ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নারীর প্রতি সহিংসতা

প্রকাশিত: ১১:৩৮, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

নারীর প্রতি সহিংসতা

কোথায় নেই নারী সহিংসতা? পথে-ঘাটে, বাস-ট্রেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, নিজ পরিবারসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও সমানতালে নারী সহিংসতা ঘটেই চলছে। রক্ষক ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। বলাৎকার এবং নারী-শিশু ধর্ষণে যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে এক শ্রেণীর নরপিশাচ। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও এমন ঘটনা ঘটে চলছে যা ইলেক্ট্রিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে। দেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নানা আইন ও নীতিমালা আছে। প্রশাসনের এক শ্রেণীর লোভী কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে সেসব আইন ও নীতিমালা কোন কাজে আসছে না। ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের কাছে গিয়েও কোন রকম সহযোগিতা পাচ্ছে না। মৃত্যুর আগে প্রতিবাদী নুসরাতও বাঁচার আকুতি নিয়ে থানায় গিয়েছিল। কিন্তু ওসির কাছে সহযোগিতার পরিবর্তে জুটেছে পরিহাস এবং ভাইরাল হয়েছে সাক্ষাতকারের ভিডিও। তারপর তো ইতিহাস। ধর্ষকের সহযোগী কর্তৃক দেয়া আগুনে ঝলসে মৃত্যুর সঙ্গে কয়েকদিন পাঞ্জা লড়ে না ফেরার দেশে গমন। নারীর প্রতি সহিংসতা আমাদের সামগ্রিক উন্নয়নের প্রতি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। কর্মক্ষেত্রে নারীবান্ধব পরিবেশের অভাব রয়েছে বলে বৈরী পরিস্থিতি ও পরিবারের আপত্তির কারণে বাধ্য হয়ে ক্যারিয়ার বিসর্জন দিচ্ছে। কারিগরি শিক্ষার অভাবের কারণে শ্রমশক্তি হিসেবে বিদেশে গিয়ে সেখানেও নির্যাতন সয়ে স্বপ্নভঙ্গ হয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে। ভাবতে অবাক লাগে, এ ডিজিটাল যুগে এসেও অধিকাংশ মা-বাবারা ভাল একটা বিয়ে দেয়া ছাড়া মেয়ে সন্তানকে নিয়ে আর কিছু ভাবতে পারে না। নারী নির্যাতনের ব্যাপারে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট মারিয়া ফার্নাদো এসপিনোসা যে পরিসংখ্যান তুলে ধরেন, তা রীতিমতো আতঙ্কজনক। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের ৩৫ ভাগ নারী কোন না কোনভাবে শারীরিক ও যৌন হয়রানির শিকার হন এবং ৩৮ ভাগ নারীর মৃত্যু হয় স্বামী বা সঙ্গীর নির্যাতনে।’ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এ যৌন পীড়নের যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তা হলো-‘যদি কোন ব্যক্তি অবৈধভাবে তাহার যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তাহার শরীরের যে অঙ্গ বা বস্তু দ্বারা কোন নারী বা শিশুর যৌন অঙ্গ বা অন্য কোন অঙ্গ স্পর্শ করেন বা নারীর শ্লীলতাহানি করেন, তাহা হইলে তাহার এই কাজ হইবে যৌন পীড়ন।’ আইনে এর শাস্তি হিসেবে বলা হয়েছে, ‘ওই ব্যক্তি অনধিক ১০ বছর বা অন্যুন তিন বছর সশ্রম কারাদ-ে দ-নীয় হবেন এবং এর বাইরে অতিরিক্ত অর্থদ-েও দ-িত হবেন।’ এ আইনে সংবাদ মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুর পরিচয় প্রকাশের ব্যাপারে বিধিনিষেধ দেয়া আছে। কিন্তু সংবাদকর্মীরা ইলেক্ট্রিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমানে সেই অপরাধ করে চলছে। এজন্য আজ পর্যন্ত কোন সংবাদকর্মীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানা নেই। প্রশ্ন জাগে,আমরা কী আধুনিক নাকি আধুনিকতার নামে অন্ধকার পথে ধাবিত হচ্ছি? নোংরামি, অশ্লীলতা এখন আমাদের কাছে আধুনিকতার মূলমন্ত্র। মানসিক উন্নয়নের জন্য আমরা ছোটবেলায় খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক জগতের সঙ্গে জড়িত থাকতাম। এখন সে স্থান ফেসবুকের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। তামাকের চেয়েও মারাত্মক নেশা এ ফেসবুক। মার্ক বুকার পৃথিবীবাসীকে এমন একটা নেশা ধরিয়ে দিয়েছে, যাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিমিষে চলে যায়, টেরও পাওয়া যায় না। নারীর প্রতি সংবেদনশীলতা ও সমাজের সর্বস্তরে শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করে তৃণমূলসহ সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রত্যেক জায়গায় এর বিস্তার ঘটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে ধর্ষক দানবসহ এ সহিংসতার বিরুদ্ধে। দোহাজারী, চট্টগ্রাম থেকে
×