নুসরাত কিন্তু সত্যের সঙ্গে কোন আপোস করেনি। সে সত্যটাকেই প্রকাশ করতে চেয়েছে। আইনের আশ্রয় নিয়ে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেছিল নুসরাত। প্রসঙ্গক্রমে সিলেটের খাদিজা নার্গিসের কথা বলা যায়। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে পরীক্ষা লিখে বের হলে কথিত ছাত্রলীগ নেতা খাদিজা নার্গিসকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। ঘটনাটি নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী এ ঘটনার ব্যয়ভারসহ অন্যান্য বিষয়ে তদারকি করেন। নিত্যদিনের এই চিত্রগুলো আমাদের এটাই মনে করিয়ে দেয় যে, নারীর প্রতি পারিবারিক ও সামাজিক সহিংসতা খুব একটা কমেনি। বরং দিন অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাজের বিভিন্ন স্তরের নারীরা নানা সঙ্কটের সম্মুখীন হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে। বিগত কয়েক দশকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও শিশু সুরক্ষায় বাংলাদেশের আইনী কাঠামো বেশ শক্তিশালী ও কার্যকরী হয়েছে। শিশু ও নারী নির্যাতন বন্ধে সরকারী-বেসকারীভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। তবে এ ধরনের অন্যায়ের বিচার অবশ্যই আইনের আশ্রয়ে কঠোরভাবে সমাধান করতে হবে। অন্যায়কারী যাতে কোনভাবে কোন শক্তিবলে ছাড়া পেয়ে না যায় সে বিষয়েও সর্বদা সজাগ থাকা বাঞ্ছনীয়। আবার নারীর প্রতি নিপীড়ন বন্ধে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। বনানী ঢাকা থেকে
×